শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সংগীতে সুখ খুঁজে পান সৈয়দ সুজন

বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫ মে ২০২৫, ০৪:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

সংগীতে সুখ খুঁজে পান সৈয়দ সুজন
কিছু মানুষ আছেন, যারা প্রচারের আলোয় আসতে চান না। অন্তরালে থাকতে ভালোবাসেন। কিন্তু তাদের মেধার শক্তি এতটাই যে, পর্দার আড়াল থেকে বিচ্ছুরিত হয়ে আলোকোজ্জ্বল করে তোলেন সবকিছু। তেমন একজন মানুষ সৈয়দ কামরুজ্জামান সুজন। যাকে সৈয়দ সুজন নামেও চেনেন অনেকে। 

একাধারে তিনি যন্ত্রশিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালক। সম্প্রতি এই সুরের জাদুকর মুখোমুখি হয়েছিলেন ঢাকা মেইলের। সেই আলাপচারিতার শুরুতেই জানা গেল সুজন সংগীত পরিচালক হয়ে ওঠার গল্প। 


বিজ্ঞাপন


সংগীতপ্রেমী পরিবারে বেড়ে উঠেছেন সুজন। শৈশবেই গানের সখ্যতা। সুজনের কথায়, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখতাম বাবা গান করতেন। একসময় বড় ভাইও সংগীতে যুক্ত হন। তাদের দেখেই সংগীতে আগ্রহ । দেশি-বিদেশি সংগীতের সঙ্গে পরিচয় । সুজন ছোটবেলা থেকেই ক্লাসিকাল,অর্কেস্ট্রা,ইন্সট্রুমেন্টাল, মেডিটেশন মিউজিক ছোটবেলা থেকেই শুনতাম।’

sujan

কে জানত শৈশবের সেই গান শুনে বেড়ে ওঠা ছেলেটি-ই হয়ে উঠবেন গানের কারিগর। তবে পেশাদার সংগীত পরিচালক হবেন এরকম কখনও ভাবেননি। তিনি বলেন, ‘গানকে পেশা হিসেবে নেব কখনও ভাবিনি। ২০০৭-৮ সালের দিকে বাসায় ছোট একটা স্টুডিও ছিল। তখন সবে শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইনে ভর্তি হয়েছি। ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক মিউজিক করতাম। আমার বড় ভাইও মিউজিক করতেন। তাদের সার্কেলের অনেকে বাসায় আসতেন। তাদের কেউ নাটকের টাইটেল ট্র্যাক কিংবা কেউ টুকটাক মিউজিক করে দিতে বলতেন। এভাবেই শুরু। আস্তে আস্তে পরিচিতদের সংখ্যাও বাড়ল। বাসায় তাদের আসা-যাওয়া শুরু হলো। হাত খরচও আসা শুরু করল। সাহসও বাড়ল। ওই সাহসে ভর করেই বাসার বাইরে স্টুডিও নিয়ে কাজের পরিকল্পনা।’ 

সুজন বলেন, ‘পরিধি নামে আমাদের একটা ব্যান্ড ছিল। ২০০৯-এ ওদের কেউ নেই শিরোনামে ব্যান্ডটির অ্যালবাম বের হয়। তখন থেকে পেশাগতভাবে একটু একটু করে মিউজিক শুরু করি। এখন পর্যন্ত কাজের মধ্যেই আছি।’


বিজ্ঞাপন


আজকাল প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে গ্রাফিক্স ডিজাইন বেশ চাহিদাসম্পন্ন। সুজনের পড়ার টেবিলেও ছিল বিষয়টি। তা সত্ত্বেও গানকে বেছে নিলেন পেশা হিসেবে! কারণ জানিয়ে বলেন, ‘কোনো একটা কিছু নিয়ে পড়তে হবে বলেই পড়েছি। যেহেতু বিষয়টি শিল্প সম্পর্কিত সে কারণেই বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু এটা পড়ে যে চাকরি কিংবা ব্যবসা করব এরকম কোনো পরিকল্পনা কখনও ছিল না।’
সৃষ্টিশীল কাজে প্রত্যেকের অনুপ্রেরণার জায়গায় কেউ না কেউ থাকেন। প্রসঙ্গ তুলতেই সুজন জানালেন, সংগীতের পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই তিনি মন দিয়েছেন সলিল চৌধুরী ও এ আর রহমানে। আইডল অনেকে হলেও এই দুজনের প্রতি রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। 

476094668_9171273579625957_7042713694480614140_n

তিনি বলেন, ‘আইডল আমার অনেকেই। কেননা সবার কাছ থেকে আমি কিছু কিছু করে নিতে চাই বা শিখতে চাই সে যেই হোক না কেন। এটাকে আমার কৌশল বা স্বভাব বলতে পারেন। তবে ছোট থেকেই ভালো লাগে সলিল চৌধুরী ও এ আর রহমানকে।’ 

সংগীত নিয়ে সুজনের স্বপ্নটাও ব্যতিক্রম। অবলীলায় বললেন, ‘মিউজিক নিয়ে আমার স্বপ্ন হচ্ছে আমি শুধু নিজের জন্য সংগীত করা। অন্যের গানও করব। যদি আমার ভালো লাগে। কম্প্রোমাইজ করে কিছু করতে চাই না। যাদের গান ভালো লাগে তাদের নিয়েই কাজ করতে চাই।’

প্রত্যেক সংগীত পরিচালকেরই দেশ বিদেশের গুণী সঙ্গীতজ্ঞদের সঙ্গে কাজের পরিকল্পনা থাকে। সেদিক থেকে সুজন অনেকটাই সফল। দেশের ডাকসাইটে সংগীতজ্ঞের সঙ্গে রয়েছে কাজের পাশাপাশি কেননা কাজ করেছেন ভায়োলিন ব্রাদারস, ইয়ানির মতো বিশ্ববিখ্যাত সংগীতজ্ঞেরদলের সদস্য পেড্রো এস্টাচের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বড় বড় অনেকের সঙ্গে কাজের ইচ্ছা আছে। নাম না বলি।। এছাড়া শ্রীলংকা, মালদ্বীপ অর্থাৎ সার্কভুক্ত দেশের বেশ কয়েকজন সংগীতজ্ঞের সাথে কাজ হয়েছে।’

494184648_9691517550934888_5324098270781122925_n

কথায় আছে প্রচারে প্রসার। তবে সুজন সে পথে হাঁটেন না। কিছুটা নিরিবিলি কিছুটা আড়াল তার পছন্দ। তার কথায়, ‘আমার কোথাও তেমন একটা যাওয়া হয় না, লবিং মেইনটেইন বলতে যা বোঝায় সেগুলো করা হয় না। ওই জায়গা থেকে যেটুকু কাজ করি সেটা আমার কাছে অনেক বেশি মনে হয়।’

অনেকদিন ধরে শোনা যাচ্ছে গানের বাজারের রুগ্ন দশার কথা। যদিও আজকাল গান বাজারজাতের মাধ্যম বেড়েছে। তারপরও দেশের গানের বাজারের রুগ্ন দশার কথা তুলে ধরেন প্রযোজনা সংস্থা। কেন এই হাপিত্যেশ?

উত্তরটি নিজের মতো করে দিতে গিয়ে এ সংগীত পরিচালক বলেন, ‘গানের বাজার কোথায় আছে, না আছে আমি কিছুই জানি না। খবরও রাখি না। নিজের কাজ করে যাই। তবে ব্যবসা কিন্তু থেমে নেই। বরং আগের চেয়ে বেড়েছে। কেননা এখন অনেকগুলো মাধ্যম গানের ব্যবসা করার। আর ব্যবসায়ীদের তো কমন ডায়লগ বাজার ভালো না। শুধু গানের ক্ষেত্রে না, সবক্ষেত্রেই।’

494981058_9697438973676079_4586215843043177357_n

তবে একটা দুঃখবোধ আছে। ভালো গান খুব একটা শোনা যায় না। ভালো গান হয়। মাঝে মাঝেই অনেক মেধাবী আর্টিস্টদের নিয়ে ভালো ভালো কাজ করি। কিন্তু তারা পরিচিত না বলে গানগুলো হারিয়ে যায়। এখন ভাইরালের সময়। অনেকেই দেখি পোস্ট দিয়ে নিজের গানের মিলিয়ন ভিউয়ের কথা জানায়। বিষয়টি সুজনকে পোড়ায়। কেননা তিনি বিশ্বাস করেন ভিউ দিয়ে গানের মান যাচাই করা সম্ভব না। তাই ভিউ নিয়ে মাতামাতি না করে ভালো গান নিয়ে মাতামাতি করা উচিত।

বেড়ে ওঠার গল্প শেষে সুজন দিলেন ব্যস্ততার ফিরিস্তি। অন্যান্য ব্যস্ততার পাশাপাশি আরটিভি ফোক স্টেশন এবং মিউজিক লাউঞ্জে কাজ করছেন সংগীত পরিচালক ও সংগীত শিল্পী হিসেবে। এদিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সুজনের সংগীত পরিচালনায় প্রচার হতে যাচ্ছে 'সখী ভাবনা কাহারে বলে....'। গানটিতে তিনি নিজেই কণ্ঠ দিয়েছেন। সঙ্গে আছেন একঝাঁক যন্ত্রশিল্পী। গানচিত্রটি বানিয়েছেন নূর হোসাইন হীরা।

রবীন্দ্রজয়ন্তীর আয়োজনে দেশের লাখো দর্শক-শ্রোতার সামনে শুধু যন্ত্রসংগীতের মাধ্যমে সম্পূর্ণ রবীন্দ্রসংগীত উপস্থাপন করছেন 'কমিউনিটি অর্কেস্ট্রা ঢাকা'র শিল্পীরা। এই প্রথমবার কোনো অর্কেস্ট্রা দল নিয়ে কাজ করলেন সুজন। আর ভবিষ্যতে অর্কেস্ট্রা নিয়ে আরও কাজের ইচ্ছা আছে বলে জানালেন। 

আরআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর