২০১৯ সালে ‘গল্লি বয়’ শিরোনামের গান দিয়ে ঝড় তুলেছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ওই গানে কণ্ঠ দিয়ে রাতারাতি খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে র্যাপার মাহমুদ হাসান তাবীব। এরপর বেশ কিছু দর্শকপ্রিয় গানসহ বলিউডের গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন। এবার মমতাজকে নিয়ে লেখা লম্ব পোস্টে তোপ দাগলেন তাবীব। তিনি কীভাবে সংসদ সদস্য হয়েছে সেই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘কোন যোগ্যতায় আওয়ামী লীগের মনে হয়েছিল, মমতাজ বেগম এমপি হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে?’
আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘মমতাজ গ্রেফতার। তার ছবি দেখে আমার মায়া হচ্ছে। মনে হচ্ছে একটা বোকা, নিরীহ, সাদাসিধা মহিলা না বুঝে ভুল করেছেন। হয়তো সে সত্যিই বুঝেননি। কিন্তু প্রশ্নগুলো তো থেকেই যায়, রক্ত-মাখা প্রশ্ন: কোন যোগ্যতায় আওয়ামী লীগের মনে হয়েছিল, মমতাজ বেগম এমপি হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে? তার কণ্ঠ? তার ফোক-গান? নাকি “ফাইট্টা যায়”-এর মধ্যে লুকানো কোনো উন্নয়ন তত্ত্ব?’
বিজ্ঞাপন
সাবেক এমপি ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ গ্রেফতার
তাবীব প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে লিখেছেন, ‘মমতাজের কোন গান সভ্য সমাজে সন্তানের সামনে বাজানো যায়? এই প্রশ্নটা আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে কোনোদিন উঠেছিল কি? “টিপ্পা দে”, “গুলিস্তানের মোড়ে”, “নান্টু ঘটক” এসব কি কোনো শিল্পীর রেপার্টরি?’
তিনি যোগ করেন, ‘শুধু গলা থাকলেই যদি শিল্পী হওয়া যায়, তাহলে অটো-টিউন সফটওয়্যার জাতীয় পুরস্কার পেত। মমতাজ শিল্পী সেই কণ্ঠের জন্য, সন্দেহ নেই। কিন্তু তার গানের কথা হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসের বাচ্চা পোলাপানের এর (প্রকাশযোগ্য না) মত। প্রিমিয়াম সুর বা প্যাকেজে হলুদ (প্রকাশযোগ্য না)। আমার জানতে ইচ্ছে করে সংসদকে নাট্যমঞ্চ বানিয়ে “সিয়াহ সিত্তাহ” পড়া বা ফেরি করে বিদ্যুৎ বিক্রি এটা কোন থিওরি ছিল? কোন পলিসি, কোন কৌশল? এই কি আওয়ামী লীগের উন্নয়নের নতুন রাষ্ট্রতত্ত্ব ছিল?’
বিজ্ঞাপন
তাবীব মনে করেন মমতাজকে এমপি বানানো মানে একজন ডাক্তার বাদ দিয়ে হাতুড়ে কবিরাজকে অপারেশনের দায়িত্ব দেয়া। আওয়ামী ভক্তেরা বুঝবে না।
তিনি আরও লিখেছেন, ‘কতটা বুদ্ধিবৃত্তিক পতন হলে একজন “ফাইট্টা যায়” শিল্পী দেশের সংসদে বসে। তারা বুঝবে না কেন রাজাকে তার প্রজারা ঘেরাও করে। তারা বুঝবে না গণঅভ্যুত্থান কেন হয়। তারা বুঝবে না সংসদে ভুল লোক ঢুকলে, সেই ভুল হাজারটা খুনের সমান পাপ। আগে যারা মমতাজকে “ম্যাডাম ম্যাডাম” বলে ছুটে যেতেন, আপনারা মমতাজের মুক্তি চেয়ে পোস্ট দিতে পারেন। বলতে পারেন ’সে খুন করেনি, দুর্নীতিও না। সে শুধু গলা দিয়েছিল।’
মেনন ও মমতাজের ব্যাংক হিসাব জব্দ
জনপ্রিয় র্যাপার বলেন, ‘সে (মমতাজ) একটি আসন দখল করেছিল। যেটা একজন শিক্ষিত, দক্ষ, মেধাবী প্রতিনিধি পেতে পারতো। সেই ভুল প্রতিনিধি দিয়ে যে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাতে পেছনে পড়েছে হাজার সম্ভাবনা। এটাই আসল গণহত্যার রাজনীতির গোপন গণহত্যা।’
আর পক্ষান্তরে জেমস। তিনি গুরু। তাকে আপনি পাবেন না মিডিয়ার দালালি ফ্রেমে। পাবেন না মঞ্চে দাঁড়িয়ে সরকারের গুণকীর্তনে। তিনি গান গেয়ে হৃদয় ছুয়ে যান। গান শেষে হারিয়ে যান ম্যাজিশিয়ানের মতো।
সর্বশেষ তিনি লিখেছেন, ‘আমার সত্যি মায়া লাগে। এই ছবিখানা দেখে মায়া লাগে। একটা বোকা মহিলা, গলা ভালো ছিল। কিন্তু রাজনীতির নেশায় ভুল করে ফেললেন সব। মাঝে মাঝে আমার এমন হুদাই মায়া হয়। কারণ আমি জানি, মমতাজ একা না। এ দেশে শত শত ভুল মানুষ, ভুল ক্ষমতায়, ভুল কণ্ঠে, ভুলভাবে উঠে যায়। আমরা মায়া করি। তারা ক্ষমতা খায়। ক্ষমতা পেলে “সিয়াহ সিত্তাহ”ও উচ্চারণ করা যায়, যদিও বোঝা যায় না সেটার অর্থ কী।’
বলে রাখা ভালো, গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ইএইচ/

