‘লাভের গুড়’ ঘরে তুলতে দেশের পরিচালক, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পীদের বেশিরভাগই ঈদ মৌসুমে ছবি মুক্তি দিতে আগ্রহী। কেননা উৎসবের এই মৌসুমেই যা সম্ভাবনা থাকে। অন্য সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর তো ব্যবসা করা দূরের কথা হল খরচ তুলতেই নাকানি চুবানি খেতে হয়। সুপারস্টার শাকিব খানও এ পথে হাঁটছেন। ঈদ ছাড়া সিনেমা হলে আসছেন না। এবারের চিত্র অবশ্য ব্যতিক্রম। আগামী ১৫ নভেম্বর মুক্তি পেতে যাচ্ছে তার অভিনীত ‘দরদ’। ঈদ ছাড়া সিনেমা মুক্তি দিয়ে কি কঠিন পরীক্ষায় পড়তে যাচ্ছেন কিং খান— প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক।
তবে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহ সভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন শাকিবের ঈদ ছাড়া ছবি মুক্তিতে কোনো সমস্যা দেখছেন না। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘‘মুক্তির আগেই কিছু ছবি হিট হয়। ‘দরদ’ সেরকম একটি সিনেমা। অনেক আগে থেকেই দর্শকের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে এটি একটি ভালো ছবি হবে। এবার মুক্তির পর বোঝা যাবে অবস্থাটা কী দাঁড়ায়। তবে ভালো হবে আশা করছি।’’
বিজ্ঞাপন
সময়টা বড় কথা না, ছবির গল্পই আসল বলে মনে করছেন তিনি। এরকম উল্লেখ করে বলেন, ‘‘এটি কোনো সমস্যা না। ঈদের ছবি যে সবসময় হিট হয় তাও কিন্তু না। ‘তুফান’, ‘প্রিয়তমা’ ঈদে হিট হয়েছে। এরকম আগেও হয়েছে। কিন্তু ঈদ ছাড়া অন্য সময়ও অনেক ছবি হিট হয়েছে। শুধু ঈদে হলেই যে ভালো ব্যবসা করবে তা না। সবসময়ই ভালো ব্যবসা হবে যদি ছবি ভালো হয়।’’

তবে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস ভাবছেন অন্য কথা। শুরুতেই দুর্দশা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘দর্শক টানার চেয়ে বড় কথা হলো সিঙ্গেল স্ক্রিনের অধিকাংশ হলই বন্ধ আছে। কিছু মাল্টিপ্লেক্সও। তারমধ্যে দুই একটায় হামলাও হয়েছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ছবি নেই। যে সমস্ত সিনেমা রিলিজ হয় সেগুলো স্টাফ খরচ, বিদ্যুৎ বিলসহ আনুষাঙ্গিক খরচ তুলতে ব্যর্থ হয়। ফলে হল মালিক লোকসানেই পড়ে থাকেন। এ কারণে অনেকে সিনেমা হল বন্ধ রেখেছেন।’
এরপর ‘দরদ প্রসঙ্গে আসেন। তিনি বলেন, ‘‘কথা ছিল দরদ পয়লা নভেম্বর রিলিজ করবে। সে (অনন্য মামুন) তো চাচ্ছে এটি বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে মুক্তি দিতে। ভারতে ফলাফল কী হবে জানি না। এমনকি বাংলাদেশেও কী ফল আসবে বুঝতে পারছি না। কারণ সেন্সর বোর্ড ও এফডিসিতে যারা ছবিটি দেখেছে তারা খুব একটা উচ্ছ্বসিত নয়। ভালো হয়েছে বলেছে কিন্তু ‘প্রিয়তমা’, ‘তুফানে’র মতো কিছু হয়নি বলে তাদের মত।’’
বিজ্ঞাপন
_20241012_175615929.jpg)
তারপরও আশাবাদী এ উপদেষ্টা। তার ভাষ্য, ‘‘শুনতে পাচ্ছি বলিউডের ‘স্ত্রী-টু’ ছবিটি বাংলাদেশে আমদানি করা হচ্ছে। আগেই আসার কথা ছিল। দেশে পরিস্থিতির কারণে আনা হয়নি। সবকিছু বন্ধ হয়ে গেল। কমিটি অচল হয়ে গেল। ছবিটি নাকি সেখানে দুর্দান্ত ব্যবসা করেছে। আইটেম গানও নাকি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এটি নিয়ে আমরা আশাবাদী। কেননা অন্তত ফ্যামিলি দর্শক হলে ফেরার সম্ভাবনা আছে এ ছবি দিয়ে। সার্বিক পরিস্থিতির কারণে তারা এখন পুরোপুরি হল বিমুখ। এ অবস্থায় দর্শক আসা যদি শুরু হয় তাহলে হয়তো ‘দরদে’র সময়ও আসবে।’’
তবে সুদীপ্ত কুমার মনে করেন শাকিবের ছবির আলাদা আবেদন আছে। ‘দরদে’র জন্য বন্ধ হলও চালু হবে বলে ধারনা তিনি। বলেন, ‘সবারই শাকিবের ছবি প্রতি আগ্রহ থাকে। এ উপলক্ষে কিছু মৌসুমী হল খুলবে এতেও কোনো সন্দেহ নেই। হল মালিকেরা রাজি না হলেও স্টাফরা ভাড়া করে চালাবে। এ কারণে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য একটি টেস্ট কেস। এটা দিয়ে দর্শক যদি হলে ফিরে তাহলে ভালো। না হলে বিপদ আছে।’

দরদ নিয়ে তার ভাষ্য, ‘‘শাকিব খান ছাড়া ‘দরদে’ আর কোনো বড় তারকা নেই। ফলে মূল আকর্ষণ শাকিব। তার টানে প্রথম তিন দিন দর্শক আসে। ছবিতে যদি দর্শক ধরে রাখার পর্যাপ্ত উপাদান না থাকে তাহলে কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে যায়। চতুর্থ দিন দর্শক ৫০ শতাংশে নেমে যায়। যদি বেশি খারাপ হয় তাহলে দ্বিতীয় দিনই এ চিত্র দেখা যায়। এতটা খারাপ মনে হয় হবে না ছবিটা। একটা সপ্তাহ হয়তো কোনোরকম চলবে। দ্বিতীয় সপ্তাহে সিনেপ্লেক্সগুলোতে থাকবে। ছবি না থাকার কারণে হয়তো সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোতেও চালাবে।’’
তবে কি ঈদ ছাড়া ছবিটি মুক্তির সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক— জবাবে বলেন, ‘অযৌক্তিকের কিছু নেই। আমি যৌক্তিকই মনে করছি। আরও আগে মুক্তি দিলে ভালো হতো। অন্তত শাকিব খানের আকর্ষণে দর্শক আবার সিনেমা হলে আসত। ইন্ডাস্ট্রি সচল হওয়ার সম্ভাবনা থাকত।’

এদিকে ‘দরদের অপেক্ষায় আছেন মধুমিতা সিনেমা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি বলেন, ‘‘চার মাস ধরে হল বন্ধ আছে। অনেকদিন ধরে মানুষ ছবি দেখে না। আমরাও ‘দরদে’র অপেক্ষায় আছি। চাইছি ‘দরদ’ আসুক। দেখি পরিস্থিতি কেমন দাঁড়ায়। কেননা অনেক ছবি আছে ঈদের চেয়ে ভালো গেছে। আর এখন তো ছবি হচ্ছে না। এটা আমাদের ব্যবসার জন্য খুবই খারাপ লক্ষণ। খারাপ সময়। শুনেছি মাল্টিপ্লেক্সগুলোর অবস্থাও নাকি ভালো না। কেননা তাদেরও তো ভাড়া দিয়ে থাকতে হয়। এ অবস্থা চললে বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। অতএব ‘দরদে’র মুক্তি এই মুহূর্তে কাঙ্ক্ষিত।’’
জানা গেছে, সাইকো থ্রিলার গল্পের সিনেমা ‘দরদ’। গত বছর শুরু হয় এ ছবির দৃশ্যধারণের কাজ। বাংলা, হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মালয়ালাম, কর্ণাটক— ছয়টি ভাষায় মুক্তি পাবে ছবিটি।
এতে শাকিব-সোনাল ছাড়াও রয়েছেন বাংলাদেশের সাফা মারওয়া। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, এলিনা শাম্মী, জেসিয়া ইসলাম, রাহুল দেব প্রমুখ। ছবিটির প্রযোজক পশ্চিমবঙ্গের এসকে মুভিজ, বাংলাদেশের অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট এবং মুম্বাইয়ের ওয়ান ওয়ার্ল্ড মুভিজ।
আরআর

