বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে টেকসই উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে একটি বিস্তৃত নীতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল।
আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সরকারের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি, নীতি-প্রণেতা, নির্মাতা-প্রযোজক, সৃজনশীল অর্থনীতিবিদ, আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও চলচ্চিত্র খাতের বিভিন্ন অংশীজন।
বিজ্ঞাপন
প্রধান গবেষক ড. ইমরান ফিরদাউসের নেতৃত্বে ঢাকা ডকল্যাবের গবেষক দল চলচ্চিত্র শিল্পের পূর্ণঙ্গ চিত্র তুলে ধরতে দেশব্যাপী জরিপ পরিচালনা করেছে।
‘সিনেমা অ্যাজ আ ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি: ম্যাপিং বাংলাদেশ’স ফিল্ম ইকোসিস্টেম অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ পটেনশিয়াল’—শীর্ষক গবেষণার অংশ হিসেবে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের সামগ্রিক চিত্র, সম্ভাবনা এবং কাঠামোগত সীমাবদ্ধতার একটি পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন তুলে ধরেছে। ব্রিটিশ কাউন্সিলের বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা এবং ঢাকা ডকল্যাবের স্থানীয় গবেষণা সক্ষমতার সমন্বয়ে তৈরি এই গবেষণা বাংলাদেশের সৃজনশীল শিল্পখাতের ভবিষ্যৎ নির্দেশনায় একটি বৈপ্লবিক সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গবেষণায় দেশের চলচ্চিত্র ইকোসিস্টেমের—বর্তমান প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, নীতি-ব্যবস্থা, নির্মাতা ও প্রদর্শন ব্যবস্থার বাস্তব চিত্র এবং সৃজনশীল অর্থনীতির সুযোগ-সম্ভাবনা—বিস্তৃতভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা, যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক, উদ্ভাবনী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
বিজ্ঞাপন
নতুন ম্যাপিং রিপোর্ট প্রকাশ পাচ্ছে জানুয়ারিতে:
ব্রিটিশ কাউন্সিল অনুষ্ঠানে জানায়, গবেষণার অংশ হিসেবে প্রস্তুতকৃত একটি বিস্তৃত ন্যাশনাল ম্যাপিং রিপোর্ট আগামী জানুয়ারি ২০২৬-এ প্রকাশ করা হবে। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নির্মাতা, প্রযোজক, শিক্ষার্থী, হল মালিক, স্বাধীন ধারার চলচ্চিত্রকারসহ হাজারো অংশীজনের মতামত ও সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
দেশজুড়ে নির্মাতাদের সঙ্গে জরিপ ও সংলাপ:
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে উন্মুক্ত আহ্বানের মাধ্যমে শুরু হওয়া গবেষণা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট মানুষ। জরিপ, আলোচনা সভা ও অংশগ্রহণমূলক পরামর্শ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলচ্চিত্র শিল্পের বাস্তব অভিজ্ঞতা, প্রয়োজন ও প্রত্যাশাকে গবেষণায় স্থান দেওয়া হয়েছে—যা ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পুরো বাংলাদেশ জুড়েই চলচ্চিত্র শিল্প নিয়ে আমরা বিপুল পরিমাণ প্রতিভা, উচ্চাকাংক্ষা ও সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছি। এই ক্ষেত্রটির বর্তমান পরিস্থিতির বিশদ বর্ণনা ছাড়াও এই গবেষণা মূলত ব্যবহারিক ও প্রমাণভিত্তিক পদক্ষেপ তুলে ধরবে, যা চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং নীতি-নির্ধারকদের সৃজনশীল ও আর্থিক সাফল্য অর্জনে সহায়তা করবে। এছাড়াও, বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, এই গবেষণা চলচ্চিত্র শিল্পে লৈঙ্গিক সমতা এবং খাতটির টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়গুলোকেও গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়েছে।”
অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে নির্মাণ বাজেট, প্রদর্শনক্ষেত্রের সংকট, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সুযোগ সৃষ্টি, সরকারি নীতি, শিক্ষা–প্রশিক্ষণ এবং বিনিয়োগ কাঠামো—ইত্যাদি বিষয়ে অংশীজনেরা উন্মুক্তভাবে মতামত দেন। তাঁদের মতে, এই প্রতিবেদন দেশের চলচ্চিত্র শিল্পে দীর্ঘদিনের নীতি–সংকট সমাধানে একটি সহায়ক ভিত্তি তৈরি করবে।
সৃজনশীল শিল্পের বিকাশে দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গীকার:
ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা বলেন, বাংলাদেশের সৃজনশীল শিল্প—বিশেষত চলচ্চিত্র খাত—বর্তমানে রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রয়েছে। গবেষণা, নীতি–সংলাপ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং অংশীজনদের সমন্বিত কার্যক্রম অব্যাহত রেখে ব্রিটিশ কাউন্সিল এই রূপান্তরকে আরও শক্তিশালী করতে আগ্রহী।
এমআর/ক.ম

