ইতিহাসের পাতায় স্বাধীন বাংলার শেষ নবাব একজন। তবে ঢালিউডের পর্দায় বাংলার নবাব হিসেবে পরিচিতি রয়েছে দু’জন অভিনেতার। তাদের একজন কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র। আজ ১৮ আগস্ট তার জন্মদিন। ১৯৪৩ সালের এই দিনে কুমিল্লার চান্দিনায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এই অভিনেতা বেড়ে উঠেছেন পুরান ঢাকায়। স্কুল জীবন থেকেই ছিলেন অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত।
১৯৬৯ সালে ‘জলছবি’ নামক একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ঢালিউডে নাম লেখান প্রবীর মিত্র। নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে ক্যারিয়ারে শুরু করলেও পরে চরিত্রাভিনেতা হিসেবেই পর্দায় মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন তিনি। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময়ে অভিনয় করেছেন অজস্র চলচ্চিত্রে।
বিজ্ঞাপন
‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয় পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলংকার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গাঁয়ের ছেলে’ তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
আজকাল পর্দায় দেখা যায় না এই অভিনেতাকে। সংবাদমাধ্যমেও তাকে নিয়ে হয় না তেমন কোনো খবর।
জানা গেছে, প্রবীর মিত্রের এখন দিন কাটে চার দেয়ালের মাঝে। বয়সের ভারে আজ তিনি নুজ্ব। সেই সুযোগে শরীরে বাসা বেঁধেছে নানাবিধ অসুখ। এরমধ্যে বেশি বেপরোয়া হাঁটুর হাড়ক্ষয়জনিত রোগ। দিল্লীতে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিয়েও হয়নি পুরোপুরি উপশম। ফলে সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়েছে হুইল চেয়ার। রোগকে বশে রাখতে ফিজিওথেরাপি চলে নিয়মিত।
প্রবীর মিত্র দীর্ঘদিন সেগুনবাগিচায় বাস করেছেন। তবে এখন আর সেখানে থাকেন না তিনি। সন্তানদের নিয়ে সুখের বসতি গড়েছেন ধানমন্ডির একটি বাসায়। তবুও সুখ নেই প্রবীর মিত্রের মনে। কেননা ক্যামেরা, লাইট, অ্যাকশনের দুনিয়া থেকে আজ তিনি অনেক দূরে। দীর্ঘ চারদশকের অভিনয়জীবন আজও তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। তবুও ফেরা হয় না সে জীবনে। কেননা আজকাল কেউ আর অভিনয়ে ডাকে না তাকে। তাই যাওয়া হয় না এফডিসিতে।
বিজ্ঞাপন
কিন্তু জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটানো এফডিসিকে ভুলতে পারেন না তিনি। প্রাণের সখার মতো অনুভব করেন তাকে। তিনি বলেন, ‘এফডিসিতে যেতে ইচ্ছা করে, গেলে মনে হয় আমি নিশ্বাস ছাড়লাম। না গেলে মনে হয়, আমি না খেয়ে আছি। মন উদাস লাগে। রোজ এফডিসিতে যেতে চাই।’
প্রবীণ এই অভিনেতাকে ভুলে গেছেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরাও। আজকাল প্রিয়জনের খোঁজ ঘরে বসে নেওয়া যায়। তবুও অবসরের একলা জীবনে মানুষটা কেমন আছেন— জানার প্রয়োজনবোধ করেন না কেউ। এ নিয়ে বেশ আক্ষেপ রয়েছে পর্দার নবাবের। অভিমান মিশ্রিত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কেউ আমার খবর নেয় না। যেন কারোরই খবর নেওয়ার দরকার নেই। শুধু ভাবি, কেউই তো আমার খোঁজখবর নেয় না। আমিও কারও খোঁজখবর নেই না। কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে জীবনটা।’
মাঝে দুই-একবার শিল্পী সমিতি খোঁজ নিয়েছিল তার। তবে তার পেছনে জড়িয়ে ছিল স্বার্থ। শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আগে ভোট পাওয়ার আশায় কয়েকজন প্রার্থী তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এখন ভোটের প্রয়োজন নেই, তাই তাদেরও বয়স্ক এই অভিনেতাকে আর প্রয়োজন নেই।
সহধর্মিণী অজন্তা মিত্র পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন ২০০০ সালে। তারপর থেকে মনের একান্ত কথাটুকু ভাগ করার মানুষটিও খুঁজে পান না তিনি। ফলে ঘরে শুয়ে বসে পত্রিকা পড়ে, টিভি দেখেই কাটে তার একলা সময়।
আরআর

