ফেলে আসা শৈশবের কিছু গল্প থাকে রমজানের ঘ্রাণমাখা। ঘুম ভেঙে সাহরি খাওয়া দিয়ে শুরু হতো দিন। ক্লান্ত শরীর টেনে ইফতারের টেবিলে বসার মধ্য দিয়ে হতো শেষ। এরমধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটত যা মনে রাখার মতো। বছর ঘুরে পবিত্র এই মাসটি ফিরে আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে আসে সেসব।
ঢাকা মেইলের কাছে শৈশবের রোজা নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী। কেমন ছিল শৈশবের রমজান— জানতে চাইলে বলেন, ‘ছোটবেলার রোজার আনন্দটাই আলাদা ছিল। বড়বেলার সঙ্গে কোনো মিল নেই। কোনো দায়িত্ব, চিন্তা ছিল না। দৌড়াদৌড়ি, পাড়া বেড়ানো, ঠিক ইফতারের আগে বাসায় ফেরা, আম্মাকে সাহায্য করা, সবাই মাটিতে বসে ছোলা, মুড়ি, জিলাপি নিয়ে আযানের অপেক্ষা— কী যে মজার ছিল!’
বিজ্ঞাপন
তবে রোজার আনন্দ অন্যরকম হয়ে ধরা দিত নানার বাড়িতে। সেসব স্মৃতি এখনও টাটকা। গায়িকা বলেন, ‘অনেক সময় আমরা নানার বাড়ি চলে যেতাম। সেখানে অন্যরকম আনন্দ হতো। ঈদ করে ফিরতাম।’
একরত্তিদের রোজা রাখাটা ঝাক্কির-ই। সারাদিনের অভুক্তি ছোট প্রাণে সইতে চায় না। তবে খেলা পাগল ফাহমিদা এর ব্যতিক্রম ছিলেন। তার কথায়, ‘রোজার দিনে বাবা-মায়েরা আমাদের খুঁজেই পেতেন না। পাড়ায় পাড়ায় বেড়াতাম। ছোটবেলায় আমি খুব খেলাধুলা করতাম। খেলতে খেলতে ক্ষুধাও লাগত না। ফলে রোজার কষ্টও মালুম হতো না।’
এদিকে রোজাকালীন ভুলবশত পানি পেটে গেল কিনা এ নিয়ে ভীষণ চিন্তিত থাকে কচিরা। ফাহমিদা নবীও ব্যতিক্রম ছিলেন না। তার কথায়, ‘এগুলো নিয়ে প্রশ্নের পর প্রশ্ন থাকত। নানিকে, মাকে জিজ্ঞেস করতাম— আচ্ছা, কুলি, দাঁত ব্রাশের সময় বোধহয় গলায় একটু পানি ঢুকে গেল! তাহলে কি রোজা ভাঙল?’
বিজ্ঞাপন
ইফতারের আগমুহূর্তে পেটে ক্ষুধার দানব উৎপাত করলে সব সাবাড় করার ইচ্ছা জাগত। এরকম জানিয়ে আরও বলেন, ‘ইফতারে মনে হতো সব খাব। কিন্তু যত খাব ভাবতাম তার কিছুই খাওয়া হতো না। একটু মজাই বেশি হতো।’
ফাহমিদা নবীর প্রিয় ছিল ডিমের হালুয়া ও পরোটা। হরেক পদ থাকলেও ইফতারে এটি আবশ্যক ছিল তার জন্য। গুণী এ গায়িকা বলেন, ‘আমি আর সামিনা (সামিনা চৌধুরী) তো পিঠাপিঠি। আমাদের প্রিয় খাবার ছিল ডিমের হালুয়া ও পরোটা। বেগুনি, পিয়াজু যতই থাক ডিমের হালুয়া ও পরোটা ছাড়া চলত-ই না। অভ্যাসটা এখনও রয়ে গেছে। আমার মেয়েরও এটা ভীষণ পছন্দ।’
তবে কিছু বিশেষ নিয়ম ছিল গায়িকাদের বাসায়। মাহমুদুন্নবীকন্যার ভাষায়, ‘‘ইফতারের পর আমরা বাসায় মিলাদ পড়তাম। আব্বা (কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী মাহমুদুন্নবী) মিলাদ পড়াতেন। আমরা সুর করে ‘ইয়া নবী সালাম আলাইকা’ পড়তাম। হামদ নাত করতাম। এটা আমাদের বাসায় আবশ্যক ছিল। করতেই হতো।’’
ফাহমিদা নবী বলেন, ‘ছোটবেলায় সবাই মিলে নামাজ পড়তে বসতাম। আমার খালা-মামারা-ও ছোট ছিল তখন। একসঙ্গে প্রায় ১০ জন বসতাম। নামাজ তো পড়তে পারতাম না, চিমটি চুল টানাটানি এসব হতো। কথা-ই হতো বেশি।’
শিশু-কিশোরের কাছে রোজা রাখাটা বেশ কৃতিত্বের। বড়দের বাহবাও পাওয়া যায়। তাই ওই বয়সে অনেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করে সবকটা রোজা রাখার। ফাহমিদা নবীর মধ্যেও ছিল এ প্রচেষ্টা। তিনি বলেন, ‘কোন বয়সে প্রথম রোজা রেখেছি সেটি মনে নেই। তবে ছোটবেলায় রোজা রাখার চেষ্টা করতাম।’
শৈশবের দিনগুলো হাতছানি দেয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ গায়িকাকে। স্মৃতিকাতর হয়ে বলেন, ‘ছেলেবেলার ছেলেমানুষী অনেক বেশি স্মৃতিকাতর করে তোলে। বারবার ভাবি ওই সময় যদি ফিরে যাওয়া যেত! এখন অনেক দায়িত্ব। প্রথম দিন দারোয়ান থেকে শুরু করে সবাইকে ইফতার দেওয়া। ভিক্ষুকরাও বাদ যায় না। তারপর নিজেদের দেওয়া। সেসব শেষে নামাজ পড়তে হয়।’
ছেলেবেলা ও বড়বেলার তফাৎ করে গায়িকা বলেন, ‘আগে ইফতারের পর একেবারে সাহরিতে খাওয়া হতো। উঠতে ইচ্ছে করত না। আলস্য লাগত তবুও উঠতাম। কী মজার ছিল! আর এখন তো সাহরি পর্যন্ত জেগেই থাকি।’
সবশেষে ব্যস্ততার ফিরিস্তি দিলেন এ গানের পাখি। জানালেন, ঈদে ‘একজন তুমি খুঁজছি’ ও ‘ভালোবাসা কেন ভুলতে হয়’ শিরোনামের দুটি গান আসছে তার। পাশাপাশি রোজার কিছু কাজ করেছেন। অংশ নিয়েছেন ইফতারের অনুষ্ঠানে।
আরআর