অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন অভিনয়ের পাশাপাশি সরব সামাজিকমাধ্যমেও। সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গিত নিয়ে নিজের মন্তব্য তুলে ধরেন। এবার সমাজে প্রচলিত ভয়ের সংস্কৃতি বিশেষ করে ধর্মীয় গোষ্ঠী বা চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
আজ বুধবার (২৮ মে) অভিনেত্রীর ফেসবুকে ‘জুজুর ভয়’ শিরোনামে একটি পোস্টে দিয়েছেন। ওই পোস্টের তিনি লিখেছেন, “যতদিন মনে পড়ে আমরা সবসময় এক ধরনের অদৃশ্য ভয়ের মধ্যে বেঁচে এসেছি। কোনো ব্যক্তির ভয় না। বরং একটি ব্যবস্থার ভয়, একটি ছায়ার ভয়। আমাদের বলা হতো,‘জোরে কথা বলো না, হুজুররা শুনে ফেলবে। ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন কোরো না হুজুররা ছেড়ে দেবে না। এভাবে পোশাক পরো না। এভাবে চলাফেরা কোরো না, এভাবে ভাবো না।”

অভিনেত্রী বাঁধন যোগ করেছেন, ‘২০১৮ সালে আমি আমার মেয়ের অভিভাবকত্বের সম্পূর্ণ অধিকার পাই। এ দেশে যা খুবই বিরল এক জয়। তখনও শুনতে হয়েছে হুজুররা তোমার পেছনে লাগবে। আমি সত্যি ভয় পেয়েছিলাম। ঘরের ভিতরেই ছিলাম। কিন্তু বেঁচে ছিলাম।’
বিজ্ঞাপন
এখানেই শেষ না তিনি আরও লিখেছেন, ‘২০২১ সালে আমি এক চলচ্চিত্রে কুইয়ার চরিত্রে (সমকামী) অভিনয় করি। ওই সিনেমার গল্প এক জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে যায়। তখন আমাকে বলা হয়েছিল এবার আমি শেষ। আমি ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছিলাম, পালানোর কথা ভাবছিলাম। কিন্তু সেবারও আমি থেকে গিয়েছিলাম। বেঁচে গিয়েছিলাম।’
অভিনেত্রী বলেন, ‘২০২৪ সালে জুলাই হত্যার বিচার চেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলাম। ‘জুলাই বিপ্লব’-এ ছাত্রদের পাশে ছিলাম। হুজুরদেরও পাশে ছিলাম। আন্দোলনের সময় জিন্স আর টি-শার্ট পরা অবস্থায় পরিচিত কেউ দেখে ফেলবে ভেবে ভয় পাচ্ছিলাম। তবুও দাঁড়িয়েছিলাম। এবারও বেঁচে গেলাম।’

২০২৫ সালে আমি প্রকাশ্যে বললাম,“আমি জামায়াত বা কোনো চরমপন্থী দলকে ক্ষমতায় চাই না। আর জানো কী হলো? আমি এখনও বেঁচে আছি। মনের মধ্যে সত্যি ভয় ছিল কিন্তু আমার কণ্ঠস্বরও সত্যি ছিল। আমরা একটা ‘জুজুর ভয়’ বানিয়ে ফেলেছি। বিষয়টা এমনে যারা প্রশ্ন করবে তারা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আমি প্রশ্ন করেছি। আমি বিরোধিতা করেছি। আমি অসম্মতি জানিয়েছি। তবু এখনও বেঁচে আছি।’
দেশপ্রেম জন্মগত নয়, সময়ের সঙ্গে গড়ে ওঠে: বাঁধন
বাঁধান ওই পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘আমি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি হুজুররাও মানুষ। তারা এ দেশের নাগরিক। তাদেরও অধিকার আছে। জনসমাবেশ করার অধিকার আছে। মত প্রকাশের অধিকার আছে। কিন্তু অন্যের কণ্ঠরোধ করার অধিকার কারও নেই। অন্যের মানবাধিকার বা রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার কারও অধিকার নেই।’

সবেশেষে তিনি লেখেন, ‘আমি তাদের (হুজুর) শৃঙ্খলা এবং নেতৃত্ব গঠনের পদ্ধতিকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু নারীদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমি কখনও একমত হতে পারব না। মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকাকে আমি কখনও ক্ষমা করতে পারব না। কিছু সত্যকে ধোঁয়াটে করা যায় না।
ইএইচ/

