জেমস ক্যামেরন ও অ্যাভাটার, দু’টি নামই সিনেমাপ্রেমী মানুষদের হৃদয়ে জায়গা করে আছে বিস্ময়কর মুগ্ধতায়। যার শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। এক মহাকাব্যিক কল্পবিজ্ঞান সিনেমা দিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার আয়ের রেকর্ড করে সিনেমাটি। ২০২২ সালে মুক্তি পায় সিরিজের দ্বিতীয় সিনেমা ‘দ্য ওয়ে অব ওয়াটার’।
দ্য হলিউড রিপোর্টার-এর তথ্যমতে, এটি করোনা পরবর্তী সময়ও প্রায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার আয় করে। শুধু আয়ের রেকর্ড নয়, বিশাল ক্যানভাসের এই সিনেমা দর্শকদের চোখে যে বিস্ময় জাগিয়েছে তার ঘোর কাটানো দুষ্কর। সুখবর হলো, আবার পর্দায় আসছে ‘অ্যাভাটার’। ১৯ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেতে চলেছে সিরিজের তৃতীয় সিনেমা। এবারের সিনেমার নাম ‘অ্যাভাটার: ফায়ার অ্যান্ড অ্যাশ’। বাংলাদেশের দর্শকরাও খুশি হতে পারেন এজন্য যে, সারা বিশ্বের সঙ্গে একই দিনে বাংলাদেশের স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পাবে সিনেমাটি।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি লন্ডনে সিনেমাটির একটি বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর সেখানেই যেন রীতিমতো ‘প্যানডোরা ঝড়’! প্রদর্শনী শেষে সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা যায় ক্যামেরন আবারও তার ‘ভিজ্যুয়াল জাদু’তে সবাইকে মুগ্ধ করেছেন। সমালোচক কোর্টনি হাওয়ার্ড সরাসরি লিখেছেন ‘অ্যাভাটার ৩ মনে করিয়ে দেয় কেন সিনেমা হলে সিনেমা দেখা জরুরি!’ কলাইডারের পেরি নেমিরফ বলেছেন, ‘প্যানডোরায় ফিরে যাওয়ার মতো অনুভূতি হয়েছে সিনেমাটি দেখে। এ যেন নীল-আঁধার প্যানডোরা আবার ডাকছে!’
এই সিনেমার কেন্দ্রে সুলি পরিবার। আগের পর্বে নেটেয়ামের মৃত্যু তাদের জীবনে গভীর দাগ রেখে গেছে। সেই শোক, সেই লড়াই তার মাঝেই আসে নতুন বিপদ। এখানে প্রথমবারের মতো দর্শক দেখবে ‘আগুন উপজাতি’, যাদের আবির্ভাবই সিনেমার নতুন উত্তেজনা। মাইকেল লি লিখেছেন ‘এই সিনেমার ভিজ্যুয়াল-অ্যাকশন দাঁড়িয়ে গেছে আলাদা এক উচ্চতায়।’ আর সেই উচ্চতায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছেন স্যাম ওয়ার্থিংটন, জো স্যালদানা, সিগরনি উইভার, স্টিফেন ল্যাং, এমনকি কেট উইন্সলেটও।
গত ৫ ডিসেম্বর প্যারিসে সংবাদ সম্মেলনে ক্যামেরন বলেন, দর্শকরা দেখবেন, সন্তানরা বড় হয়ে নিজেদের পরিচয় খুঁজছে। কারণ তাদের মা পুরোপুরি নাভি প্রজাতির। আর বাবা অন্য গ্রহ থেকে আসা। এই শংকর জীবন তাদের হাসি-আনন্দের সঙ্গে এক ঝাঁক চ্যালেঞ্জও নিয়ে আসে। ৭১ বছর বয়সী এই কানাডিয়ান পরিচালক আরও বলেন, আমরা মূলত শরণার্থী বা বাস্তুচ্যুত অভিবাসীদের পারিবারিক অবস্থাকে দেখানোর চেষ্টা করেছি। মানুষ এটি দেখে সহজেই বাস্তবতার সংযোগ স্থাপন করতে পারবে। ‘অ্যাভাটার’ সিনেমা মানেই প্রযুক্তির এক বিশাল চমক। এর সিনেমাটোগ্রাফি, অ্যানিমেশন বা কারিগরি সবকিছুতেই থাকে নতুনত্বের ছোঁয়া। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, এই সিনেমার সংগীত বা মিউজিকের ক্ষেত্রেও ঠিক একই কথা প্রযোজ্য। সুরকার সাইমন ফ্র্যাংলেন জানিয়েছেন, এবারের সিনেমার কাজ শেষ করতে তার দীর্ঘ সাত বছর সময় লেগেছে। এই দীর্ঘ যাত্রায় তিনি ১,৯০৭ পাতার অর্কেস্ট্রা স্কোর বা স্বরলিপি লিখেছেন। এমনকি ভিনগ্রহের কাল্পনিক জগত ‘প্যান্ডোরা’র বাসিন্দাদের বাজানোর জন্য তিনি সম্পূর্ণ নতুন বাদ্যযন্ত্রও আবিষ্কার করেছেন।
জেমস ক্যামেরন জানিয়েছেন এই সিনেমার ব্যবসায়িক ফলই ঠিক করবে অ্যাভাটারের ভবিষ্যৎ পথচলা। কারণ, প্রথম ‘অ্যাভাটার’ এখনও বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা, আর দ্বিতীয় কিস্তি সফল হলেও সেই রেকর্ড ছুঁতে পারেনি। তাই তরুণ-বুড়ো সব দর্শকের চোখ এখন ১৯ ডিসেম্বরের দিকে। বক্স অফিসে ক্যামেরন কি আবারও বাজিমাত করতে পারবেন?

