অশ্লীলতার অভিযোগ এনে গেল বছর ‘সাহস’ সিনেমাটিকে প্রদর্শনের অযোগ্য বলে জানায় সেন্সরবোর্ড। এমন আপত্তির মুখে পড়ে নির্মাতা সাজ্জাদ খান বাধ্য হয়ে কাঁচি চালান নিজের প্রথম নির্মাণে। তারপর মন গলে সেন্সরবোর্ড সদস্যদের। সিনেমাটি প্রদর্শনের অনুমতি দেন তারা। তবে ছাড়পত্র পেয়েও বড় পর্দায় মুক্তির সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেন এ নির্মাতা। মনস্থির করেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখাবেন এই ছবি।
আমাদের সেন্সরবোর্ড আসলে মোড়লগিরিতে অভ্যস্ত। একজন নির্মাতাকে স্বাধীনতা দেওয়ার বদলে হাত-পা বেঁধে রাখা হয়—সাজ্জাদ খান, চলচ্চিত্র পরিচালক
ওটিটি মাধ্যমে মুক্তি প্রসঙ্গে সাজ্জাদ বলেন, ‘আমি সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছিলাম। চাইলেই প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দিতে পারতাম। ইচ্ছা করেই ওটিটিতে মুক্তি দিচ্ছি, যেন বিশ্বের যেকোনো স্থানে বসে সিনেমাটি দেখা যায়। সেদিক থেকে আমার উত্তেজনাটা বলতে পারেন আগের চেয়ে বেশি।’
ছাড়পত্র দিতে সেন্সরবোর্ডের বেঁকে বসার কারণ কী— জানতে চাইলে এ নির্মাতা বলেন, ‘তারা কিছু দৃশ্যে অশ্লীলতার অভিযোগ এনেছিলেন। পরে দৃশ্যগুলো সংশোধন করলে তাদের অনুমতি মেলে।’
সংশোধনের পর সেন্সর ছাড়পত্র মিললেও তাদের ছেড়ে কথা বললেন না সাজ্জাদ। ‘সাহসে’র ওপর অবিচার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার সিনেমায় মাত্র একবার রক্তপাত দেখিয়েছি। তারপরও তারা আটকে দিয়েছিলেন। অথচ আপনি ‘আম্মাজান’ সিনেমাটি দেখেন। এটি ছাড়া আরও কিছু সিনেমা আছে যেগুলোকে একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা যেতে পারে। কিন্তু সিনেমাগুলোকে তারা ঠিকই প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছেন। তাহলে আমার সঙ্গে এমন করলেন কেন তারা?”
বিজ্ঞাপন
সাজ্জাদ আরও বলেন, ‘আমাদের সেন্সরবোর্ড আসলে মোড়লগিরিতে অভ্যস্ত। একজন নির্মাতাকে স্বাধীনতা দেওয়ার বদলে হাত-পা বেঁধে রাখা হয়। কিন্তু তাদের বোঝা উচিত, স্বাধীনতা ছাড়া শিল্প হয় না।’
সাজ্জাদ মনে করেন, সেন্সরবোর্ডের সদস্যরা অনভিজ্ঞ। এই সময়ের সিনেমা সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তার ভাষ্য, ‘যারা বর্তমান সময়ের সিনেমা বোঝেন না তারাই সেন্সরবোর্ডের সদস্য। একজন সরকারি চাকুরিজীবী কতটা সিনেমার জ্ঞান রাখেন? অথচ তিনি হয়েছেন সেখানকার সদস্য। আবার এমন অনেকে আছেন জীবনে মাত্র একটি সিনেমা বানিয়েছেন, কিন্তু তিনি ক্ষমতা পেয়েছেন সিনেমার প্রদর্শনযোগ্যতা নির্ধারণের।’
সিনেমার নামটি নিয়েও চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা। নেটিজেনরা বলছেন, নামের মধ্যে বিশেষ বার্তা আছে, যা সমাজের জন্য ইতিবাচক।
নামকরণের স্বার্থকতা প্রসঙ্গে সাজ্জাদ বলেন, ‘এটি একটি ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। আমি বোঝাতে চেয়েছি, অন্যায়ের শিকার হয়ে চুপ করে থাকলে চলবে না। বিচার না পেলেও লড়ে যেতে হবে। তবেই আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। আর এজন্য সাহস প্রয়োজন।’
চলচ্চিত্রটিতে যারা অভিনয় করেছেন তাদের অধিকাংশই বাগেরহাটের স্থানীয় একটি থিয়েটারের সদস্য। প্রথিতযশা অভিনয়শিল্পীদের না নিয়ে মফস্বলের একটি থিয়েটার দলের ওপর নির্ভরশীলতার কারণ কী — উত্তরে সাজ্জাদ বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম, সিনেমাটিতে কৃত্রিমতার ছোঁয়া না রাখতে। সেকারণে তাদের নিয়েছি। কেননা, তারা বাগেরহাটের ভাষা ও জীবন যাপনের সঙ্গে পুরোপুরি অভ্যস্ত।’
সাজ্জাদ মনে করেন, প্রথিতযশা অভিনয়শিল্পীদের টেক্কা দেওয়ার মতো অভিনয় করেছেন অভিনয়শিল্পীরা। সিনেমাটি দেখার পর দর্শক সেটা অনুধাবন করতে পারবেন। এ সময় তিনি ‘সাহস’ দেখার পর গঠনমূলক সমালোচনা করতে দর্শকের প্রতি আহ্বান জানান।
আরআর/আরএসও

