শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কখনও সাইক্লোন সেন্টারে, কখনও আর্টিস্টের বাড়িতে থেকেছি: তাওকীর

রাফিউজ্জামান রাফি
প্রকাশিত: ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৭ পিএম

শেয়ার করুন:

কখনও সাইক্লোন সেন্টারে, কখনও আর্টিস্টের বাড়িতে থেকেছি: তাওকীর
প্রথম সিনেমা ‘দেলুপি’ নিয়ে বড়পর্দায় আসছেন ‘শাটিকাপ’ ওয়েব সিরিজের নির্মাতা মোহাম্মদ তাওকীর ইসলাম। আগামী ৭ নভেম্বর খুলনায় এবং ১৪ নভেম্বর দেশজুড়ে মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। সেই সূত্র ধরে ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপ জমেছিল নির্মাতার।

পরিচিত মুখ ছাড়া সিনেমা নির্মাণের কথা অনেকেই ভাবেন না। তারকাদের নিয়ে সিনেমা বানিয়েও ঈদে মুক্তির জন্য রেখে দেন। অথচ আপনি নতুনদের নিয়ে সিনেমা বানালেন। এত সাহস কোথায় পেলেন? 


বিজ্ঞাপন


বিষয়টি সাহসের না, ভালোবাসার। পরিচিত অপরিচিত— আমার কাছে বড় বিষয় না। অপেশাদার অ্যাক্টরদের সঙ্গে কাজ করার ফ্যাসিনেশন আছে আমার। পেশাদার শিল্পীদের নিয়েও করতে চাই। তবে এই দুটোকে আলাদা করতে চাই না। এমন না যে শুধু ঈদে সিনেমা আসছে। অন্য সময়ও মুক্তি পাচ্ছে। গত কয়েক দিনের নিউজে চোখ রাখলেই বুঝতেই পারবেন। আমরা সিনেমা দিতে থাকলে দর্শকরা বুঝতে পারবেন যে সিনেমা শুধু ঈদে দেখার জিনিস না। তখন দর্শকদের রুটিন পরিবর্তন হবে। ঈদ ছাড়া অন্য সময়ও তারা হলে যাবেন। 

574109774_25445069695090131_8022604653163452347_n

চাইলে ঈদে মুক্তি দিতে পারতেন। সে পথে হাঁটলেন না কেন? 

আমার কাছে মনে হয় ঈদে অনেক ছবি আসে। বড় তারকাদের ছবি থাকে। শক্ত প্রতিযোগিতা থাকে। এখন ছবির সংখ্যা কম। প্রতিযোগিতাও কম। তার মানে এই না যে কোনো ছবিকে ছোট বা বড় করে দেখছি। কিংবা ‘দেলুপি’কে নিচে রাখছি। আমাদের ছবিটা যে ঈদেই আসতে হবে কিংবা প্রতিযোগিতায় থাকতে হবে এমন না। আমি বিশ্বাস করি যে মানুষগুলো সিনেমা দেখেন তারা এখনও বাংলাদেশ আছেন। আমরা ছবিটা নিয়ে আসি, দর্শকদের কাছে ঠিকঠাক পৌঁছানোর চেষ্টা করি। দর্শক আসবেন কিনা সম্পূর্ণ তাদের ব্যাপার। 


বিজ্ঞাপন


‎‘দেলুপি’র প্রকাশিত ট্রেলার, গান সেরকম সাড়া ফেলতে পারেনি বলে অনেকে মনে করছেন। এ বিষয়ে কী বলবেন? 

‎এটা হতেই পারে। একটা জিনিস দশ জনের ভালো লাগবে না। কিছু মানুষের ভালো লাগেনি এটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ। তেমনই অনেক মানুষের ভালো লেগেছে এটাও গুরুত্বপূর্ণ। এটাই হওয়া উচিত। 

1704014756534

‎‘দেলুপি’ র একটি গানে চিত্রনায়ক মান্নাকে ট্রিবিউট করা হয়েছে। কী কারণে? 

