আগামীকাল (আজ বুধবার) বিকেল ৫ টায় আসছে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’- সিজন ৫-এর ফার্স্টলুক— গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যমে কাজল আরেফিন অমি ঘোষণাটি দিতেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন দর্শক। তাদের জমিয়ে রাখা উন্মাদনা মাথাচাড়া দেয় মন্তব্যের ঘরে। বিষয়টি উপভোগ করছেন অমি। সেইসঙ্গে ঢাকা মেইলের কাছে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নিয়ে মনের আগল খুলেছেন এ নির্মাতা।
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিজন ৫-এর ফার্স্টলুকের ঘোষণা দিতেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন দর্শক। কেমন লাগছে?
বিজ্ঞাপন
খুবই উপভোগ করছি। দেশে বর্তমানে কনটেন্টের যে অবস্থা সেই জায়গা থেকে ব্যাচেলর পয়েন্ট নিয়ে দর্শকদের যে পরিমাণ আগ্রহ দেখি সেটা আমাকে উৎসাহ দেয়। চিন্তাভাবনা করে কাজ করতে সাহায্য করে।

কবে আসছে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিজন ৫?
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিজন ফাইভ একটু আয়োজন করে করার চেষ্টা করছি। প্রত্যেক ডিপার্টমেন্ট নিয়ে কাজ করছি। যাতে কনটেন্টটা দেখলে পরিপূর্ণতা পাওয়া যায়। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো মেইনটেইন করার চেষ্টা করছি। সাউন্ড, কালার গ্রেডিং, মিউজিক, বিজিএম প্রত্যেক ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা এফোর্ট দিতে হচ্ছে। টেলিভিশন ধারাবাহিকে যেটা ইচ্ছা হলেও সাধ্য থাকত না। একটু পলিশ করে আনার চেষ্টা করছি। সেজন্য সময় বেশি লাগছে। কবে থেকে প্রচারে আসব— আর কিছু সময় হাতে নিয়ে, কিছু কাজ করে দর্শকদের বলব।
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিজন ৫-এর পরিকল্পনা কি আগে থেকেই ছিল নাকি দর্শকের আগ্রহের ফসল?
যখন ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিজন ওয়ান করি। তখন জানতাম না সিজন বিষয়টা কী। বাংলাদেশে সিজন যে হয় এটা হয়তো কেউ জানতাম না। দেশের বাইরে সিজন হয় শুধু এটুকু জানতাম। সময় আমাকে সিজন বোঝালো। ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিজন টু আনলাম। এরপর কোভিড শুরু হলে সিজন টু বন্ধ হয়ে গেল। তারপর সিজন থ্রি করলাম। থ্রিতে একটা জায়গায় থেমে গিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল গল্পটা এখানে শেষ করা উচিত। তারপর যখন দর্শকদের আগ্রহ দেখলাম তখন সিজন ফোর নিয়ে ভাবি। সিজন ফোর আনার পর মনে হলো গল্পটা এবার শেষ করা উচিত। বন্ধ করে দিলাম। এরপর গত আড়াই বছর ধরে দর্শকের যে পরিমাণ আগ্রহ! আমি যা পোস্ট করি তাতেই সবার এক প্রশ্ন, ভাই সিজন ফাইভ কবে আসবে? এটা আমাকে খুব পীড়া দিত। মানুষ এত করে চাচ্ছে আমি কেন দিচ্ছি না! কিন্তু একজন নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে নিজেকে যখন প্রশ্ন করতাম কেন দিচ্ছি না— তখন মনে অনেক প্রশ্ন আসত। সেগুলো দর্শকদের বলতে পারতাম না। কারণ প্রতিনিয়ত মানুষের রুচি বদলাচ্ছে। একজন লেখক ও পরিচালক হিসেবে আমারও রুচিবোধের বদল হচ্ছে। আমার মনে হয়েছে— গল্পটা এভাবে বলতে চাই, এই জায়গায় গিয়ে শুট করতে চাই, এই সংলাপটা দিতে চাই। বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করেছি। করতে করতে খেয়াল করলাম লম্বা সময় চলে গেছে। তারপরও দর্শক আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন এবং ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ -এর পরিসরও অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। এরপর অনেক বাধা পেরিয়ে আজ আমরা এই জায়গায়। সিজন ফাইভ নিয়ে কাজ করছি।
বিজ্ঞাপন

আপনার অন্য কাজের পোস্টেও দর্শক ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিজন ৫-এর কথা জিজ্ঞেস করেন। কেমন লাগে?
অবশ্যই ভালো লাগে। সঙ্গে চাপও অনুভব করি। কারণ যখন দেখি দর্শক একটি কাজ এতো ভালোবাসেন। এতো করে চাচ্ছেন। আমি একটা পোস্ট করেছি এক ঘণ্টাও হয়নি। ৫০ হাজারের বেশি রিয়্যাক্ট পড়েছে। কয়েক হাজার কমেন্ট এসেছে। এতো হাজার-হাজার, লাখ-লাখ মানুষ দেখতে চাচ্ছেন তাদের ঠিকঠাক জিনিসটা দেখাতে হবে। সেজন্য নিজেরও প্রস্তুতি প্রয়োজন হয়। মুলত এসব কারণেই ব্যাচেলর পয়েন্ট ফাইভের জন্য এতো সময় নেওয়া।
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিজন ৫ নিয়ে কী কী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে?
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নিয়ে অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে করতে সিজন ওয়ান থেকে এ পর্যন্ত এসেছি। সিজন ফাইভের একটি এপিসোড আর সিজন ওয়ানের একটি এপিসোড দেখলে বুঝতে পারবেন কীভাবে একটি শিশু আস্তে আস্তে হাঁটা, কথা বলা, দৌড়াতে শেখে। একটি ছোট জিনিস কীভাবে বড় হয়— বুঝতে পারবেন। এই বড় হওয়ার পেছনে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী, সাপোর্ট, সহযোগিতা থাকে। আবার কিছু মানুষের অসততা, প্রতিবন্ধকতা থাকে। সেগুলো উল্লেখ করতে চাই না। তবে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নিয়ে যদি কখনও ডকুমেন্টরি বানানো হয় তখন বিষয়গুলো আসবে। মানুষ বুঝতে পারবে একটা ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ -এর পেছনে লেখক ও পরিচালক হিসেবে কী পরিমাণ কষ্ট, ত্যাগ, সময় দিয়েছি। দেখে মনে হতে পারে একটা নাটক-ই তো বানিয়ে ফেলে। বিষয়টা আসলে তা না। এটা মানুষের ইমোশন। সেই ইমোশনকে মূল্যায়ন করে আমি আমার ইমোশনকে ত্যাগ করে হলেও ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’কে মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ২০১৭ সালে প্রথম শুটিং শুরু করি। ২০১৮ সাল থেকে প্রচারে আসে। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ মানুষের মনে জায়গা করে আছে। সিজন ফাইভটা এমনভাবে করতে চাই যে আমি মারা গেলেও মানুষ বলে আজ ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিজন ফাইভের ডিরেক্টর মারা গেছেন বা ব্যাচেলার পয়েন্টের ডিটেক্টর মারা গেছেন। ওই ইমোশন দিয়েই এবার ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ করেছি।

‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এর ভাবনা কীভাবে মাথায় এসেছিল?
আমি পাড়া মহল্লায় বেড়ে ওঠা ছেলে। নিজে কখনও ব্যাচেলর থাকিনি। তবে ব্যাচেলর বাসায় অনেক আড্ডা দিয়েছি। আমার অনেক ভাই বেরাদার, বন্ধু-বান্ধব ব্যাচেলর ছিল। ওদের সাথে বহু সময় কাটাতাম। নিজের বাসায় আরামে এসির নিচে ঘুমাতে আমার ভালো লাগত না। ওদের বাসায় ফ্লোরিং বেডে থাকতে ভালো লাগত। ওদের লাইফ উপভোগ করতাম এবং লক্ষ্য করতাম। ওই অবজারভেশন থেকে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ গল্পের বেড়ে ওঠা। দর্শকদের ছুঁয়ে যাবে কি না এটা তো কেউ বলতে পারে না। তবে আমি সততা দিয়ে কাজ করেছি। সেটা দর্শকদের ভালো লেগে গেছে।
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ সিজন ৫-এ রোকেয়াকে দেখা যাবে?
রোকেয়াকে তো সামনে আনতেই হবে। তবে কখন কোন পর্বে আনব জানি না।

আরেফিন-নেহালকে দেখা যাবে?
আরেফিন-নেহাল ব্যাচেলর পয়েন্টের অন্যতম দুটি চরিত্র। ধারাবাহিকটি যতদিন থাকবে নেহাল-আরেফিন ততদিন থাকবে। গল্পের প্রয়োজনে ওরা অভিনয়ে আসতে পারে। আবার নাও পারে। তবে ব্যাচেলরের কাবিলা, হাবু, শিমুল, পাশা, শুভদের জীবনে নেহাল ও আরিফিনের ভুমিকা আছে৷ সেটা তারা ভুলবে না।
সিনেমার কাজ শুরু করবেন কবে?
সিনেমার কাজ শুরু করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু পরে মনে হলো আরও একটু সময় নেই। আরও একটু প্রস্তুতি দরকার। কেননা মাঠে বা যুদ্ধে নামার আগে যত বেশি প্রস্তুতি নেওয়া যায় খেলাটা তত বেশি জমে। আমি বিশ্বাস করি যত বেশি প্রস্তুতি নামব সিনেমাটা তত বেশি ভালো হবে। তাড়াহুড়ার কিছু নেই। যদি মনে হয় আরও পাঁচ বছর পর বানাতে হবে তবে পাঁচ বছর পর বানাব। আবার যদি মনে হয় আগামী বছর সিনেমার কাজ করা উচিত তাহলে আগামী বছর-ই বানাব। তবে সিনেমার প্রস্তুতির মধ্যেই আছি। ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ শেষ করে সিনেমার কাজে হাত দিতেও পারি।

ঈদে কি অন্য কোনো কাজ আসছে?
আপাতত ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এর মধ্যেই আছি। আরও কিছুদিন থাকি। তারপর চিন্তা করব।
আরআর

