বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা ২০২৪-এ জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর কাজের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অল্প হলেও প্রাপ্তির গল্পটা বেশ বড়। নাটক, ওয়েব সিনেমা, সিরিজ— সর্বত্র দ্যুতি ছড়িয়েছেন। সিনেমায় নাম লিখিয়েই সুবাস ছড়িয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। সবশেষে হাজির হয়েছেন হলে। অভিষেকেই সিক্ত প্রশংসায়। ঢাকা মেইলের সঙ্গে তাই সালতামামির আলাপের শুরুটা ‘প্রিয় মালতী’ দিয়ে-ই।
‘প্রিয় মালতী’ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রশংসার ছড়াছড়ি। এটা প্রত্যাশা করেছিলেন?
বিজ্ঞাপন
প্রত্যাশা ছিল না বললে ভুল হবে। কেননা কেউ যখন কোনো কাজ করে তখন অবশ্যই প্রত্যাশা থাকে। নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। দর্শকের ফিডব্যাক পেয়ে মনে হচ্ছে যে বার্তাটি দিতে চেয়েছিলাম সেটি তাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে। গল্পের সঙ্গে সবাই আবেগপ্রবণভাবে যুক্ত হয়েছেন। ইচ্ছা ছিল মালতীর জার্নি যেন সবার আপন মনে হয়। সেটা হয়েছে। দর্শকদের প্রতিক্রিয়া এবং সহকর্মীদের প্রশংসা আমাকে আপ্লুত করেছে।

মুগ্ধ অনুরাগীদের অনেকে আপনাকে উপহার দিয়েছে। সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি…
‘প্রিয় মালতী’ লেখা শাড়ি, শাল গিফট পেয়েছি। মালতী টিপ পরে। তাই টিপও পেয়েছি। অনেকগুলো স্কেচ, পেইন্টিং পেয়েছি। আমার মনে হয় এই জিনিসগুলো বানানো বেশ সময়ের ব্যাপার। অনেক বেশি ভালোবাসা জড়িত থাকলেই এটা সম্ভব। এগুলোকে গিফট না, আশীর্বাদ মনে করি।
বিজ্ঞাপন
২০২৪ যাই যাই করছে। বছরটি কতটা মসৃণ ও বন্ধুর ছিল?
মাঝের একটা সময় কাজ থেকে আমরা অনেক দূরে ছিলাম। আস্তে আস্তে ফিরেছি। বছরটি শুরু হয়েছিল দারুণভাবে। ‘আরারাত’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ করেছিলাম। ‘তিথিডোর’ নামের নাটক। অনেক সাড়া পেয়েছিলাম। রবিউল আলম রবি ভাইয়ের সঙ্গে অনেক আগে থেকে কাজ করার ইচ্ছা ছিল। তার সঙ্গে ‘ফরগেট মি নট’ নামের দারুণ একটি কাজ হয়েছে। এখন হলে চলছে ‘প্রিয় মালতী’। এই চারটি কাজ দর্শকদের উপহার দিতে পেরেছি। এছাড়া অনেক ভ্রমণ করা হয়েছে। দুটি সিনেমা নিয়ে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে যোগ দিয়েছি। জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়া। বুসান, কায়রো, রেড সি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে গেছি। অন্য ফেস্টিভ্যালগুলোতে টিম গেছে। যেমন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়াতে টিম গিয়েছিল। অল্টারনেটিভ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘সাবা’র পরিচালক গেছেন। আমার যাওয়া হয়নি। এগুলো আমার কাছে বাড়তি পাওয়া মনে হয়। একটি সিনেমা দেশের দর্শকের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। সেটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেরা কয়েকটি কাজের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে। এটা যখন জানতে পেরেছি তখন বড় অর্জন বলে মনে হয়েছে।

এমন কোনো অভিজ্ঞতা কি হয়েছে যা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা নতুন বছর পথ চলতে কাজে লাগবে?
এরকম অনেক লেসন আছে। তবে আমি প্রত্যেক ধাপেই বিশ্বাস করি আমার হয়ে কাজ কথা বলবে। আগামীতেও এরকম চাই। এছাড়া সবসময় সবকিছু থেকে একটু দূরে নিজের মতো করে থাকতে পছন্দ করি। আগামী বছর এটা আরও বেশি মেইনটেইন করতে চাই। যখন কাজ আসবে তখন লাইম লাইটে আসতে চাই এবং আমার কাজ যেন আমাকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। এর বাইরে নিজের মতো করে একটু শান্তিতে থাকতে চাই।
২০২৪ নিয়ে কোনো আক্ষেপ আছে?
আমি একটু ধীর গতির। তবে আমার মনে হয় যে গতিতে চলছি ঠিক আছে। সময়ের ওপর খুব বিশ্বাস রাখি। যখন যে কাজটা হচ্ছে সেটা ওই সময়ের জন্যই বরাদ্দ ছিল বলে মনে হয়। আজ থেকে অনেক বছর আগে যদি সিনেমা করতাম হয়তো অভিনয়ের জায়গায় ঘাটতি থাকত। কেননা তখন এতগুলো কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে অভিনয়ে আসতে পারতাম না। অনেক বছর পরে করলে হয়তো গল্পের এই মাজেজাটা থাকত না। আমি মনে করি প্রত্যেক শিল্পীর নিজস্ব সময় থাকে। নিজস্ব জার্নি থাকে। সেটাকে সেভাবেই সম্পন্ন করা উচিত।

আসছে ২০২৫ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা বা পরিকল্পনা কী?
২০২৫ নিয়ে এখনও ভাবার ফুরসৎ পাইনি। কারণ ‘প্রিয় মালতী’ নিয়ে এত দৌড়াদৌড়ির মধ্যে আছি! তবে আমার চাওয়া নিজেকে ভিন্নভাবে ভিন্ন ভিন্ন কাজে মেলে ধরতে যেন পারি। সব ধরনের দর্শকের মন ছুঁয়ে যায় এরকম কাজে নিয়ে আসতে চাই। শরীরের যত্ন নিতে চাই। খুব বেশি অবহেলা করা হয়। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে ও ঘুরতে যেন পারি। একজন শিল্পীর জীবনে বেশি চাওয়া পাওয়া থাকে না। ভালো কাজের আকাঙ্ক্ষা, পরিবার ও আশেপাশের সবার ভালো কামনা, দর্শককে ভালো কাজ উপহার দিতে চাওয়া— মনে হয় না এর বাইরে কিছু চাওয়ার আছে।
‘সাবা’ কবে মুক্তি পাচ্ছে?
এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। প্রোডাকশন টিম তাদের মতো করে সময় নির্ধারণ করে জানাবে।

থার্টি ফার্স্ট নাইট নিয়ে পরিকল্পনা কী?
এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা নেই। আমার পরিবার দেশের বাইরে। কদিন পর আসবে। এলে তাদের নিয়ে আমার সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা। তাছাড়া এবার যেহেতু দেশের বাইরে কোথাও যাওয়া হচ্ছে না তাই দেশেই বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সঙ্গে থার্টি ফার্স্ট নাইট কাটাব।
ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাই...
এই মুহূর্তে ব্যস্ততার পুরোটা জুড়ে ‘প্রিয় মালতী’। তবে জানুয়ারিতে আরও কিছু কাজের পরিকল্পনা আছে। এরমধ্যে একটি ওয়েব ফিল্ম এবং একটি নাটক রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে বিস্তারিত জানাব।
আরআর