এই ছবিতে পলাশ নামের একটি চরিত্র আছে। সে গান করে। মান্নার অনেক বড় ভক্ত। সিনেমাটা লেখার সময় দেখলাম উনি মান্নাকে মিমিক্রি করেন। ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছে। গানটি পলাশের-ই লেখা। আমার কাছে মনে হয়েছে এই ছবিটা সেই ছবি যে ছবিতে নানান জন নানান কিছু নিয়ে এসে উপস্থিত হবে। আমি শুধু গেটকিপারের কাজ করেছি। কোনটা ছবির অংশ, কোনটা অংশ না— ওই সিদ্ধান্তটা নিয়েছি। ছবির তথ্য উপাত্ত, গল্প— সব প্রকৃতি ও সমাজ থেকে এসেছে।  

নির্মাণের ক্ষেত্রে আপনি ঢাকা নির্ভর না। সেক্ষেত্রে কীরকম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে? 

প্রতিবন্ধকতা অনেক থাকে। কিন্তু আমি যত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই তার চেয়ে বেশি সাপোর্ট পাই। দশটা সমস্যা এলে পঞ্চশটি সমাধান এসে হাজির হয়েছে। আমরা ছবি বানাতে গিয়ে সবার আগে চিন্তা করি  টেকনোলজি, বাজেট, ক্রিয়েটিভস ও আর্টিস্ট নিয়ে। অথচ আমাদের কাছে অল্প পরিমাণ অর্থ ছিল। পুরো জিনিসটাই হয়েছে পার্টনারশিপে। নানান জায়গার নানান মানুষ ছবিটির সাথে যুক্ত হয়েছে। কেউ শ্রম দিয়েছেন কেউ সময় দিয়েছেন। বিভিন্ন লোকেশনে শুটিং করেছি। কিন্তু কোথাও হোটেলে থাকিনি। কখনও সাইক্লোন সেন্টারে, কখনও আর্টিস্টের বাড়িতে থেকেছি। সেখানেই রান্না, খাওয়া, শুটিং হয়েছে। কাজটি অনেক মানুষের নিজের কাজ হয়ে গিয়েছিল। 

delupi

এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন রাজশাহীতে আলাদা ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে চান। তার মানে কি বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাসী আপনি? 

‎বিকেন্দ্রীকরণ বা আরও একটা কমিউনিটি ইন্ডাস্ট্রিতে আমি বিশ্বাসী নই। আমি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। মিডিয়া ও টেকনোলজি এখন এত সহজ হয়েছে যে যেকোনো জায়গা থেকে ঘটানো সম্ভব। এটা বাংলাদেশের সিনেমাতে নতুন কিছু যুক্ত করবে। যেমন আমাদের এফডিসি আছে, মগবাজার-নিকেতন পাড়া আছে। আরও নানা জায়গায় কাজ হচ্ছে। সেরকমই ইন্ডাস্ট্রির অংশ হিসেবে রাজশাহী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাজ হচ্ছে। একইভাবে এটা পৃথিবীর ইন্ডাস্ট্রিরও একটা অংশ। 

‘শাটিকাপ’-‘সিনপাট’-এ দারুণ পারফর্ম করেও অভিনয়শিল্পীদের কেউ সেভাবে মূলধারার মিডিয়ায় জায়গা করে নিতে পারেনি। তার মানে কি তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি? 

আমি এর সাথে পুরোপুরি একমত না। এখন এত কাজ হয় যে মনোযোগ রাখা কঠিন। আবার একটা ছবিতে কিছু মানুষকে আমরা বিশেষভাবে চিহ্নিত করতে পারি। সে হোক ছোট বা বড় ক্যারেক্টার। যেমন শাটিকাপে দুরু চরিত্রের একটি মাত্র সিন। কিন্তু সিনপাটে সে চারজনের একজন। আমাদের বেশিরভাগ আর্টিস্ট রাজশাহীতে থাকেন। কিন্তু আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা ঢাকাকেন্দ্রিক। এটা একটা কারণ। ব্যতিক্রমও আছে। যেমন আমাদের অমিত দাদা (অমিত রুদ্র) বিজ্ঞাপন, সিনেমায় নিয়মিত অভিনয় করছেন। তার কয়েকটি ছবি সামনে আসবে। শাটিকাপের রিয়াদ অনেক কাজ করেছেন। তার একটি সিনেমা আসছে। সে ভালো একটা ক্যারেক্টারও পেয়েছে। মাসুম ভাইও (ওমর মাসুম) কিছু সিনেমায় কাজ করেছেন। অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন। যারা অভিনয় করতে চান তাদেরকে ইন্ডাস্ট্রি স্বাগত জানায়। তা না হলে আমাকেও তো ওয়েলকাম করত না। বলত, তোমরা যা বানাচ্ছ তা প্রচলিত না। সিনেমায় পরিচিত মুখ থাকতে হবে। আমাদের নিজস্ব টেকনিক্যাল গাইডলাইন আছে, নির্মাণের একটা স্ট্রাকচার আছে। এতকিছু মানিনি। আসল কথা হচ্ছে কাজটা ঠিকঠাক করতে হবে। তা না হলে দর্শক বলবেন ফালতু সিনেমা বানিয়েছে। 

tawkir_20251009_135358578

বাংলাদেশে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হলে পরিচালক সমিতির সদস্য হতে হয়। অভিজ্ঞতাটি কেমন? 

হ্যাঁ, ওই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আমাকেও যেতে হয়েছে। সেখানে নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক কিছুর সাথে পরিচিত হয়েছি। মনে হয়েছে এগুলো আরও সহজ হতে পারে। তবে সেসব নিয়ে এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না। কেননা এই ইন্ডাস্ট্রিটা অনেক বছর ধরে চলছে। এখানে নানান গাইডলাইন আছে। যেটা আমার মনে হচ্ছে অন্যরকম হতে পারত। কিংবা এটা কেন এভাবে হচ্ছে। কিন্তু সেগুলোর নিশ্চয়ই কারণ আছে। হয়তো আমার বুঝতে সময় লাগবে। মাত্র একটা সিনেমা নিয়ে এসেছি। 

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি সিনেমার জন্য কতটা উপযোগী বলে মনে হয়? 

লম্বা একটা সময় আমাদের এখানে মানুষজন সিনেমা থেকে দূরে ছিল। শেষ চার-পাঁচ বছর দর্শক হলে আসছেন। বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি সিনেমার জন্য কতটা উপযোগী তা নির্ভর করবে পরিচালক ও দর্শকের ওপর। দর্শক কী ছবি দেখতে চান এবং নির্মাতা কী দেখাতে চান এই দুইয়ের ওপর নির্ভর করবে আমাদের সিনেমার ভবিষ্যৎ। যদি আগেই ঠিক করে নেই আমাদের এখানে সিনেমা হবে না বা আমাদের এখানে এই ধরনের সিনেমা করতে হবে তাহলে এর দায় কেউ নিতে পারবে না। এ দায় আমাদের। নির্মাতাদের কাজ দর্শকদের নতুন নতুন অভিজ্ঞতা দেওয়া এবং আস্তে আস্তে সিনেমার দর্শক তৈরি করা। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে যারা জনপ্রিয় যাদের সিনেমা দর্শক দেখছেন, তারা একদিনে হননি। আস্তে আস্তে তৈরি হয়েছেন। দর্শকের রুচি নির্মাতাদের তৈরি করতে হবে। পরিস্থিতি বিভিন্ন রকম হবে কিন্তু দিন শেষে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা আসলে কি করতে চাই। 
lupi_20251018_121214932

‎একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে। শঙ্কা কাজ করে?

‎অবশ্যই করে। প্রত্যেকটা হল যখন বন্ধ হয় তখন আমাদের একটা করে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এখন মাল্টিস্ক্রিনসহ নতুন প্রযুক্তি এসেছে। আমি বিশ্বাস করি দর্শক সিনেমা হলে এলে সেগুলো আবার চাঙা হবে। ১৮-২০ কোটি জনসংখ্যার দেশে ভালো ছবি হবে আর দর্শক আসবেন না এটা বিশ্বাস করি না। এখানে অনেক দর্শক আছেন এবং এটা সম্ভাবনার জায়গা। সুদিন ফেরানোটা নির্ভর করছে নির্মাতাদের ওপর। এর জন্য ফাইটটা আমাদের করতে হবে। দর্শক তৈরি করতে হবে। হল মালিক, পরিবেশক, প্রযোজকদেরকে লাভের জায়গাটা দেখাতে হবে । তাহলে আস্তে আস্তে আবার সিনেমা হল খুলবে। 

‘দেলুপি’ নিয়ে জানতে চাই… 

‎দেলুপি করতে গিয়ে সিনেমার মধ্যে থেকে সিনেমা বানানোর ব্যাপারটা ফিল করেছি। আমি ওই অঞ্চলের একটা চরিত্রে বাস করে সেটাকেই ধারণ করছি। শাটিকাপ-সিনপাটের ক্ষেত্রে ওই ওয়ার্ল্ডটা সম্পর্কে জেনেছি, মিশেছি এবং সেটা দেখানোর চেষ্টা করেছি। 'দেলুপি' সিনেমার সময় লোকেশনে থেকে তাদের সাথে বসে গল্প লেখা এবং তাদের নিয়ে সিনেমা বানাতে হয়েছে। নিজেকে 'দেলুপি'র একজন মনে হয়েছে। 
7af2c573ffbc5b926e45255c33134e4f2a034ce0c6e10e0e

‎‘দেলুপি’ র অভিনয়শিল্পীরা কোন অঞ্চলের? 

দেলুপি-তে খুলনা অঞ্চলের মানুষ অভিনয় করেছে। তাদের কারও সঙ্গে আগে থেকে চেনাজানা ছিল না। একদম খালি হাতে গিয়েছিলাম। 

দেশের অধিকাংশ নির্মাতা শাকিব খানকে নিজের সিনেমায় পেতে মরিয়া। আপনিও কি তাই? 

আমার এই ইচ্ছাটা শুধু শাকিব খান কেন্দ্রিক না। আরও অনেকে ক্যারেক্টরের প্রতি আমি কৌতূহলী। নানান জনের নানান কাজ, এক্সপ্রেশন দেখে মনে হয় এই মানুষটার সাথে একবার কাজ করতে চাই। ওনাকে স্ক্রিনে এভাবে দেখে আসছি কিন্তু আমি মানুষটাকে এভাবে দেখাতে চাই। 

185411_Delupi

দেশ-বিদেশের কোন নির্মাতারা সবসময় আপনার সঙ্গে থাকেন?

অনেকেই থাকেন। তবে বেশি থাকেন ঋত্বিক কুমার ঘটক। তার সঙ্গে পরিচয়ের সময় জেনেছি তিনি আমার স্কুলের বড় ভাই। আমি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র ছিলাম। স্কুলের ১৮০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে কৃতি ছাত্রদের ছবি ও জীবনী টাঙানো হয়েছিল। অনেকের ছবি ছিল। সেখানে যখন ঋত্বিক ঘটককে দেখার সময় মনে হচ্ছিল আরে সে তো আমার স্কুলের বড় ভাই। তিনি ও আমি একই আলো বাতাসে বড় হয়েছি। এছাড়া অনেক নির্মাতা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন৷ তবে ঋত্বিক কুমার ঘটককে আমি অনুভব করি।   

‎পরবর্তী ব্যস্ততা কী নিয়ে? 

‎২৩-২৪ অর্থ বছরে ‘অদ-ভূত’ নামের একটি শিশুতোষ সিনেমার জন্য অনুদান পেয়েছি। স্ক্রিনপ্লের কাজ শেষ। রি রাইট করছি। পরবর্তী ব্যস্ততা এই সিনেমা নিয়ে। 

আরআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর