শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

‘লং ডিস্ট্যান্স লাভ’-এর গায়ক কে এই অঙ্কন?

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

‘লং ডিস্ট্যান্স লাভ’-এর গায়ক কে এই অঙ্কন?

কোক স্টুডিও বাংলা বরাবরই ঐতিহ্য আর আধুনিকতার সেতুবন্ধন তৈরি করে আসছে, আর সেই ধারাবাহিকতায় নতুন পর্বে উঠে এসেছেন অঙ্কন কুমার। তার কণ্ঠে মিশে আছে আধুনিকতার ছোঁয়া ও অতীতের গভীরতা, যা তাকে শুধু বর্তমানের গায়ক হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখে না; বরং ইতিহাস, দুঃখমিশ্রিত আবেগ ও চিরন্তন সুরের এক বাহক হিসেবে তুলে ধরে, যেখানে প্রতিটি সুর হয়ে ওঠে সময়, ভালোবাসা আর অনুভূতির গল্প।

আজকের দুনিয়ায় যেখানে গানকে অনেক সময় শুধু ক্লিক আর সাময়িক ট্রেন্ডে মাপা হয়, সেখানে অঙ্কন শান্তভাবে নিজের আলাদা পথ তৈরি করছেন। তার কণ্ঠ আবেগে ভরা এবং আধা-শাস্ত্রীয় সংগীতে ভিত্তি করা, তাই এতে আছে একদিকে ঐতিহ্যের গভীরতা, আরেকদিকে বর্তমান সময়ের নরম দুর্বলতা।


বিজ্ঞাপন


অনেকেই প্রথম অঙ্কনকে চিনেছিলেন হাতিরপুল সেশনের গান “উপ” দিয়ে। কিন্তু তার যাত্রা শুরু হয়েছিল তারও আগে। গান তার কাছে শুধু শখ ছিল না, ছিল কিছুটা পারিবারিক উত্তরাধিকারও। ছোটবেলা থেকেই তার বাবা সুরের ভাষা শিখিয়েছিলেন, গড়ে দিয়েছিলেন এক মজবুত ভিত্তি। সেই ভিত্তির ওপর পরে অনেক লোকগান আর শাস্ত্রীয় গানের গুরু তাকে আরও শিখিয়েছেন, আরও সমৃদ্ধ করেছেন। তাই আজ অঙ্কন শুধু নিয়ম মেনে গান করেন না, তিনি মনের অনুভূতিও সুরে মিশিয়ে দেন। তার কণ্ঠে আছে একসাথে কৌশল আর আবেগ, যা ছুঁয়ে যায় একদিকে সংগীতপ্রেমীদের, অন্যদিকে পথচলার সঙ্গী খুঁজে বেড়ানো মানুষদেরও।

অঙ্কনের ছোটবেলা কেটেছে এমন এক ঘরে, যেখানে গান সবসময় তার আশেপাশেই ছিল। সেই গান যেন ঘরের গন্ধের মতো তার মনে থেকে গেছে। অঙ্কনের কাছে এই সকালগুলো বিরক্তিকর ছিল না, বরং ছিল সংগীতযাত্রা শুরুর ইঙ্গিত। সেই দিনের সুর আর আওয়াজ আজও তার গানের ভেতরে বেঁচে আছে। তার জন্য গান শুধু সুর সাজানো নয়, বরং স্মৃতি—যা সুরের ভেতর দিয়ে আবার জীবন্ত হয়ে ওঠে।

দুনিয়া অঙ্কনকে চেনে আধুনিক যুগের আধা-শাস্ত্রীয় গায়ক হিসেবে, কিন্তু ভেতরে তিনি আসলে এক পুরোনো প্রাণ। তার সমসাময়িক অনেকেই যেখানে অনুপ্রেরণা খোঁজেন বিদেশি পপ তারকাদের থেকে, অঙ্কন টান পান অতীতের কাছে—পুরোনো রেকর্ড, মলিন রেডিওর সুর আর সেই গানগুলোতে, যেগুলো বেঁচে থাকে আজীবন। তিনি অনেক সময় নিজের ভেতরের জগতে ডুবে থাকেন, একটু দুঃখভরা চিন্তায় হারিয়ে যান। কিন্তু সেই একাকীত্বেই তিনি খুঁজে পান লেখা আর সুরের জন্ম।তার কাছে গান শুধু একটি পরিবেশনা নয়, বরং যেন মনের গোপন স্বীকারোক্তি—শান্ত, চিন্তাশীল আর গভীরভাবে মানবিক।

অঙ্কনকে বড় পরিসরে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে কোক স্টুডিও বাংলা। সেখানে তিনি আফরিনের সঙ্গে গেয়েছেন “লং ডিস্ট্যান্স লাভ” গানটি। এই গানের সাজে ছিল দূরত্ব আর অপেক্ষার আবহ, যা গানটিকে বানিয়েছে অনুভূতির এক ছবি। অঙ্কনের দুঃখভরা কণ্ঠ গানটিকে শুধু একটি ট্র্যাক সীমাবদ্ধ রাখেনি; বরং বানিয়েছে ভালোবাসার এমন এক রূপ, যা বেঁচে আছে কিন্তু ছোঁয়া যায় না। শ্রোতাদের কাছে এটা শুধু গান ছিল না, বরং এক গভীর অভিজ্ঞতা, যা মনকে নাড়া দিয়েছে।


বিজ্ঞাপন


অঙ্কনকে সবচেয়ে আলাদা করে তোলে তার সীমার মধ্যে না বাঁধা। তিনি আধা-শাস্ত্রীয় গানে ভিত্তি করেও থেমে থাকেননি; তার আসছে অ্যালবামে তিনি চেষ্টা করছেন আর অ্যান্ড বি আর পপ ঘরানার গানও। কাগজে কলমে এসব ধারা আলাদা মনে হলেও, অঙ্কনের গলায় সবকিছুতেই পাওয়া যায় একই রকম আবেগ আর গভীরতা। তার কাছে গান মানে কোনো ঘরানায় আটকে যাওয়া নয়, গান মানে সত্যকে প্রকাশ করা। আর তার গান প্রমাণ করে, সত্য কখনো কোনো সীমায় আটকে থাকে না।

মঞ্চের বাইরে গেলেও অঙ্কনের ভেতরের দুটি দিক থেকে যায়। সামনে তিনি অনেক সময় চুপচাপ থাকেন, চিন্তায় হারিয়ে যান, যেন অন্য এক দুনিয়ায় আছেন। কিন্তু সেই নীরবতার আড়ালে চলছে সৃষ্টির ঝড়। চারপাশে সবকিছুর প্রতি তিনি সবসময় সাড়া না দিলেও, মনের ভেতরের অনুভূতিগুলোকে গান বানিয়ে তোলেন। এটাই তার বিশেষ শক্তি—জীবনের ছোট ছোট ভুলে যাওয়া টুকরোকে রূপ দেন এমন গানেই, যা মানুষের মনে অনেকদিন থেকে যায়।
আজকের সময়ে যেখানে গান অনেক সময় দ্রুত শোনা আর ভুলে যাওয়ার জিনিস হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে কোক স্টুডিও বাংলার মঞ্চে অঙ্কন কুমারের মতো শিল্পীরা আমাদের মনে করিয়ে দেন ধৈর্য, গভীরতা আর আবেগের কথা। তার আধা-শাস্ত্রীয় গান আমাদের টেনে নেয় ঐতিহ্যের কাছে, আর নতুন নতুন ঘরানায় তার চেষ্টা দেখায়—এই ঐতিহ্যকে তিনি ভবিষ্যতের দিকেও এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

যারা গানকে শুধু বিনোদন নয়, আরও গভীর কিছু হিসেবে খোঁজেন, তাদের জন্য অঙ্কন কুমার শুধু একজন গায়ক নন। তিনি মনে করিয়ে দেন, দুঃখভরা অনুভূতি যখন সুরের ভেতর দিয়ে প্রকাশ পায়, তখন সেটাই হতে পারে আমাদের সবচেয়ে সুন্দর ভাষাগুলোর একটি।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর