বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নিপীড়ন করার একটাই জায়গা সেটা হলো সংস্কৃতি: হামিন আহমেদ

রাফিউজ্জামান রাফি
প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১২ পিএম

শেয়ার করুন:

নির্বাচনে সংগীতের ইশতেহার না থাকলে ২-৩ কোটি ভোট পাবে না: হামিন আহমেদ 
দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের অন্যতম সদস্য হামিন আহমেদ সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রশ্ন ছুঁড়েছেন। জানতে চেয়েছেন— সংগীত নিয়ে দলগুলোর ভাবনা কী? সেই সূত্র ধরে ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা হয়েছে এ সংগীতজ্ঞের।

সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ৫৪ বছরের ইতিহাসে দেশের কোনো রাজনৈতিক দল সংগীত নিয়ে তাদের পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি। প্রশ্ন তুলেছেন— সামনের নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর সংগীত ভিত্তিক ইশতেহার কী? এই প্রশ্ন এতদিন করেননি কেন? 


বিজ্ঞাপন


প্রশ্নটা আগেই তোলা উচিত ছিল। কিন্তু দায়িত্বরতদের দিকে তাকিয়ে হয়তো অপেক্ষা করেছি। তাছাড়া আমরা পারফর্মিং আর্টিস্ট। দেশের ভেতরে-বাইরে ব্যস্ত থাকতে হয়। সেকারণে নিজেদের মধ্যে আলোচনা হলেও তুলে ধরা হয়নি। হঠাৎ খেয়াল করলাম ৫৪ বছর চলে গেছে। আশ্চর্যজনকভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের আর্ট কালচার নিয়ে পরিকল্পনা নেই। সেকারণেই ৫৪ বছরে ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়ায়নি। এখানে অনেকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ মেনে সংগীতকে ভালোবেসে জীবন দিয়ে দিচ্ছে। তাদের জন্য কেউ চিন্তা করছে না। প্যান্ডেমিকেও ভাবেনি। প্যান্ডেমিকোত্তর সময় দেশে কোনো সমস্যা হলে প্রথমে এই জায়গায় (সংগীত) আক্রমণ করা হয়। ছোট করে দেখা হয়। ছোট করে দেখার অবকাশ নাই। কারণ কালচারালি ডেভেলপ না করলে আপনি অন্যান্য ডেভেলপমেন্টে যেতে পারবেন না। এটা পৃথিবীর ইতিহাস বলে। কোরিয়াকে দেখুন, এর আগে দেশটিকে স্যামসং এবং হুন্দাই গাড়ির জন্য চিনত। এখন বিটিএস অর্থাৎ কে পপ দিয়ে পুরো দুনিয়ার সামনে এসেছে। মিলিয়ন মিলিয়ন ডলায় আয় করছে। এটাকে বলে কালচারাল এক্সপোর্ট। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, পশ্চিমা বিশ্বে আফ্রিকান, স্প্যানিশ আর্টিস্টরা কীভাবে মেইনস্ট্রিমে ঢুকে গেল। এগুলো নিজেদের উদ্যোগে হয় না। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় হয়। তবে দেরিতে হলেও আমরা জানতে চাই— সত্যিই রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কৃতি নিয়ে কোনো চিন্তাভাবনা আছে কি না। 

cfc6cd92b0ec7dc5eeb5c26324b5ff52-61eab1f0e982f

সামাজিক মাধ্যমে আপনার এ সম্পর্কিত পোস্টগুলো আলোচনায় এসেছে। এ বিষয়ে সংগীতসংশ্লিষ্টদের সাড়া কেমন পাচ্ছেন? 

শতভাগ পেয়েছি। দেশের তরুণ মধ্যবয়স্ক, প্রবীণ মিলিয়ে শ্রোতার সংখ্যাটা বড়। ১৮ কোটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংগীতপ্রেমীদের সংখ্যা ৩-৪ কোটির ওপরে। তাদের চিন্তাভাবনা আমাদের কাছে আসে। অনেকে প্রশ্ন করেন— আপনারা কিছু বলছেন না কেন? যাইহোক, এখন আমাদের এই প্রশ্ন উত্থাপনের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রথমে জানান দেওয়া যে সংস্কৃতি নিয়ে একটা পরিষ্কার চিন্তাভাবনা রাজনৈতিক দলগুলোকে করতে হবে। যেহেতু এবার ইলেকশন এসছে। ভোট হবে। দেশের শ্রোতাদের সংখ্যা যদি দুই কোটি ধরি তাহলে তাদের ভোট কাউকে পেতে হবে। যদি নির্বাচনে কোনো সংগীতের ইশতেহার না থাকে কিংবা নেতিবাচক মনোভাব থাকে তাহলে দুই-তিন কোটি ভোট পাবে না। এটা আমি বলে দিচ্ছি।


বিজ্ঞাপন


সংগীত বিষয়ক ইশতেহারে কী কী থাকতে পারে? 

