শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

প্রযুক্তির প্রসার সত্ত্বেও বেতার এখনও প্রাসঙ্গিক: এ এস এম জাহিদ

রাফিউজ্জামান রাফি
প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রযুক্তির প্রসার সত্ত্বেও বেতার এখনও প্রাসঙ্গিক: এ এস এম জাহিদ

এক সময় বিনোদন, সংবাদ ও তথ্য প্রাপ্তিতে একমাত্র সহজলভ্য মাধ্যম ছিল রেডিও। ছিল নাগরিক জীবনের নিত্য অনুষঙ্গ। এই গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল ছিল ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র। রেডিওর সম্প্রচার রাষ্ট্রের স্পর্শকাতরতাকে ছুঁয়ে যেত। প্রযুক্তির প্রসারে বিনোদন তথ্যপ্রাপ্তি ও মানস গঠনের উপকরণাদি সহজ হওয়ায় পেছনের সারিতে চলে গেছে রেডিও। কিন্তু তা সত্ত্বেও রেডিও আজও প্রাসঙ্গিক। সময়োপযোগী করতে পারলে রেডিও আবারও তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে। এ গণমাধ্যমটি জাতির অমূল্য সম্পদ। সেসব নিয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক এ এস এম জাহিদ। বিশিষ্ট এ গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কথা হয় আগারগাঁও বাংলাদেশ বেতারের প্রধান কার্যালয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা মেইলের বিনোদন বিভাগের প্রধান রাফিউজ্জামান রাফি। 

ঢাকা মেইল: বাংলাদেশের প্রাচীন প্রতিষ্ঠান বেতার। একসময় এর ওপর নির্ভর করত সংবাদ-শিল্প-সংস্কৃতি। এখন বেতারের কী অবস্থা?


বিজ্ঞাপন


এ এস এম জাহিদ: ব্রিটিশ শাসনকাল থেকে গণমাধ্যম বলতে ছিল একমাত্র বেতার। ১৯৩৯ সালে এর যাত্রা শুরু। সেসময় পূর্ব পাকিস্তানে টেলিভিশনও আসেনি। ষাটের দশকে টেলিভিশন আসার আগ পর্যন্ত বেতারের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। এককভাবে সংবাদ তথ্য ও বিনোদন দেওয়ার মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হতো এ প্রতিষ্ঠান। তখন থেকেই মানুষকে উজ্জীবিত এবং সচেতন করতে অবদান রাখছে। এখন মিডিয়া কনভারসেন্সের যুগ। টেলিভিশন যখন বেসরকারি পর্যায়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে তখন মানুষের তথ্য বিনোদন প্রাপ্তির সুযোগ বেড়ে গেছে। এতে আস্তে আস্তে অডিও মাধ্যম হিসেবে বেতার পিছিয়ে যেতে থাকে। শুধু বাংলাদেশে না বৈশ্বিকভাবেই রেডিওর পিছিয়ে পড়ার কারণ এটি। আরও একটি কারণ হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমের প্রসার। মানুষ যেকোনো কিছু খুব সহজে পেতে চায়। ইন্টারনেট সেই সুযোগ করে দেওয়ায় টেলিভিশন রেডিওর আবেদন কমছে। শ্রোতা কমে যাওয়ায় রেডিও সেট আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের কাছে রেডিও প্রাপ্তির সুযোগও কমে যায়। এখন এমন একটা অবস্থয় দাঁড়িয়েছে যে মোবাইল ছাড়া রেডিও শোনার কোনো সুযোগ নেই। রেডিওর প্রসার কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ এটি।

ঢাকা মেইল: ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগে রেডিও কতটা ভূমিকা পালন করতে পারছে?

