দরজায় কড়া নাড়ছে ২০২৫। কয়েকদিন পর নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হবে। কিন্তু বিদায়ী বছরকে ভুলবে না দেশের শোবিজ অঙ্গন। এ বছরেই সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন জনপ্রিয় তারকা ও গুণী শিল্পীরা। দেখে নেওয়া যাক, ২০২৫ সালে কোন কোন তারকাদের হারিয়েছে বিনোদন অঙ্গন।

বিজ্ঞাপন
অভিনেতা প্রবীর মিত্র
নক্ষত্র পতনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল চলতি বছর। ৫ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র। নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে প্রায় ১৩ দিন চিকিৎসার পর মৃত্যু বরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। পাঁচ দশকের অভিনয়জীবনে চার শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করা গুণী এ অভিনেতা। প্রবীর মিত্র অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘চাবুক’, ‘সীমা’, ‘তীর ভাঙা ঢেউ’, ‘শেয়ানা’ ইত্যাদি।

অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান
বিজ্ঞাপন
৪ জানুয়ারি রাত ১টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) তিনি মৃত্যুবরণ করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। মৃত্যুর এক মাস আগে জ্বরে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। জ্বর না কমলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েকটি পরীক্ষার পর রক্তের সংক্রমণ ধরা পড়ে। সেসময় একটি বেসরকারি হাসপাতালের সিসিইউ ভর্তি করা হয় পরে পিজি হাসপাতালে নেওয়া হয়।

অভিনেতা শাহবাজ সানী
ছোট পর্দার জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা শাহবাজ সানী মাত্র ৩৩ বছর বয়সে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। ১৭ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাত ৩টা ৩০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস র্যাগ করেন। অভিনেতার মৃত্যুতে শোবিজ তারকাদের স্তব্ধ করেছিল।

অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট; ধারাবাহিকের কাবিলার আম্মা, নোয়াখালীর চেয়ারম্যান চরিত্রের অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ ১৫ এপ্রিল ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২০০২ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একজন তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে টিভি নাটকে যাত্রা শুরু করেন। এনায়েত করিম পরিচালিত ‘কদম আলী মাস্তান’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড়পর্দার অভিনেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

অভিনেত্রী তানিন সুবহা
অভিনেত্রী তানিন সুবহা ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ জুন সন্ধ্যা ৭টা ৫৭ মিনিটে মারা যান। মৃত্যুত আগে অভিনেত্রীকে এক সপ্তাহের বেশি লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। মৃত্যুর দুইদিন আগে চিকিৎসকরা তাকে ক্লিনিক্যালি ডেথ ঘোষণা করেছিলেন। পরে স্বামীর সিদ্ধান্তে লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হলে অকাল প্রয়াণ ঘটে এ অভিনেত্রীর।

আলোকচিত্রী চঞ্চল মাহমুদ
দেশের স্বনামধন্য আলোকচিত্রী চঞ্চল মাহমুদ ২০ জুন রাত সাড়ে ৯টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হৃদ্রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুর চার দিন আগে হার্ট অ্যাটাক হলে তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

অভিনেতা জসীমের ছেলে গায়ক একে রাতুল
মাত্র ৩৬ বছর বয়সে চলে গেলেন চিত্রনায়ক জসীমের মেজ ছেলে, ‘ওন্ড’ ব্যান্ডের ভোকালিস্ট ও বেজিস্ট এ কে রাতুল। গত ২৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উত্তরার একটি জিমে হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। অসুস্থ অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার এই অকাল মৃত্যুতে সংগীত জগতে শোকের ছায়া নেমে আসে।

গীতিকার ও অভিনেত্রী জাহানারা ভূঁইয়া
অভিনেত্রী, গীতিকার এবং প্রযোজক জাহানারা ভূঁইয়া ২৫ আগস্ট ৬৮ বছরে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ডায়াবেটিসজনিত জটিলতার কারণে তার দুটি কিডনি অকার্যকর হয়ে গিয়েছিল।

ফরিদা পারভীন
দীর্ঘদিন কিডনিজনিত রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা ১৫ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান একুশে পদকপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন। রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

নির্মাতা শেখ নজরুল ইসলাম
বরেণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা শেখ নজরুল ইসলাম ২২ নভেম্বর রাত ১১টা ৩০ মিনিটে মারা যান। ১৬ নভেম্বর মাইল্ড স্ট্রোক করলে তাকে ধানমন্ডির একটি হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে দেশীয় চলচ্চিত্র অঙ্গনে বড় শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।

কামাল পারভেজ
জীবনের পাঠ চুকিয়ে ২২ নভেম্বর ৭২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন চলচ্চিত্র প্রযোজক-অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল পারভেজ। মৃত্যুর আগের দিন ২১ নভেম্বর সকালে অসুস্থতাজনিত কারণে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে আইসিউতে ভর্তি করানো হয়। এরপর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে দেওয়া হয়। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

গিটারিস্ট সেলিম হায়দার
নন্দিত গিটারিস্ট ও মিউজিশিয়ান সেলিম হায়দার ২৭ নভেম্বর রাতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। ঢাকার মগবাজারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

কণ্ঠশিল্পী জেনস সুমন
সংগীতশিল্পী জেনস সুমন ২৮ নভেম্বর মাত্র ৪০ বছর বয়সে মারা যান। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ইএইচ/

