২০২৫ সালের ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসব যেন পর্দায় তুলে ধরেছে বর্তমান বিশ্বের জটিল বাস্তবতা। ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব, যাকে অনেকেই ফ্রেঞ্চ উপকূলের রৌদ্রজ্বল বিনোদনের জায়গা মনে করেন, এবারে রূপ নিয়েছে এক সামাজিক ও রাজনৈতিক চেতনার শক্তিশালী মঞ্চে।
অলিভার লাক্স পরিচালিত মরক্কোর চলচ্চিত্র ‘সিরাত’ এবং মার্কিন নির্মাতা অ্যারি অ্যাস্টার-এর রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র ‘এডিংটন’, এই দুটি ছবি উৎসবজুড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যুদ্ধ, প্রযুক্তির প্রভাব, রাজনৈতিক বিভাজন ও বাস্তবতা বিকৃতির মতো বিষয় নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রগুলো শুধু সিনেমাপ্রেমী নয়, বরং আন্তর্জাতিক সমালোচকদের মনোযোগও কেড়ে নিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
‘সিরাত’: নৃত্য উৎসব থেকে যুদ্ধ-পরবর্তী বিভীষিকায় যাত্রা
স্পেনীয় অভিনেতা সার্হি লোপেজ ও ব্রুনো নুনিয়েজ অভিনীত ‘সিরাত’ ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে এক বাবা ও ছেলের মরুভূমির মধ্য দিয়ে যাত্রা, যেখানে তারা এক ধরনের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে জীবনের অর্থ খুঁজে ফেরে। ছবির আবহে ম্যাড ম্যাক্স ও দ্য ওয়েজেস অব ফিয়ার-এর ছায়া থাকলেও, পরিচালক অলিভার লাক্স এটিকে সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক টানাপোড়েনের প্রতীক হিসেবেই উপস্থাপন করেছেন।
কান উৎসবে যোগ দিয়ে পরিচালক লাক্স বলেন, ‘আমরা এই সময়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে চেয়েছি। এই ভয়াবহ বাস্তবতার অভিজ্ঞতা চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই বলতে চেয়েছি।’
আরও পড়ুন—
বিজ্ঞাপন

‘এডিংটন’: রাজনীতি, মাস্ক বাধ্যবাধকতা আর সামাজিক বিভ্রান্তির প্রতিচ্ছবি
অন্যদিকে অ্যারি অ্যাস্টার-এর ‘এডিংটন’ ছবিতে আমেরিকার একটি ছোট শহরের প্রেক্ষাপটে ফুটে উঠেছে বড় রাজনৈতিক বাস্তবতা। জোয়াকিন ফিনিক্স অভিনীত রক্ষণশীল শেরিফ জো ক্রস, উদারপন্থী বর্তমান মেয়র টেড গার্সিয়া (পেদ্রো পাস্কাল)-র বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, যেখানে মাস্ক পরিধানে বাধ্যবাধকতা, প্রযুক্তি এবং তথ্য বিকৃতির বিষয়গুলো মুখ্য হয়ে ওঠে। ছবিটি গভীরভাবে দেখায় কীভাবে উভয় পক্ষই সমাজের চেয়ে আরও শক্তিশালী এক প্রভাব—সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ডিজিটাল বাস্তবতা—এর অধীন।
‘আমি এই ছবি লিখেছি এক ভয় আর উদ্বেগ থেকে। আজকের পৃথিবীতে কেউই আর নিশ্চিত নয় কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা। এই বিভ্রান্তিই ছবির মূল প্রতিপাদ্য,’ বলেন অ্যাস্টার।
আরও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের চলচ্চিত্র
এছাড়াও টম ক্রুজ অভিনীত ‘মিশন: ইম্পসিবল– ফাইনাল অ্যাওয়েকেনিং’ ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর বিপরীতে মানুষের লড়াই। রাউল পেক-এর ‘অরওয়েল: ২ + ২ = ৫’ চলচ্চিত্রে ফুটে উঠেছে জর্জ অরওয়েলের রাজনৈতিক চিন্তার আধুনিক রূপ।
আরও পড়ুন—

উৎসবে বাস্তবতার ছাপ
এবারের কান উৎসব তাই শুধু তারকাখচিত জাঁকজমকেই নয়, বরং বিশ্ব রাজনীতি, প্রযুক্তি ও সামাজিক বাস্তবতার ওপর নির্মাতাদের গভীর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকছে।
সমালোচকরা বলছেন, এই বছরের কানের বিশেষত্ব হলো তার সময় সচেতনতা। যেখানে বহু সময় চলচ্চিত্রকে বাস্তবতা থেকে পালাবার একটি মাধ্যম হিসেবে দেখা হয়, সেখানে এবারের উৎসব যেন বলছে— বাস্তবতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নয়, বরং তার মুখোমুখি দাঁড়ানোর সময় এখনই।
//

