সম্প্রতি অভিনেতা শামীম হাসান সরকারের বিরুদ্ধে সহকর্মীকে হেনস্তা ও শুটিং সেটে মাদক সেবনের অভিযোগ আনেন অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা। এরপরই এক সংবাদ সম্মেলনে সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন শামীম। পাশাপাশি ওই সংবাদ সম্মেলনে অভিনেত্রী অহনা রহমানের প্রসঙ্গ টানেন তিনি। দুজনের মধ্যে একসময়কার চলমান সম্পর্কের গুঞ্জন প্রসঙ্গে কথা বলেন। অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে আনেন ‘ডাবল টাইমিং’-এর অভিযোগ। বিষয়টি নজর এড়ায়নি অহনার।
নিজের ফেসবুকে অভিনেত্রী লেখেন, ‘‘ডাবল টাইমিং’? আপনি (শামীম) যা বলেছেন ঠিক বলেছেন কি? নিজের দোষ ঢাকতেই কি এমন অপবাদ দিয়েছেন? যারা নিউজ করেন তারা দয়া করে অন্যের গল্পে আমাকে জড়িয়ে হেডলাইন করবেন না।’ যোগাযোগ করতেই শামীমের নামে বিস্তর অভিযোগ আনেন অহনা। সেইসঙ্গে দাবি করলেন, ইউটিউবার ছিলেন শামীম। তিনি নায়ক বানিয়েছেন তাকে।
বিজ্ঞাপন
শুরুতেই ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে শুধু বিরক্ত না, মানসিকভাবে অসুস্থ আমি। ‘হাবুর স্কলারশিপ নামে একটি জনপ্রিয় নাটকে কাজ করছি। আজ বৃহস্পতিবার শুটিং ছিল। কিন্তু আমি মানসিকভাবে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছি যে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।’’

অহনা মনে করছেন ধর্ষণের অভিযোগ থেকে সবার দৃষ্টি সরাতেই তার প্রসঙ্গ টেনেছেন শামীম। তার কথায়, ‘আমি কোনোদিন কোথাও কোনো সাক্ষাৎকারে কি কারও নাম বলেছি? কিংবা শামীম হাসান সরকার আমার প্রাক্তন এরকম কি বলেছি? প্রাক্তনের সঙ্গে যতই খারাপ সম্পর্ক হোক আমি তার নাম উল্লেখ করতে পারি না। তাহলে আমার নাম নেওয়ার পেছনের কারণ কি? তার বিরুদ্ধে যে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে সেটা ঢাকার জন্য?’ প্রশ্ন রাখেন অভিনেত্রী।
বিজ্ঞাপন
এরপর ক্যারেক্টার আর্টিস্টদের সঙ্গে শামীমের দুর্ব্যবহারের ফিরিস্তি তুলে ধরেন অহনা। বলেন, ‘প্রিয়াঙ্কা নামের মেয়েটি তার (শামীম হাসান সরকার) বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন। এ ব্যাপারে যদি আমার কাছে জানতে চান তবে আমি বলব, শামীম আর যাই করুক সে ধর্ষক না। কিন্তু সে হয়তো ভেবেছে ধর্ষণ শুধু শারীরিকভাবেই হয়। ধর্ষণ মুখেও করা যায়। সে মেয়েটিকে সবার সামনে গালি দিয়েছে। সে এগুলো করে। আমাদের অনেক ক্যারেক্টার আর্টিস্ট আছে যাদের সঙ্গে এরকম করেছে। বিশ্বাস না হলে তাদের জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন। এক ক্যারেক্টার আর্টিস্ট তো শামীমের সঙ্গে কাজ করবেন না বলে ঘোষণা-ই দিয়েছেন।’
অশ্লীল গালিকে যৌন হেনস্তা উল্লেখ করে অহনা বলেন, ‘শামীম যে অকথ্য ভাষায় গালি দেবে এটা কি যৌন হেনস্তার মধ্যে পড়ে না? প্রিয়াঙ্কা একজন মেয়ে বলে কিছু বলতে পারছে না। শামীমের কারণে কত ক্যারেক্টার আর্টিস্ট হেনস্তা হয়েছে! এর আগে সে একজনকে চড় মেরে কান দিয়ে রক্ত বের করে ফেলেছিল। প্রোডাকশন বয়ের শরীরে চা ছুড়ে মেরেছিল।’

এবার অহনা ‘ডাবল টাইমিং প্রসঙ্গে বলেন, ‘সে যে বলল আমি ডাবল টাইমিং করেছি। কীসের ডাবল টাইমিং? আমি একজন নারী। প্রকাশ্যে আমাকে নিয়ে এসব কথা কীভাবে বলে। আমার নামে অভিযোগগুলো আনল—আমি ডাবল টাইমিং করেছি, আমার সঙ্গে অন্য একজনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল দেখে সে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। আমি জানতে চাই ঘটনাটি কি আসলে এরকম ছিল নাকি অনেক অন্যরকম ছিল।’
অভিনেত্রী বলেন, ‘আমাকে সবাই বলছে মানহানির মামলা করতে। কিন্তু আমি সদ্য আল্লাহর ঘর দেখে এসেছি। মানুষ ভাবছে অহনা ঢং করছে হিজাব পরছে। হিজাব নিয়ে কথা হচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে শুটিং ছাড়া মাথার কাপড় সরাইনি।’
এদিকে বিষয়গুলো সামাজিক মাধ্যমে আসায় নেটিজেনদের কাছে নিজেদের সামাজিক অবস্থান নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন অহনা। এতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তিনি। তার ভাষ্য, ‘আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে। আমি একটা জায়গা (ট্রমা) থেকে উঠতে পারছি না ও (শামীম) এসে আমার ওপর আরও বোঝা চাপাচ্ছে।’

অহনার দাবি ইউটিউবার থেকে শামীমকে নায়ক বানিয়েছেন তিনি। বলেন, ‘ও ইউটিউবার ছিল। আমি ওকে নায়ক বানিয়েছি। ওর কাছে যত পরিচালক আছে অধিকাংশই আমার দেওয়া। আমি তাদের বলেছি, আমি ছেড়ে দিলাম তোমরা ছেড়ো না। তোমরা ছাড়লে ও কাজ করতে পারবে না। আপনি তাদের জিজ্ঞেস করেন। ক্যারেক্টার আর্টিস্ট সোহাগ ভাইকে জিজ্ঞেস করেন। তাহলেই জানতে পারবেন।’
নিজেও একই কারণে শামীমের সঙ্গে কাজ বন্ধ করেছেন জানিয়ে বলেন, ‘আমি বন্ধু হিসেবে ওর হাতটা ধরে ওকে কাজে আনলাম। ওকে নায়ক বানালাম। আমার কারণেই ওকে সবাই নিল। শেষে ওর এই ব্যবহারের কারণেই আমি ওর সাথে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছি।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে শুধু অহনাকেই টানেননি শামীম। ‘বরবাদ’ সিনেমার পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয়কেও টেনেছেন। তাকে অহনার প্রক্তন সম্বোধন করেছেন। অহনা বলেন, ‘ও (শামীম হাসান সরকার) কত বড় নিমকহারাম! যে ডিরেক্টর (মেহেদী হাসান হৃদয়) তাকে প্রথম ক্যামেরার সামনে এনেছেন সেই ডিরেক্টর আজ সুপারহিট একটি সিনেমা (বরবাদ) করেছেন বলে ওই ডিরেক্টর এবং সিনেমাকেও টেনে আনছে! আমি ওকে নায়ক বানিয়েছি ও আমার নামও টেনেছে।’

একসময় গুঞ্জন ছিল শামীমের সঙ্গে অহনার সম্পর্কের। সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘এত বছরের ক্যারিয়ারে আমার সঙ্গে কারও নাম জড়াতে দেখেছেন? দেখেননি। আমাকে নিয়ে শামীম বলে গেছে একতরফা। আমি কি কখনও বলেছি শামীমকে ভালোবাসি? বলিনি। কিন্তু আমি একজনকে ভালোবাসতাম। তখন তার সঙ্গে কথা হতো না। শামীমের সঙ্গে কাজ করতে করতে অন্যদিকে এগিয়ে যাচ্ছিল সম্পর্কটা। কিন্তু আমি এগুতে চাইনি। কারণ আমি তখনও আগের ওই মানুষটা থেকে বের হতে পারিনি। এটা আমি নিজে শামীমকে বলেছি। আর শামীম কি করল! সবার সামনে আমাকে এভাবে অপমান করল! আমার প্রসঙ্গ টেনে আনল! এটা কি তার উচিত হয়েছে!’
সবশেষে অহনা মনে করছেন শামীম অসুস্থ। শামীমের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘গেট ওয়েল সুন। এরপর যোগ করেন, ‘ও অসুস্থ। ওর দিকে সবাই মনোযোগ দিও। ওকে একটু হাসপাতালে নিয়ে যাও। মিডিয়ার আশি ভাগ মানুষ ওকে অসুস্থ বলে। ওর সামনে হয়তো বলবে না। কিন্তু পেছনে বলে।’
আরআর

