উপস্থাপকের দক্ষতায় একটি অনুষ্ঠান সর্বজনীন হয়ে ওঠে। সঞ্চালনার যাদুতে প্রচণ্ড কোলাহলেও নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। উপস্থাপকও চান নিজের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল হতে। আজকাল ভিন্ন চিত্রও লক্ষণীয়। কিছু অনুষ্ঠান দেখে মনে হয় অবান্তর ও কুরুচিকর প্রশ্ন করাই যেন উপস্থাপকের কাজ। এতে যারপরনাই বিরক্ত নেটিজেনরা। বিষয়টিকে অপরাধ বলে মনে করেন দেশের জনপ্রিয় উপস্থাপক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাস।
ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘আমরা যে সময় উপস্থাপনা শুরু করেছিলাম তখন ছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার। তার আগে ছিলেন ফজলে লোহানী স্যার। উপস্থাপনার ক্ষেত্রে তিনি আমার আইডল। পরবর্তীতে আনিস সাহেব (আনিসুল হক), হানিফ সংকেত সাহেব ছিলেন। তাদের দেখে উপস্থাপনার প্রতি আমাদের আগ্রহ, ভালোবাসা তৈরি। এরপর নিজেদের মতো স্টাইল তৈরির চেষ্টা করেছি। উপস্থাপনা যে শিল্প এটা বোঝানোর অবস্থা একসময় ছিল না। উপস্থাপনা একটি অনুষ্ঠানের নিউক্লিয়াস— ওই জায়গা আমরা তৈরি করেছি।’
বিজ্ঞাপন
দেবাশীষ মনে করছেন অবান্তর ও কুরুচিপূর্ণ প্রশ্নের দায় শুধু উপস্থাপকদের না। তার কথায়, ‘বর্তমানে সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে কিংবা যে কারণেই যারা অতিথিদের অবান্তর ও কুরুচিপূর্ণ প্রশ্ন করছেন তারা ক্রাইম করছেন। এটা অবশ্যই ক্রাইম। তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত। তবে দোষ পুরোপুরি উপস্থাপকদের না। যারা তাদের নিয়ে এসব সো কল্ড অনুষ্ঠান বানাচ্ছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত। কারণ তারা রীতিমতো অপরাধমূলক কাজ করছেন। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।’
এ নির্মাতা ও উপস্থাপক বলেন, ‘আমরা সবসময় অবান্তর প্রশ্ন এড়িয়ে গেছি। কেননা অতিথিকে অপদস্থ করার অধিকার আমার নেই। তিনি আমার ডাকে এসেছেন। তাকে যত্ন-আত্তি করা আমার কাজ।’ পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে অনুষ্ঠানের আপত্তিকর অংশগুলো ছড়িয়ে পড়ায় কোমলমতিদের চোখেও পড়ছে। যা তাদের ওপর কুপ্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন দেবাশীষ বিশ্বাস।
উপস্থাপক হিসেবে চিত্রনায়িকা পূর্ণিমাও বেশ জনপ্রিয়। নিয়মিত সঞ্চালনায় দেখা যায় তাকে। তিনি বলেন, ‘আজকাল যারা উপস্থাপনার নামে এরকম কুরুচিপূর্ণ প্রশ্ন করেন তাদের নিয়ে কী বলব বুঝতে পারছি না। তবে শুনেছি সম্প্রতি এটা নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আমি অ্যাপ্রিশিয়েট করছি।’
এরপর বলেন, ‘যেসব অনুষ্ঠানে এ ধরণের অবান্তর প্রশ্ন করা হয় আমি মনে করি ওই উপস্থাপক ও অতিথিদের সতর্ক করা উচিত। সামাজিক মাধ্যমে যতটুকু চোখে পড়েছে আমি এই অনুষ্ঠানগুলোর উপস্থাপকদের চিনি না। পাশাপাশি সেখানে অতিথি হয়ে যারা যান তাদেরও চিনি না। তাই এ নিয়ে বেশিকিছু বলারও দেখছি না।’
বিজ্ঞাপন
অভিনেত্রীর কথায়, ‘এমন যদি হতো আমার পরিচিত কেউ, ভাই-বোন, বন্ধু কিংবা যাদের সঙ্গে আমি কাজ করেছি তাদের কেউ অতিথি হতো তবে আমি সতর্ক করতাম এসব অনুষ্ঠান সম্পর্কে। কিন্তু যেহেতু তাদের কাউকে আমি চিনি না অতএব আর কিছু বলতে চাইছি না।’
এ সময়ের জনপ্রিয় উপস্থাপক মৌসুমী মৌ। দেবাশীষ বিশ্বাসের মতো তিনিও উপস্থাপকদের পাশাপাশি আয়োকজকদের দায়ী করে বললেন, ‘আমি মনে করি এটা শুধু উপস্থাপকের দায় না। অনুষ্ঠানটির সঙ্গে প্রোগ্রাম প্রডিউসারসহ আরও যারা জড়িত আছেন সবার ওপর দায় বর্তায়। সেইসঙ্গে অনুষ্ঠানটি যে চ্যানেলের জন্য বানানো হচ্ছে ওই চ্যানেলও দায় এড়াতে পারে না। আমি মনে করি অনুষ্ঠানে কোন শব্দ ব্যবহার করা যাবে এবং কোনটি যাবে না বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত।’

