বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বিকল্পধারা বলে আলাদা কিছু বুঝি না: চঞ্চল চৌধুরী

রাফিউজ্জামান রাফি
প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২২, ০২:৫৬ পিএম

শেয়ার করুন:

বিকল্পধারা বলে আলাদা কিছু বুঝি না: চঞ্চল চৌধুরী
ছোটপর্দায় চঞ্চল চৌধুরী নিখুঁত অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের বিনোদনের খোরাক জোগালেও বড়পর্দায় তিনি যেন আরও প্রসারিত করেছেন নিজেকে। প্রখর অভিনয়ের মাধ্যমে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দর্শক কাঁদিয়েছেন, হাসিয়েছেন। আবার কখনও স্তব্ধ করে রেখেছেন। সম্প্রতি গুণী এই অভিনেতা কথা বলেছেন ঢাকা মেইলের সঙ্গে। কথায় কথায় ক্যারিয়ার ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে মনের আগল খুলেছেন।

গেল সপ্তাহে পাপ পুণ্য’ সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এর আগে আপনার চরিত্রগুলো দর্শকের মাঝে ভীষণ সাড়া জাগিয়েছিল। এবারের চরিত্রটিও হতাশ করবে না বলেছিলেন। কিন্তু চরিত্রটি তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। কেন সাড়া ফেলতে পারেনি বলে মনে হয় আপনার?

পেরেছে কী পারেনি—সেটা আমি জানি না। তবে আমার কাছে যে ফিডব্যাক আছে তাতে মনে হয়েছে পেরেছে। তা ছাড়া দর্শক কিন্তু আগের জায়গায় নেই। সময় বদলে গেছে না! তিন বছর হল বন্ধ থাকল। এখন দর্শক সমাগম আগের মতো নেই। এটা যে শুধু এই সিনেমার ক্ষেত্রে, তা কিন্তু নয়। অন্যান্য সিনেমার ক্ষেত্রেও হয়েছে। সময়টা খুব রিস্কি। আর পত্রিকায় যা লেখা হয়, তা তো প্রচারণার জন্য।  

তবে কাজের মান অনুযায়ী সিনেমা ঠিক আছে। তা ছাড়া দর্শক সমাগমের কথা বলতে গেলে বলব, বিনোদনের বিষয়টা এখন পিছিয়ে আছে। এখন বিভিন্ন কারণে মানুষ কাজে ব্যস্ত। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের নিকট বিনোদন খোরাক হিসেবে আছে। শুরুতে সময় বদলানোর কথা বলেছিলাম। ২০০৯ সালের ‘মনপুরা’র দর্শকের রুচি ও সময় আর এখনকার দর্শকের রুচি এক না। ২০১৬ সালের ‘আয়নাবাজি’ কিংবা ২০১৮ সালের ‘দেবী’র ক্ষেত্রেও তাই। সেই কারণে ওই সময়ের সঙ্গে এখন তুলনা করলে হবে না। 

আরেকটা ব্যাপার হলো প্রচারণা। এটা তো প্রযোজনা সংস্থার দায়িত্ব। দুই-তিন মাস আগে থেকে সিনেমাটির ট্রেলারসহ প্রচারণার আনুষাঙ্গিক আয়োজন শুরু হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। ঢাকা শহরের কোথাও সিনেমাটির পোস্টারও দেখা যায়নি।

Pappunno


বিজ্ঞাপন


এ সময়ের দর্শকের মধ্যে কী কী পার্থক্য খেয়াল করছেন আপনি?

কোভিডের মধ্যে মানুষ অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখন যেকোনো ছবি এক-দেড় মাসের মধ্যে ওটিটিতে চলে আসে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তেমনটা হচ্ছে। তা ছাড়া দর্শকও ভাগ হয়ে গেছে। কেউ ওটিটি নির্ভর, আবার কেউ ইউটিউব নির্ভর হয়ে পড়েছেন। আর একটা শ্রেণি আছেন, যারা হলে যান। 

আপনার অভিনীত সিনেমাগুলোর সব চরিত্র দর্শকের মাঝে ভীষণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সেই ধারা বজায় রাখতে নতুন চলচ্চিত্রে যুক্ত হওয়ার সময় কোন কোন দিকগুলো সাধারণত মাথায় রাখেন?

এই যে আপনি যে কথাটি বললেন, চরিত্রের কথা। আমার নাটকেও এটা পাবেন। আমি তো অসংখ্য নাটক করেছি। সেখানেও আমার প্রায় এক শ’টি বিশেষ চরিত্র আছে। সিনেমা তো আরও বড় ব্যাপার। এর স্থায়িত্ব আছে, দর্শক অনেক দিন মনে রাখেন। যদিও ইউটিউবের কল্যাণে নাটকও এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে। এটা অবশ্যই একটা পজিটিভ দিক। তবে সিনেমার একটা আর্কাইভাল ভ্যালু আছে। আর একজন অভিনেতার কাজই তো তার চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তোলা। পৃথিবীজুড়েই এমন। যদিও আমাদের দেশে ভিন্ন। একজন অভিনেতা এক চেহারা দিয়েই শত শত ছবি করে ফেলেন। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, কয়েকটি ছবি থেকে আলাদা করে ফুটেজ কেটে একটি সিনেমা হয়ে যায়। কারণ, একইতো সব। সব সিনেমায়ই তাকে একইভবে পাওয়া যায়। কিন্তু আসলে তো চরিত্রকে ভাঙতে হয়, ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে হয়। এগুলোই মাথায় রাখি।

সাধারণত আপনার অভিনীত সিনেমাগুলো বিকল্পধারার। বাংলাদেশে এই ঘরানার সিনেমার ভবিষ্যৎ কী?

পৃথিবীজুড়েই এটা হচ্ছে। আসলে আমি বিকল্পধারা বলে আলাদা কিছু বুঝি না। পৃথিবীতে দুই ধরনের সিনেমা হয়—রিয়েলিস্টিক আর ফ্যান্টাসি। যদিও আমাদের উপমহাদেশে ফ্যান্টাসি গল্পের সিনেমা বেশি হয়। নাচ, গান ও অ্যাকশন নির্ভর সিনেমা হয়। তবে আমি জীবনঘনিষ্ঠ গল্পের ছবিতে কাজ করতে ভালোবাসি। আমি তৈরিই হয়েছি সেভাবে। দর্শকও এই গল্পের সঙ্গে চলতে চায়। বলিউডেও আপনি দেখবেন, এখন জীবনঘনিষ্ঠ গল্পের সিনেমাই বেশি হচ্ছে। তা ছাড়া গাঁজাখুরি গল্পের সিনেমায় কাজ করতে উৎসাহ পাই না।

Chanchal

কিন্তু এখানকার দর্শকরা কী এ ধরনের সিনেমায় অভ্যস্ত?

আমরা কী দর্শকদের ওইভাবে তৈরি করতে পেরেছি? পারিনি কিন্তু। এটা নির্মাতাদের কাজ। তারা দর্শকদের বোঝেন। কিন্তু আমি বলব, আমাদের অধিকাংশ দর্শকের রুচির জায়গা উন্নত। কিন্তু আমরা কী তাদের সেটা দিতে পেরেছি? দর্শককে কেবল স্থুল বিনোদন দিয়েছি। দর্শক ওই জায়গাতেই রয়ে গেছেন।  

তো এখন দর্শক তৈরির উপায় কী?

এখন অনলাইনের যুগ। শুধু দেশের কথা ভেবে সিনেমা বানালে হবে না। কেননা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আমাদের মুভি চলছে। এই যেমন ‘পাপ পুণ্য’ বিশ্বের ১২০ টি দেশে চলছে। সেখানে বাংলাদেশি দর্শক বেশি। অন্য ভাষাভাষী কিছু দর্শকও কিন্তু দেখবেন। তাদের কাছেও তো ভালো লাগতে হবে। অতএব আন্তর্জাতিক মানের কথা মাথায় রেখে চলচ্চিত্র বানাতে হবে। আর এখনকার প্রজন্মের কথা যদি বলেন, তাদের অনেক কিছুই জানা। আপনি যা বানাবেন, তাই যে তারা দেখবেন তা নয়।  

‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ বায়োপিকে অভিনয় করেছেন আপনি। নন্দিত নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাই।

বায়োপিকে আমি ছোট্ট একটি অংশ। এখানে কেন্দ্রীয় চরিত্রে শুভ অভিনয় করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সিনেমা বলে অনেকেই এই প্রজেক্টের সঙ্গে থাকতে চেয়েছেন। আমি এখানে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছি। বঙ্গবন্ধুর বাবার দুইটা বয়স আছে। একটাতে আছেন সবুজ ভাই (খায়রুল আলম সবুজ)। আরেকটা অংশে আমি। বঙ্গবন্ধুর বাবার ৪০-৫৫ বছরের সময়টায় অভিনয় করেছি। এটা মূলত বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা থেকে করা। এর বাইরে কিছু না। তা ছাড়া এটা একটা বড় প্রজেক্ট। দুই দেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে। কাজও ভালো হয়েছে। আর শ্যাম বেনেগাল বলিউডের একজন সিনিয়র নির্মাতা। তার অনেক কাজ আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশংসিত হয়েছে। ভালো লেগেছে তার নির্মাণে কাজ করে।

Chanchal

নেটফ্লিক্সের একটি প্রজেক্টের সঙ্গে আপনার যুক্ত হওয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। জয়া আহসানের থাকার কথা ছিল। কাজটির কতদূর কী হলো?

না, এরকম কিছু ফাইনাল হয়নি। ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের অনেক কাজেরই প্রস্তাব আসে। কিন্তু প্রস্তাব আসলেই তো হয় না। এখানে পারিশ্রমিকের ব্যাপার আছে। গল্পের দিকটাও দেখতে হয়। শিডিউলেরও বিষয় আছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এসব চূড়ান্ত না হলে তো হয় না, তাই না? সেটা নেটফ্লিক্স বলেন আর হলিউড বলেন।

অভিনয়ের পাশাপাশি গানেও আপনি বেশ প্রশংসিত। মৌসুমি গায়ক হিসেবেই থাকবেন নাকি গানে নিয়মিত হবেন?

এই বয়সে আর কবে নিয়মিত হব? আর নিয়মিত হলেই কি মানুষ শুনবে নাকি? ওটা শখের বশে করি। শখের বশেই করব। 

আরআর/আরএসও

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর