লোকসংগীতের প্রতি অদম্য ভালোবাসা, পারিবারিক ঐতিহ্যের সূত্রে শিকড়ের গানকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন ভারতের তরুণ শিল্পী আকাশ ধাড়া। সম্প্রতি ঢাকা মেইলের কাছে সংগীত জীবনের শুরু, অনুপ্রেরণা এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি।
লোকসংগীতের প্রতি ভালোবাসা এবং এই ধারাকে বেছে নেওয়ার মূল কারণ কী?
বিজ্ঞাপন
আমার পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে লোকসংগীত লালন করে আসছে। বাবা এবং ঠাকুরদাও ছিলেন লোকশিল্পী। পরিবারে সবার গান শেখা বাধ্যতামূলক ছিল। বাবার কাছে সংগীতের হাতেখড়ি। ছোটবেলায় ঘুম পাড়ানি গানের বদলে শুনেছি লালনের বিখ্যাত সব গান। বাবার কোলে মাথা রেখে শুনতে শুনতে ঘুমি যেতাম। পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণেই লোকগানের প্রতি ভালোবাসা। শুধু লোকগানই নয়, শৈশবে শাস্ত্রীয় সংগীতও শিখেছি।

সংগীতকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে কেমন সমর্থন পেয়েছেন?
পরিবারের সমর্থন ছিল। সংগীতকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাবার অবদান সবথেকে বেশি। ওনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। কারণ, আমার বাবা চাকরি ছেড়ে গানটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তার কাছ থেকে চিরকাল সমর্থন পাই। এছাড়া মা, ভাই ও বন্ধু-বান্ধবরা আমাকে প্রচন্ড সমর্থন করেন।
বিজ্ঞাপন
মঞ্চে গাইতে উঠে এমন কোনো স্মৃতি অর্জন হয়েছে যা আমাদের বলা যায়
মঞ্চ একজন শিল্পীর কাছে মন্দির তুল্য। আর দর্শক হচ্ছে ভগবান তুল্য। মঞ্চে গান পরিবেশনার সময় এক আলাদা শক্তি, অনুভূতি এবং উর্জার সঞ্চার অনুভব করি নিজের শরীরে ও মনে। তবে সবচেয়ে ভালো লাগে যখন আমার সঙ্গে দর্শকরাও গলা মেলান। যখন শিল্পী ও দর্শক ভেদাভেদ ঘুচে সকলেই একসঙ্গে গান করছি, শুনছি—এই অনুভূতির থেকে বড় অনুভূতি আর কিছু হতে পারে বলে আমার মনে হয় না।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
সামনে অ্যালবাম প্রকাশের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। ‘পঞ্চভূত’ নামে আমার নিজস্ব একটি ব্যান্ড দল আছে। এই ব্যান্ডের সঙ্গে লোকগানের অ্যালবাম রিলিজ করার ইচ্ছা রয়েছে। সেই অর্থে আমি মৌলিক গান খুব একটা লিখি না। তবে বাবার লেখা ও সুর করা বহু মৌলিক গান রয়েছে। সেগুলো আমি করি। মিউজিক ভিডিও তৈরির পরিকল্পনাও আছে, তবে খরচ সাপেক্ষ হওয়ায় কিছুটা বাধা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে দর্শকদের ভালো গান উপহার দিতে পারি। তার জন্য আমরা প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছি। আর নিজেকে একজন ভালো স্টেজ পারফর্মার হিসেবে দেখতে চাই। বাকিটা গুরু আর ভগবানের ইচ্ছা।
লোকসংগীতে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার লোকশিল্পীর জাত যায় না?
লোকসংগীত হলো বাণী প্রধান গান। গানের কথা ঠিক রেখে প্রচার করা হচ্ছে কিনা বা সঠিক বাণী দর্শকের কাছে পৌঁছচ্ছে কিনা এটাই মূল বিষয়। এই সংগীতে অবশ্যই ট্রেডিশনাল ইন্স্ট্রুমেন্ট ব্যবহার করাটা বাঞ্ছনীয়। তবে কলকাতার দিকে ব্যান্ড কালচারটা খুবই ভালো চলে। ছোট বাচ্চারা কিন্তু নিমপাতা খেতে চায় না। লোকসংগীতের বাণী বা কথা নিমপাতার মতো তেতো অথচ স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। তাই এই গানের সঙ্গে যদি আমরা আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করি তাহলে গানটা মানুষকে আরও আকৃষ্ট করে। গান বিকৃত না করে এবং বাণী ঠিক রেখে যদি তা মানুষের কাছে পৌঁছায় তাহলে আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা যেতেই পারে। কিন্তু অবশ্যই গান যাতে বিকৃত না হয়। গীতিকার যে উদ্দেশ্যে গান লিখেছেন সেই বার্তাটা যেন দর্শকের কাছে পৌঁছে।

বাংলাদেশের কোনো লোকসংগীতশিল্পীর গান শোনেন কিনা?
বাংলাদেশের গীতিকাররা আমার প্রিয়। এপার বাংলা, ওপার বাংলার ভেদ বোধহয় লোকসংগীতের মাধ্যমে ঘুঁচে যায়। বাংলাদেশের শ্রদ্ধেয় শাহ আব্দুল করিম, আবুল সরকারসহ জনপ্রিয় লোকসংগীত পদকর্তার গান আমি নিজেও পরিবেশন করি। বাংলাদেশের শ্রদ্ধেয় শফি মণ্ডল সাহেবের গান তো আমি ভীষণ পছন্দ করি। প্রায়ই ওনার গান শুনি। এছাড়াও বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় লোকসংগীতশিল্পী সাগর দেওয়ানের গান আমার খুব ভালো লাগে। এই মুহূর্তে সবার নাম বলতে গেলে শেষ হবে না। শিল্পীরা ভারতীয়-বাংলাদেশি এটা তাঁদের নাগরিক পরিচয়। কিন্তু শিল্পীদের একটাই পরিচয় তারা শিল্পী। লোকসংগীতের মধ্যদিয়ে দুই দেশের ভেদাভেদ ঘুচানো সম্ভব।
১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
শিল্পী হতে হলে সাধনা করতে হয়। আমি কতটা শিল্পী হয়ে উঠতে পেরেছি জানি না। তবে অবশ্যই চেষ্টা করব যাতে আমার উন্নতি ঘটে। দশ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চাই সে বলা ঠিক নয়। যতদিন বাঁচব চেষ্টা করব আমার গানের যাতে আরও উন্নতি হয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তো গীতাতে বলেছেন, ‘কর্ম করে যাও ফলের আশা করো না’। আমি যেমন কর্ম করব, ফল তেমনই পাব। তাই নিজেকে কোথায় দেখতে চাই এটা বলার থেকে, বলা ভালো যে সংগীতকে আমি কতটা দিচ্ছি। সংগীতকে যতটা দেওয়া যায় সংগীত তার হাজার গুণ ফিরিয়ে দেয়।
ইএইচ/