সার্বিকভাবে বলতে পারি, সংস্কৃতির পরিবেশটা সবসময় সংরক্ষণ করতে হবে। যারা এটা পেশা হিসেবে নিয়েছেন তাদের পেশাগত অগ্রগতি, নিরাপত্তা দরকার। সব মিলিয়ে আমরা পরিবেশ, সাপোর্ট, পরিকল্পনা চাচ্ছি। পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ আলী আকবর খান, ফিরোজা বেগমের মতো বিশ্বখ্যাত মিউজিশিয়ানরা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। কমল দাসগুপ্ত কোথা হতে এসেছেন? যশোর থেকে। তাহলে সেই দেশে সংগীতের জন্য বিভাগ ভিত্তিক একটি করে অডিটোরিয়াম থাকবে না কেন! মাঠে ঘাটের অনুমতির জন্য কেন ছুটতে হবে! ঢাকায় ৩০০০-৪০০০ সিটের শুধু মিউজিকের জন্য একটা ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পুরো পরিকল্পনা আমরা দিয়ে দেব। আমরা অনেক বুদ্ধি রাখি। যদিও সংগীত নিয়ে আমাদের চিন্তা করার কথা। কিন্তু ব্যান্ড মিউজিককে সামনে আনতে যা যা করেছি সংগীতের বাইরে গিয়ে করেছি। আয়োজক হিসেবে অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে। অতএব ওই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা সহায়তা করতে পারব। 

Hamin-Ahmed-Miles

বাংলাদেশ জন্মের ৫৪ বছরেও পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি সংগীত… 

এটা চরম অবহেলা। সংগীত যারা করে তারা কি না করছে। কিন্তু এটা ধর্তব্যের মধ্যেই নেই। অথচ আমাদের দেশের সংগীতের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন আশেপাশের দেশের হলে মিলিয়নিয়র থাকতেন। ন্যায্যটা পেতেন। সেটা আমাদের এখানে হয়নি। উই আর নট মিলেনিয়ারস। কিন্তু আমরা যেটা পাইনি পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও যেন সেটা অধরা না থাকে সেই পরিবেশ তৈরি করতে চাই। 

জুলাই বিপ্লবে শিল্পীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে তারা কতটা মূল্যায়ন পাচ্ছে বলে মনে করেন? 

বলা হয়েছিল জুলাই অভ্যুত্থানে যে নতুন বাংলাদেশ হবে সেখানে সবকিছু সুন্দর ও যথাযথ হবে। গণঅভ্যুত্থানে দেশের সব ধরনের মানুষের সম্পৃক্ততা ছিল। আহত-নিহতরা চিন্তাভাবনা না করেই ন্যায়ের পক্ষে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। শিল্পীরাও দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু তখন থেকেই শিল্পীদের দিক তীর্যক মনোভাব খেয়াল করছি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আক্রমণাত্মক আচরণ চলছে। যারা আমাদের গান শোনেন তাদের আমাদের বিপরীতে দাঁড় করানোর চেষ্টা চলেছে। সেটা বিফলে গেছে। কিন্তু পয়েন্টটা হচ্ছে বাংলাদেশকে সুন্দর করার স্বপ্ন বারবার ভূপতিত হচ্ছে। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম। একটা ওয়ান্ডারফুল পসিবলিটি ছিল। পরে দেখা গেল কোনো না কোনোভাবে সংগীতকে সমানে তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে, বাধা দেওয়া হচ্ছে। জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার মনোভাব থেকে বের হতেই আন্দোলন হয়েছিল। সেখান থেকে বের হয়ে আবার যদি চাপিয়ে দেওয়ার মনোভাব কেউ পোষণ করে এবং যা করেছে যা কিছু হচ্ছে ওসবের মধ্যে যাচ্ছি না। তবে আমার সাদামাটা কথা, চাপিয়ে দেওয়া বা জোর করার জন্য তো আন্দোলন হয়নি। কোথাও কোনো  অন্যায় হলে প্রতিকারের জন্য প্রশাসন আছে। এডমিনিস্ট্রেশনকে তার দায়িত্ব পালন করতে হবে। এডমিনিস্ট্রেশন সে দায়িত্ব পালন না করতে পারলে আমরা কার কাছে যাব। তার মানে কি আমরা অভিভাবকহীন একটা দেশ! বলতে গেলে অরাজকতার চরমে চলে যাচ্ছি। 

hmn_b0ewQt8

কনসার্ট স্থগিতের খবর আজকাল ডালভাতের মতো। কীভাবে দেখছেন বিষয়টি? 

গোটা একটা প্রফেশনাল গ্রুপকে থামতে বলা হচ্ছে। আপনি কি ব্যাংকারদের এক সপ্তাহের জন্য ব্যাংক বন্ধ রাখতে বলেন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারকে বলতে পারবেন? সম্ভব না। সব গিয়ে পড়েছে মিউজিকের ওপর। একটা মুড়ির টিনের বাস যেগুলো রাস্তায় চলা অনুচিত অথচ কালো ধোয়া ছেড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেগুলোর চলাচলও বন্ধ করতে পারবেন না। কেননা তারা হাজারে হাজারে গিয়ে যে অফিস ঘেরাও দেবে। সব ট্রান্সপোর্ট বন্ধ করে বসে থাকবে। আমাদের বলতে পারার কারণ আমরা নম্র ধরণের। আমরা রাস্তায় গিয়ে মারামারি, ধাক্কাধাক্কি, আন্দোলন করতে পারব না। এটাই সুযোগ। নিপীড়ন করার একটাই জায়গা সেটা হলো সংস্কৃতির সাথে নিপীড়ন।

আরআর 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর