সদ্যপ্রয়াত অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান ছিলেন হাসিখুশি ও প্রাণোচ্ছ্বল। সহকর্মীদের সঙ্গে ছিল হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। জনপ্রিয় অভিনেতা সোহেল রানার প্রতি ছিল তার ছিল অগাধ শ্রদ্ধা। জীবদ্দশায় সোহেল রানার কাছে নিজেকে ঋণী বলেও স্বীকার করেছেন।
এর অবশ্য কারণ রয়েছে। সে ১৯৭৬ সালের কথা। সে বছর সোহেল রানা প্রযোজিত ‘দস্যু বনহুর’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে অঞ্জনার চলচ্চিত্রে অভিষেক। শামসুদ্দীন টগর পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে অঞ্জনা অভিনয় করেছিলেন সোহেল রানার বিপরীতে। সে কারণেই নায়কের প্রতি এভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন।
বিজ্ঞাপন
তবে অঞ্জনার মতো করে ভাবেন না সোহেল রানা। ঢাকা মেইলকে সোহেল রানা বললেন, ‘‘১৯৭৬ সালে ‘দুস্য বনহুর’ সিনেমার মাধ্যমে আমার সঙ্গে অঞ্জনার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়েছে। এজন্য যে ও আমার কাছে ঋণী এরকমটা মনে করি না আমি। সিনেমায় আসার আগে থেকেই সে একজন নাম করা নৃত্যশিল্পী ছিল। ছোটবেলায় আইয়ুব খানের হাত থেকে গোল্ড মেডেলও পেয়েছে।’’
এরপর নন্দিত এ নায়ক বলেন, ‘একজন নতুন অভিনয়শিল্পীর প্রতি যতটা যত্নশীল থাকতে হয় আমি তার প্রতি ছিলাম। ওকে গ্রুমিং করিয়েছি। স্নেহ ভালোবাসা না থাকলে তো গ্রুম করানো সম্ভব না। সেসময় ও নতুন ছিল। অন্যদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও আমার কাছে পরামর্শ নিয়েছে। কোনো একটা শট কিংবা সিনেমা সম্পর্কিত বিষয়ে আমার থেকে ঠিক-বেঠিক জানতে চেয়েছে। তার মানে তো এই না যে অঞ্জনার অর্জনের সব কৃতিত্ব আমার।’
সোহেল রানার কথায়, ‘আমার হাত ধরে তো অনেকেই চলচ্চিত্রে এসেছেন। কিন্তু সবাই তো আর শহীদুল ইসলাম খোকন বা অঞ্জনা হতে পারেননি। আমি ছাড়াও অঞ্জনা অনেক সিনেমা করেছে। বিদেশি সিনেমায় কাজ করেছে। অসংখ্য সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছে। দক্ষতা, মেধা, একাগ্রতা ছিল বলেই সে পেরেছে। এ কৃতিত্ব তার। সেও আমাকে মাঝে মাঝে বলত, ওস্তাদ আপনি না থাকলে কিছুই হতো না। আমি সেভাবে কখনও ভাবি না। কেননা একটি ক্লাসে শিক্ষার্থী অনেক থাকে কিন্তু প্রথম হয় একজন। যার মেধা আছে যে মনযোগী দক্ষ সে-ই ওই জায়গা নিতে পারে। অঞ্জনাও সেরকম ছিল।’
সবশেষে সহকর্মীকে নিয়ে জনপ্রিয় এ নায়ক বলেন, ‘অঞ্জনা কেমন ছিল সে আমিও যেমন জানি আপনারাও জানেন। খুব ভালো মনের মানুষ ছিল। সু অভিনেত্রী ছিল। দেশের পাশাপাশি একাধিক বিদেশি সিনেমায় কাজ করেছে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। এই মুহূর্তে শুধু বলব আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন।’
বিজ্ঞাপন
এর আগে সোহেল রানার ৭৬তম জন্মদিনে অঞ্জনা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি ড্যাশিং হিরো, যাঁর হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেছি। আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কিংবদন্তি প্রযোজক-পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সফল চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ভাই। চলচ্চিত্রে আমার জুটি হয়ে অসংখ্য কালজয়ী দর্শকনন্দিত সুপারহিট ছবিতে আমরা একসঙ্গে অভিনয় করেছি। সারা জীবন আপনার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আপনার জন্যই অঞ্জনা হতে পেরেছি। সেদিন আপনি হাতটি ধরে একক এবং প্রধান চরিত্রে নায়িকা হিসেবে না নিয়ে এলে হয়তো আমার চলচ্চিত্রে পদার্পণের যাত্রাটা ১০০% সফলভাবে সুপ্রসন্ন হতো না। আজ আমার এই নাম–যশ–খ্যাতি–অর্থ–বিত্ত–সম্পদ সবকিছুই আপনার জন্য। আপনার এই ঋণ কোনো দিন শোধ করার মতো নয়। পারভেজ ভাই, আপনার কাছে আমি চিরঋণী।’
আজ দিবাপূর্ব রাত ১টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) মারা যান অঞ্জনা। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ঢালিউডে। শোকাহত সোহেল রানাও।