এ এস এম জাহিদ: প্রযুক্তির প্রসার সত্ত্বেও বেতার এখনও প্রাসঙ্গিক। বেতারকে বাদ দিয়ে কোনো রাষ্ট্র কোনোদিন চলতে পারে না। কোনো না কোনোভাবে বেতার এক্সিস্ট করবেই। আবহাওয়া, সামরিক ক্ষেত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় ধরনের রেডিও যোগাযোগ প্রয়োজন হয়। যেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিদ্যুৎ দুর্লভ হয়ে পড়ে। সেসময় বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেলেও রেডিও কিন্তু ব্যাটারি দিয়ে কিংবা গ্যাসোলিন-পেট্রোল-ডিজেলের মাধ্যমে ট্রান্সমিটার চালু রাখা যায়। এটি অন্য মাধ্যমের ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। এ কারণেই বেতার এখনও টিকে আছে এবং থাকবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের কীভাবে কী করতে হবে? আমরা অডিওর পাশাপাশি ভিজুয়ালাইজেশনে যেতে চাচ্ছি। একদিকে অডিও থাকবে অন্যদিকে ভিডিও। এরইমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের অনুষ্ঠানগুলো প্রচার শুরু হয়েছে। ফেসবুক পেজ আছে, ইউটিউব চ্যানেল আছে। আমরা কনটেন্ট নির্মাণ করছি। সেগুলো অডিও এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যাচ্ছে। আমরা বড় ধরনের পোর্টাল নির্মাণ করতে যাচ্ছি। পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। দুই এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হবে। একটি ডেডিকেটেড নিউজ চ্যানেল শুরু করব। আশা করছি সফল হব। যদি নিউজ চ্যানেল তৈরি হয় তাহলে মোটিভেশনাল, এডুকেটেড চ্যানেলও করতে পারব। আপনারা জানেন বেতার বৈচিত্রপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম হয়। বিনোদনের কথাই বলি—চলচ্চিত্রে, শিল্পী তৈরিতে, সংস্কৃত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের ধরে রাখার ক্ষেত্রে বেতারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই ধারাবাহিকতা রাখতে চাই। মানুষকে মোটিভেট করতেও বেতারের অবদান রয়েছে। আপনারা জানেন বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেক ছিল। বেতার যেভাবে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করেছে। ওই জায়গা থেকে বেতারের মহাপরিচালক হিসেবে বলতে পারি জনসংখ্যার হার কমানোয় এক শতাংশ ভূমিকাও যদি থাকে সেটি বেতারের আছে। জনসংখ্যার আধিক্য কমানো, পারিবারিক সুখ শান্তি বজায় রাখায় বেতারের অবদান রয়েছে। 

asm-zahid


বিজ্ঞাপন


ঢাকা মেইল: রেডিওর আর্কাইভে ৬০ ৭০-৮০-৯০ দশকের দেশের বিখ্যাত ব্যক্তি ও শিল্পীদের সাক্ষাৎকার ও গান সংরক্ষিত ছিল। সেগুলো এখন কী অবস্থায় আছে?

এ এস এম জাহিদ: বাংলাদেশ বেতারের ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস এবং আর্কাইভ আছে। আর্কাইভটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আমরা গুরুত্বের সঙ্গে এটি সংরক্ষণ করি। আর্কাইভে প্রচুর গান রয়েছে যেগুলো প্রচার করা হয়। কখনও মন্ত্রণালয় থেকে বা অন্যান্য রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানেও যদি আমাদের কাছে চাওয়া হয় সেগুলো সরবরাহ করি। সবচেয়ে বড় কথা এগুলো আমরা সংরক্ষণ করে রেখেছি। আরও বিস্তৃতভাবে করা উচিত। কারণ এখানে অনেক স্বনামধন্য গায়ক-গায়িকার গান রয়েছে। আমার মনে হয় এমন কিছু বিশিষ্ট শিল্পীদের সৃষ্টিকর্ম বাংলাদেশ বেতারে সংরক্ষিত রয়েছে যা আর কোথাও নেই। সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা থেকে শুরু করে আব্বাসউদ্দীন, আব্দুল আলীম, ফরিদা পারভীনসহ সবার গান বেতারে পাবেন। 

ঢাকা মেইল: বিজ্ঞাপন তরঙ্গ, দুর্বার, দেশ আমার মাটি আমারসহ একাধিক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল বাংলাদেশ বেতারে। সেগুলো কী এখনও চলছে?

এ এস এম জাহিদ: সিগনেচার প্রোগ্রামের মধ্যে দুর্বার একটি। এর উপস্থাপক হাবিবুর রহমান জালালের কণ্ঠটা ইউনিক। আমার মনে আছে জালাল সাহেব কোনোদিন অনুপস্থিত থাকলে সেদিন দুর্বার ম্লান হয়ে যেত। একই কথা প্রযোজ্য শফি কামলের ক্ষেত্রে। এই অনুষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি মহানগর, দর্পনের মতো জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলো বেতারে চলছে। মানুষের এখন সময় খুব কম। তারা অল্প সময়ে অনেক বেশি তথ্য ও বিনোদন চাচ্ছে। আমরাও বিষয়টি মাথায় রেখে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে অনুষ্ঠানগুলোতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। 

ঢাকা মেইল: সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে রেডিওর এখন সামাজিক মাধ্যমে পেজ আছে। সেখানে অনুষ্ঠানগুলো প্রচার করা হয়। এটি শ্রোতাদের সংযুক্ত করতে কতটা সফল?

এ এস এম জাহিদ: ঢাকাসহ আমাদের ১৪টি আঞ্চলিক কেন্দ্র রয়েছে। আমরা যেহেতু টেলিভিশন না, অডিও মাধ্যম সেহেতু একটু দ্বিধায় ছিলাম। ভিডিও নিয়ে কখন শুরু করা উচিত, কনটেন্ট কেমন হওয়া উচিত— ভাবতে ভাবতে কালক্ষেপণ হয়েছে বলব না। অ্যাডজাস্ট করতে কিছুটা সময় লেগেছে। আমাদের প্রত্যেক কেন্দ্রে অসংখ্য পেজ রয়েছে। সেগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করছি। যেন চাইলেই ওয়ান ক্লিকে বেতারের সব কেন্দ্রে যেতে পারি। এজন্য আউটসোর্সিং মিলিয়ে আমাদের বড় একটি টিম কাজ করছে। বেতারের হাজারো শ্রোতা ক্লাব আছে। তাদের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ আছে। আগে যেমন চিঠিপত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ হতো এখন ইমেইল, ফোনের মাধ্যমে হয়। আমি এরকম চাচ্ছি যে একটি প্রোগ্রাম মানুষ একই সঙ্গে রেডিওতে শোনার পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও আঁকারে দেখতে পারবে। সেখানে টেক্সট ফরম্যাট থাকবে। অর্থাৎ একজন শ্রোতা যেন যেকোনো মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন। 

ddiji_jaahid_phaail_1754811575

ঢাকা মেইল: রেডিওর কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আপনার ভাবনা কী? বেতারের জনপ্রিয়তা ফিরিয়ে আনতে কী ধরনের পদক্ষেপের কথা ভাবছেন?

এ এস এম জাহিদ: আজকাল অনেকে বলে থাকেন রেডিও নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। অথচ শুধু বাংলাদেশ না বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে ব্যাঙের ছাতার মতো কমিউনিটি রেডিও স্টেশন গড়ে উঠেছে। আগে যোগাযোগের একটিমাত্র মাধ্যম ছিল। এখন অনেক রয়েছে। তিন-চারটি করে রুট রয়েছে। ধরুন আপনি ম্যানহাটনে আছেন। খুব তাড়া। সে ক্ষেত্রে কমিউনিটি রেডিওগুলো থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাবেন। আমরা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে এগুতে চাচ্ছি। কেননা আগামী তিন বছরের মধ্যে রেডিও ঠিকই হারিয়ে যাবে না কিন্তু এর ট্র্যাডিশনাল প্রক্রিয়া থাকবে না। ব্যক্তিজীবনে আমি জাপান রেডিও করপোরেশনের চাকরি করেছি। সে সময় ম্যানুয়ালি সবকিছু করতাম। আমার চাকরির শেষের দিকে সব কম্পিউটারাইজড হয়। বর্তমানে যিনি সেখানে কর্মরত কিছুদিন আগে তার সাথে দেখা হয়েছিল। তিনি বললেন, আমাদের সমস্ত কাজ এখন এআইয়ের মাধ্যমে করা হচ্ছে। আমরা শুধু সেগুলো সংশোধন ও প্রচার উপযোগী করি। যেহেতু জাপান প্রযুক্তির দিক থেকে অনেক এগিয়ে। ফলে যেটা সেখানে আজ হচ্ছে আমাদের এখানে পরে হতে পারে। ওই জায়গা থেকে আজ আমি যে কথাগুলো বলছি ২০২৭ সালে সেগুলো হয়তো প্রযোজ্য নাও হতে পারে। বাংলাদেশ বেতারে তালিকাভুক্ত শিল্পী সংখ্যা ৩৮০০০। অর্থাৎ এই ৩৮ হাজার শিল্পীর সঙ্গে ৩৮ হাজার পরিবার। সঙ্গে রয়েছে অন ডিমান্ড শিল্পী। তাদের সংখ্যা হাজার হাজার। ওই জায়গা থেকে বলা যায় বাংলাদেশ বেতার সংস্কৃতি ধারণ লালনের পাশাপাশি শিল্পীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। ট্যালেন্ট হান্টিংয়েও বাংলাদেশ বেতারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমাদের দেশে যে বড় বড় শিল্পী রয়েছেন অধিকাংশের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারবেন তাদের শুরুটা হয়েছে বেতারের মাধ্যমে।  

ঢাকা মেইল: বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রতিভা অন্বেষণের উদ্দেশ্যে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বেতারে এরকম আয়োজনের পরিকল্পনা আছে?

এ এস এম জাহিদ: আমাদের অ্যাক্সেসিবিলিটি দেশব্যাপী। যে কেউ খুব সহজে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন। কোনো ফী লাগে না। ফরম পূরণ করে গেলেই হয়। ওই জায়গা থেকে বলা যায় যে মানুষের অন্য কোথাও অ্যাক্সেস নাই তিনিও বেতারে এসে যুক্ত হতে পারেন। বেতার কখনোই যোগ্য কাউকে বাদ দেয় না। আমাদের তালিকাভূক্তির বিষয়টি কারও একক সিদ্ধান্তে হয় না। বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে হয়। ওই জায়গায় যোগ্যদের বাদ পড়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কোনো একটি বেসরকারি চ্যানেলের ট্যালেন্ট হান্টিংয়ের ক্ষেত্রে দেখুন। সেখানে অংশ নিতে যে ঝক্কি পোহাতে হয় বেতারে সেটার কোনো সুযোগই নেই। 

ঢাকা মেইল: বেতারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ নিয়ে কিছু ভাবছেন? 

এ এস এম জাহিদ: আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠান। চাইলেই নিয়মের বাইরে যেতে পারি না। তাছাড়া এ বিষয়গুলো তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে। সেখানে বেতারের  প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমাদের মাননীয় উপদেষ্টা ও সচিব মহোদয় সবসময় নতুন চিন্তা-ভাবনায় উৎসাহ দিচ্ছেন। এখন প্রযুক্তিগত নতুন ভাবনা চিন্তা মানেই এআই সম্পর্কিত। যদিও আমরা উন্নত দেশের মতো এগিয়ে যেতে পারিনি কিন্তু এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ চলছে। এরইমধ্যে আমাদের স্টুডিওগুলোতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ট্র্যাডিশনাল কাঠামো থেকে বেরিয়ে প্রযুক্তিবান্ধব কাঠামোতে নেওয়া হয়েছে। 

GK_1733148465

ঢাকা মেইল: অতীতে বেতারের মাধ্যমে কৃষকরা অনেক তথ্য পেতেন। এখনও কী পান? 

এ এস এম জাহিদ: কৃষিবিষয়ক প্রোগ্রাম আগেও ছিল এখনও আছে। একই দিনে কৃষি বিষয়ক একাধিক অনুষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া আমাদের ১৪ টি কেন্দ্রে নিজস্ব কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠান আছে। সেখানে নিয়মিত কৃষি বিষয়ক তথ্য সরবরাহ করা হয়। এরমধ্যে দেশ আমার মাটি আমার সিগনেচার প্রোগ্রাম। জনপ্রিয়তার শীর্ষে আমাদের যে প্রোগ্রামগুলো আছে তার মধ্যে অন্যতম। আমাদের ফোন-ইন-প্রোগ্রামও আছে। এগ্রিকালচার ইনফরমেশন সার্ভিসের সঙ্গে আমাদের একটা কলাবরেশন আছে। সেখান থেকে কাজ করছি। অন দ্য স্পট ডকুমেন্টারি করছি। এমনকি আমরা আলোচনামূলক অনুষ্ঠানেও সরাসরি কৃষকের সঙ্গে যুক্ত থাকি। যে কেউ চাইলেই যুক্ত হতে পারেন। রোজ সকাল ৬:৫৫ মিনিটে আজকের কৃষি নামে একটি অনুষ্ঠান হয়। সেখানে একজন কৃষকের ওই মৌসুমে এবং ওই দিনে কী কী করণীয়, বাজারদর থেকে শুরু করে সব বিষয়ে আলোচনা হয়। অর্থাৎ তিনি প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে মাঠে যেতে পারেন। এখন অন দ্য স্পটে গিয়ে সেখানে ছোট ছোট রিপোর্টিং করে এনে প্রচার করছি। এগুলো ব্যাপক ভিত্তিতে করার উদ্দেশ্যে পোর্টাল তৈরি করা হচ্ছে। আশা করছি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমাদের নতুন পোর্টাল দাঁড়াবে যেখানে কৃষিসহ বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য সরবরাহ করা যাবে।

ঢাকা মেইল: আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিগর সরকারের সময়কার কী কী অনিয়ম, অবক্ষয় বেতারে চোখে পড়েছে? 

এ এস এম জাহিদ: বাক স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সত্যি কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। গত ১৭ বছরে এটার দারুণভাবে ঘাটতি ছিল। বেতারের জনপ্রিয়তা কমার ক্ষেত্রে এটি একটি কারণ। কোনো তথ্যের সত্যতা যদি না থাকে, সেটার নিশ্চয়তা নিয়ে যদি সন্দেহ হয় তাহলে আস্থা থাকবে না। মানুষ আগে বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা শুনত। এর কারণ অথেন্টিসিটি। সংবাদমাধ্যমগুলোকে প্রতিদিন সংবাদ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হয়। কিন্তু আগে ছিল পূর্বনির্ধারিত। বেঁধে দেওয়া বিষয়গুলোর বাইরে যাওয়া যেত না। জনগণ যেগুলো শুনতে চায় না সেগুলো শোনানো হতো। সাফল্য মহাপরিকল্পনা ফলাও করে প্রচার করা হতো। কিন্তু মানুষের তো এখন তথ্যপ্রাপ্তির হরেক রকম সুযোগ আছে। যে কারণে সহজেই তারা ওই তথ্যের পার্থক্যগুলো ধরতে পারত। এরকম পরিস্থিতি এখন আর নেই। পাশাপাশি কনটেন্টের বিষয়বস্তুর পরিবর্তন এনেছি। আমরা এখন অবাধে সংবাদ তৈরি করতে পারছি। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং সামাজিক মাধ্যমে আমাদের বিস্তারটা আরেকটু বিশাল পরিসরে করতে পারলে অতীতের ঘাটতি পূরণ হবে। আমরা সেটা মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছি। এখন অবাধ ও মুক্তভাবে যেভাবে কাজ করছি। আগামীতে এটা ধরে রাখার চেষ্টা করব।

আরআর
  

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর