শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

জেমস: গানের টানে ঘর ছাড়া এক কিশোর

নিশীতা মিতু
প্রকাশিত: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩০ এএম

শেয়ার করুন:

জেমস: গানের টানে ঘর ছাড়া এক কিশোর
নগর বাউল জেমস

“পাগলা হাওয়ার তোড়ে, মাটির পিদিম নিভু নিভু করে
ওরে ওরে হাওয়া থাম নারে, বন্ধু আসছে বহুদিন পরে।”

প্রিয় মানুষের জন্য অপেক্ষা আর হাহাকার বোঝানোর জন্য এই দু’টি লাইনই যথেষ্ট। আর লাইনগুলোতে যিনি জোরালো আবেগভরা কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি ফারুক মাহফুজ আনাম। অবশ্য এই নামে খুব কম মানুষই চেনেন তাকে। বলছিলাম, বাংলাদেশের রক সংগীত শিল্পী জেমসের কথা। গানপ্রিয় মানুষের কাছে যিনি ‘গুরু’ কিংবা ‘নগর বাউল’ নামেই অধিক পরিচিত। 


বিজ্ঞাপন


১৯৬৪ সালে ২ অক্টোবর নওগাঁ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন জেমস। যদিও বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। সেখানে থাকা অবস্থাতেই ব্যান্ড সংগীতের প্রেমে পড়েন তিনি। সরকারী কর্মচারী বাবা অবশ্য ছেলের সেই সংগীত প্রেমে মোটেও খুশি ছিলেন না। নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বাবা যখন বুঝতে পারলেন, এই ছেলেকে দিয়ে পোড়াশোনা হবে না, তখন তাকে ঘর থেকে বের করে দিলেন। 

image_22_3535

বাবার সাথে অভিমান করে ঘর ছাড়া কিশোর জেমসের নতুন ঠিকানা হয় চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিং। আর সেখান থেকেই ব্যক্তি জেমস থেকে গায়ক জেমস হওয়ার সূচনা। বন্ধুদের নিয়ে খুলে ফেলেন একটি ব্যান্ড যার নাম দেন ‘ফিলিংস’। 

ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও কণ্ঠদাতা হিসেবে শুরু করেন নিজের ক্যারিয়ার। চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া এই ব্যান্ডের মাধ্যমেই তিনি প্রথম খ্যাতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে জেমস ফিলিংস ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেন ‘নগর বাউল’। তিনি এই ব্যান্ডের কর্ণধার, গিটারিস্ট ও ভোকালিষ্ট। এই ব্যান্ডের মাধ্যমেই তিনি বাংলা ব্যান্ড সংগীতে সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস, জন্ম দিয়ে জনপ্রিয় সব গান। 


বিজ্ঞাপন


67747886_10157078224811328_1018753675536891904_n

বাংলা ভাষায় প্রথম সাইকিডেলিক রক শুরু করেন জেমস। কেবল গান নয়, গিটার বাজানোতেও বেশ পটু তিনি। জেমস মূলত তার সলো ক্যারিয়ারকেই বেশি গুরুত্ব দেন। আর তাই সংগীত রচনা করিয়েছেন অনেক গীতিকারকে দিয়ে। যাদের মধ্যে কবি শামসুর রহমান, প্রিন্স মাহমুদ, শিবলি উল্লেখযোগ্য। 

কেবল বাংলার সংগীত অঙ্গন নয়, বলিউডও কাঁপিয়েছেন নগর বাউল। ২০০৫ সালে বলিউডের ‘গ্যাংস্টার’ চলচ্চিত্রে তিনি প্লেব্যাক করেন। তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং এক মাসেরও বেশি সময় তা বলিউড টপচার্টের শীর্ষে অবস্থান করে। এরপর ‘লামহে’ সিনেমায় ‘চল চলে’, ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ সিনেমায় ‘রিশতে’ ও ‘আলবিদা’ দুটি গানে কণ্ঠ দেন তিনি। 

490108614_2090804894721806_1467046891627904832_n

মডেলিং জগতেও পদচারণা করেছেন জেমস। ২০০০ সালে পেপসির বিজ্ঞাপনে প্রথমবার দেখা যায় তাকে। ২০১১ সালে এনার্জি ড্রিংক ‘ব্ল্যাক হর্সে’র বিজ্ঞাপনে কাজ করেন তিনি। 

গান দিয়ে কী করে মানুষকে কাঁদাতে হয় বা ভাবাতে হয় তা বোধহয় ভালো জানেন গুরু। মা কে নিয়ে গাওয়া গানের দুটি লাইন- “রাতের তারা আমায় কি তুই বলতে পারিস, কোথায় আছে কেমন আছে মা?... ভোরের তারা রাতের তারা, মাকে জানিয়ে দিস... অনেক কেঁদেছি আর কাঁদতে পারি না” যে কারোর মন খারাপ করাতে বাধ্য। তার কণ্ঠে সেই জোরালো আকুতি আছে বলেই হয়ত এমনটা সম্ভব। 

465674303_9008278292518522_4751567181935285674_n

গানের আকাশের তারায় তারায় রটিয়ে যাক গুরু জেমসের সফলতা। বিশ্ব জুড়ে তার কণ্ঠ ছড়িয়ে যাক। গুণী এ শিল্পীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর