জনপ্রিয়তার কমতি নেই ইরফান সাজ্জাদের। তবে জোয়ারে ভাসেন না। বেছে বেছে কাজ করেন। ফলে প্রশংসার সঙ্গে আলাদা সখ্যতা তার। নাটক, ওটিটি মাধ্যমে স্বকীয়তা গড়ে তোলা এ অভিনেতা আসছেন বড়পর্দায়। আগামী ২৯ নভেম্বর প্রেক্ষাগৃহে আসছে তার অভিনীত সিনেমা ‘ভয়াল’। সেই সূত্রে আলাপন ঢাকা মেইলের সঙ্গে।
‘ভয়াল’ আসছে ২৯ নভেম্বর। কেমন বোধ করছেন?
বিজ্ঞাপন
বেশ চাপ বোধ করছি। কেননা চেয়েছিলাম সিনেমাটি সময় নিয়ে মুক্তি দিতে। কিন্তু ডিসেম্বরে কোনো তারিখ পাওয়া যায়নি। নভেম্বরের ২৯ তারিখটি ফাঁকা ছিল। প্রযোজক খুব করে চাচ্ছিলেন এ বছরই মুক্তি দিতে। ওই জায়গা থেকে কিছুটা তাড়াতাড়ি। এখন শেষটা ভালো হলেই ভালো।
একটা কথা প্রচলিত। সিনেমার দুর্দিন চলছে। এই সময়ে হলে দর্শক আনতে কতটা ভূমিকা রাখবে ‘ভয়াল’?
রিলিজের পর বুঝতে পারব। কারণ আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প মসৃণভাবে এগুচ্ছে না। বিশেষ করে গত ১০-১৫ বছর ধরে। কিন্তু কয়েক বছর বিভিন্ন ধরনের সিনেমা আসছিল। ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’, ‘সুড়ঙ্গ’, ‘প্রিয়তমা’ দর্শককে হলমুখী হতে অভ্যস্ত করছিল। কিন্তু সেটা বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে থমকেও যাচ্ছিল। দিনশেষে দর্শক যদি হলে না আসে তাহলে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি টিকবে না। আবার যদি কনটেন্ট নিয়মিত না দেওয়া হয় তাহলেও দর্শকের মধ্যে এই অভ্যস্ততা গড়ে উঠবে না। আমাদের এখানে উৎসবকেন্দ্রিক (ঈদ মৌসুম) সিনেমা মুক্তি রীতি হয়ে গেছে। সারা বছর সেভাবে মুক্তি পায় না। এভাবে একটি ইন্ডাস্ট্রি টিকতে পারে না। ব্যবসায়িকভাবেও লাভবান হওয়া যায় না। একজন প্রযোজক যদি লাভবান না হন তিনি আর লগ্নি করতে আসবেন না। সবার এগিয়ে আসা উচিত। ফেস্টিভ্যাল ছাড়াও সিনেমা রিলিজ দেওয়া উচিত। যেমন ‘দরদ’ রিলিজ হচ্ছে ১৫ তারিখ। এভাবে সবাইকে উৎসবহীন সময়ে সিনেমা মুক্তির প্রচলন তৈরি করতে হবে। তবেই দর্শক হলমুখী হবে। কিছু দর্শকও যদি আসে আমার মনে হয় তারা আরও দর্শক আনবেন। কেননা আমি মনে করি সিনেমার গল্প দর্শক টানবে।
বিজ্ঞাপন
এই সিনেমায় আপনার চরিত্রটি কেমন?
এটি এমন একটি গল্প সেখানে বাবা মা বোনের কথা আছে, বাবা ছেলের কথা আছে, প্রেমের গল্পও আছে। আমার চরিত্রটা গ্রামের সাধারণ একটি চরিত্র। আলাদা যে বৈশিষ্ট্য আছে সেরকম কিছু না তবে যে কারণে চরিত্রটি সুন্দর সেটি হচ্ছে চরিত্রটির শক্তিশালী একটি ইথিক্স আছে। শুরু থেকে মানুষ একভাবে দেখবে। শেষে অন্যভাবে। সবগুলো চরিত্রই বেশ দেখার মতো। দেখা যাক দর্শক কিভাবে নেন।
নাটক, ওটিটি, সিনেমা— সব মাধ্যমেই আছেন। তবে কোথাও গণহারে দেখা যায় না। কেন?
২০২১, ২২, ২৩ সালে ব্যক্তিগত কারণে অনিয়মিত ছিলাম। এছাড়া শুরু থেকেই চাইনি একে পর এক কাজ করতে। বরাবরই গল্প দেখে কাজ করতে চেয়েছি। ইচ্ছা ছিল ভিন্ন গল্পের সিনেমায় কাজ করার। যেহেতু সেভাবে সিনেমা হচ্ছে না সেকারণে নাটকে নিয়মিত। কিন্তু একটা সময় দেখা গেল নাটকও ছকেবাঁধা হচ্ছে। যেগুলোতে কাজ করার ইচ্ছা আমার কমে আসছিল। একই ধরনের প্রেমের গল্প, একই ধরনের কমেডি। এর অবশ্য কারণ আছে। ছকের মধ্যে কাজ করলে হয়তো নির্দিষ্ট সংখ্যক ভিউ পাওয়া যায়। নাটকে এখন দিনশেষে লক্ষ্য হচ্ছে ভিউ। যে কারণে ভিউ অর্জনের জন্য নাটকের গল্প ছকে বাঁধা হয়ে গেছে। আলাদা কিছু করার সুযোগ কম। সে কারণে আমাকে কম দেখা যায়। ন্যূনতম ভিন্নতা না থাকলে আমি যুক্ত হই না। চেষ্টা করছিলাম ভালো গল্প মিললে সিনেমায় কাজ করার। এরইমধ্যে ‘আলী’ নামের একটি সিনেমা করেছি। ‘ভয়াল’ করেছি, ‘সংবাদ’ নামের একটি সিনেমায় যুক্ত হয়েছি। এর আগে ‘ফুটবল ৭১' নামে একটি সিনেমায় কাজ করা হয়েছে। ইচ্ছা ছিল আস্তে আস্তে বড় পর্দায় যুক্ত হওয়া। ‘ভয়াল’ দিয়ে শুরুটা হচ্ছে। দর্শক যদি ভালোভাবে গ্রহণ করেন চেষ্টা করব মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে ভালো গল্প নিয়ে সিনেমায় আসতে।
ভিন্নতা ও মানের ওপর নির্ভর করলে কাজের সংখ্যা কম হয়। সেক্ষেত্রে আর্থিক সুরক্ষার দিকটা কেমন?
কলকাতা, মুম্বাই কিংবা দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে যে সবসময় বড় আয়োজনের ছবি হচ্ছে তা কিন্তু না। অনেক গল্পনির্ভর ছবি কিন্তু হয়। সেগুলো গল্পের জোরে কোনোরকম তারকা ছাড়াই দারুণ ব্যবসা করে। আমার কাছে মনে হয় দর্শকের টেস্ট বদলানোর দায়িত্ব আমাদের। কেননা প্রতি মাসে তো আর আপনি ‘তুফান’ তৈরি করতে পারবেন না। এজন্য বড় আয়োজন বাজেট সময় প্রয়োজন। একটি প্রযোজনা সংস্থা এরকম ছবি বছরে দুইটা বানাতে পারে। তাই বলে তো সিনেমা হল বসে থাকবে না। হলে ‘তুফান’ যেমন দরকার ‘ভায়াল’ও তেমন দরকার। যাতে দর্শক ভিন্ন স্বাদের গল্প পেতে পারেন। আজ যদি ভিন্ন গল্প দেখাতে পারি তাহলে আমি মনে করি দর্শক আসবেন। সিনেমা হলেও নিয়মিত কনটেন্ট আসবে। আর অর্থনৈতিক সুরক্ষার বিষয়টা হচ্ছে আপনি যদি নিয়মিত কাজ করেন তাহলে আপনার আয় বাড়বে। এখন কথা হচ্ছে আপনি নিজেকে কীভাবে দেখতে চান। আমি আমাকে অ্যাভারেজ দেখতে চাই না। আমি চাই আমার কাজের মধ্যে ন্যূনতম একটি ক্লাস থাকুক। সেজন্য যদি বিরতি দিয়ে কাজ করতে হয় তা-ও রাজি আছি। একেবারে স্রোতে গা ভাসাতে চাই না। কারণ ভবিষ্যতে বলতে পারব যে আমি চেষ্টা করেছি মানসম্মত কিছু কাজ করার।
১৫ তারিখ শাকিব খানের ‘দরদ’ আসছে। এর অল্পদিনের ব্যবধানে ‘ভয়াল’। শাকিবের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তাহলে?
‘দরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার প্রশ্নই আসে না। বরং ১৫ তারিখে ‘দরদ’ আসাটা আমাদের জন্য ইতিবাচক। কারণ ‘দরদে’র মাধ্যমে দর্শক সিনেমা হলে আসবেন। সাত-আট মাস সিনেমা হলে তেমন কোনো সিনেমা নেই। এই ছবি দিয়ে মানুষ আসা শুরু করলে সেটা ইতিবাচক। প্রথমে তো হলে মানুষ আনতে হবে। দেখা যাবে ‘দরদ' দেখে অনেকে স্বাদ বদলাতে আরও একটি ছবি পাবে। তাছাড়া ১৫ দিন বাদে ‘ভয়াল’ আসছে। তার মানে হলে কনটেন্টের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। ওই জায়গা থেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।
ব্যস্ততা কী নিয়ে?
‘ভয়াল’ মুক্তি পাচ্ছে। ‘আলী’ সিনেমাটাও প্রস্তুত হচ্ছে। হয়তোবা আগামী বছর সুবিধামতো সময় মুক্তি পাবে। ওটিটি নিয়ে কিছু ব্যস্ততা আছে। এরইমধ্যে হৈচৈয়ের একটি সিরিজে সম্ভবত কাজ করব। স্ক্রিপ্টের কাজ চলছে। গল্প পড়লাম।
আরআর