কোরবানির ঈদের সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা ‘তাণ্ডব’। এর মূল কারণ দুটি। প্রথমত, শাকিব খান এ সিনেমার প্রধান চরিত্র। দ্বিতীয়ত ছবির পরিচালক মেধাবী নির্মাতা রায়হান রাফী। দুজনের সম্মিলনে দারুণ কিছু হবে এরকম প্রত্যাশা ছিল সবার। দুর্দান্ত গল্প, নিখুঁত মেকিং, ধুন্ধুমার অ্যাকশন আর দারুণ সব টুইস্টে ভরপুর হবে ‘তাণ্ডব’ — টিজার দেখেও এমন প্রত্যাশা অনেকে করেছিলেন। সে প্রত্যাশা পূরণ হলো কতটুকু?
শাকিবের স্টারডমের সঙ্গে নতুন একটি গল্প, স্বাভাবিকভাবেই দর্শকের হৃদয়ে সাড়া ফেলেছে। পাশাপাশি দুর্দান্ত সব অ্যাকশন, প্রথমবারের মতো সিনেমায় সাবিলা নূর, জয়া আহসানসহ বাকি শিল্পীদের অভিনয় এ সিনেমাকে বক্স অফিসে রাজত্ব করার উপযুক্ত করে তুলেছে। সেই সঙ্গে সিয়াম আহমেদ ও আফরান নিশোর দুর্দান্ত ক্যামিও ‘তাণ্ডব’ কে আরও স্পাইসি করে তুলেছে। শাকিবও নতুন একটি চরিত্রে প্রত্যাশার ষোলো আনা প্রতিদান দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন

তবুও সিনেমাটি দেখার পর মনে হলো, কোথায় যেন একটু ফাঁক রয়ে গেল! হল থেকে বের হওয়ার পর মনেই হলো না দারুণ একটি সিনেমা দেখলাম। কারণ খুঁজতে গিয়ে মেকিংয়ের কিছু দুর্বলতার কথাই মাথায় আসছে শুধু।
দুর্বলতা নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় তাণ্ডবের স্টোরিটেলিংয়ের কথা। তেমন আকর্ষণীয় মনে হয়নি। প্লটও যে খুব শক্তিশালী তা-ও বলা যায় না। যা আছে ঠিকভাবে সাজানো হয়নি। শুরু থেকেই সিনেমার গল্প বলাতে তাড়াহুড়ো লক্ষ করা গেছে। চরিত্রগুলো দেখে মনে হয়েছে আচমকাই একেকটি এসে হাজির হচ্ছে। চরিত্র গঠনে পরিচালক খুব বেশি সময় দেননি।

বিজ্ঞাপন
স্বাধীন চরিত্রে শাকিবকে দুই টাইমলাইনে অভিনয় করতে দেখা গেছে। যারে মাঝে ছিল ৮ বছরের ব্যবধান। তবে পর্দায় ফুটে ওঠেনি। দুই টাইমলাইনে শাকিবকে একইরকম লুকে দেখা গেছে। যা হতাশই করেছে বলা যায়। তবে শাকিবের বিপরীতে প্রথম সিনেমা হিসেবে সাবিলার অভিনয়ে তেমন কোনো ত্রুটি চোখে পড়েনি, বরং তিনি নিজের স্বভাবসুলভ অভিনয়ই করেছেন।
সিনেমা দেখে মনে হয়েছে পুরো গল্পটি শাকিবের স্টারডমকে কেন্দ্র করে। তার ওপর যত নজর দেওয়া হএয়ছে এর ন্যারেটিভ বা পার্শ্ব চরিত্রগুলোর ওপর ততটা দেওয়া হয়নি বলে মনে হয়েছে। এরপরও জয়া আহসান, ডা. এজাজ, শহিদুজ্জামান সেলিমের শক্তিশালী অভিনয় এসব খামতি পুষিয়ে দিয়েছে। তবে প্রথমার্ধ পানসে হলেও বিরতির পর তা বেশ পুষিয়ে গেছে। আরমান মনসুর চরিত্রে সিয়াম এবং শেষে সুড়ঙ্গ মাসুদরূপে নিশোর অভিনয় ছিল দুর্দান্ত যা দর্শক অনেকদিন মনে রাখবেন। নিশোকে স্ক্রিনে দেখার পর হলে দর্শক যেভাবে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন তা ছিল অকল্পনীয়।
_20250614_152732730.jpg)
সব মিলিয়ে বেশ কিছু দুর্বলতা থাকলেও বাংলাদেশের বাস্তবতায় ‘তাণ্ডব’ উপভোগ করার মতোই একটি সিনেমা। রায়হান রাফীর সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সে ‘তাণ্ডব-২’ বা পরের সিনেমাগুলো এ দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে আরও বেশি আকর্ষণীয় এবং ইম্প্যাক্টফুল হবে তা আশা করাই যায়।

