শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

হঠাৎ করেই সামনে দাঁড়ান বড় তারকারা

আলমগীর কবির
প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২২, ০৮:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

হঠাৎ করেই সামনে দাঁড়ান বড় তারকারা

পালে দ্য ভেস্টিভাল ভবনের ভেতর হঠাৎ বড় তারকাদের সাথে দেখা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকে না। হলিউড, বলিউড থেকে শুরু করে বিশ্বের নানা প্রান্তের সিনেমার বড় তারকাদের সাথে এখানে দেখা হয়ে যায় অপ্রত্যাশিতভাবেই। সংবাদ সম্মেল থেকে বের হওয়ার পর যে তারকার দেখা পেতে শতশত ভক্ত, অনুরাগী ও পাপ্পারাজ্জিদের যন্ত্রণা পোহাতে হয়, তাকেই কিছুক্ষণ পর পালে দ্য ফেস্টিভাল ভবনের ছাদ কিংবা করিডোরে হাঁটতে দেখা যায় একা একা। দূরে অবশ্য তাদের সিকিউরিটিরা থাকেন, তবে তারকাদের স্বাভাবিকতায় এটা কোনো বাধা হয় না।

শুক্রবার (২৭ মে) সকালে গ্র্যান্দ থিয়েটার লুমিয়ারে দেখানো হয়েছে কোরিয়ান সিনেমা ‘ব্রোকার’। এর গল্প সাজানো হয়েছে একটি শিশু বিক্রির ‘ফাদ’-কে কেন্দ্র করে। তিনজন অপরাধী শিশুটি বিক্রি করতে সঙ্গবদ্ধ হয়। নানা কৌশলে বিভিন্ন পরিবারের সাথে তারা যোগাযোগ করেন শিশুটিকে বিক্রি করার জন্য। এর বার্তা অনেকটা‘ক্রাইম অব ফিউচার’-এর বিপরীত। ওই সিনেমায় গর্ভপাতকে নেতিবাচক চোখে দেখা হয়। আর এখানে বলা হয়েছে যত্রতত্র শিশু জন্ম দেওয়ার চেয়ে গর্ভপাত অনেক ভালো।


বিজ্ঞাপন


এই সিনেমা দেখে বের হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে দেখা হয় ‘ব্রোকার’র  জাপানি পরিচালক কোরে-এডা হিরোকাজু এবং ছবির কলাকৌঁশলীদের সাথে। সাংবাদিকদের সাথে ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাপান ও কোরিয়া ফিল্ম স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী। তাদের আগ্রহ দেখে বুঝা গেছে নিজ দেশে তারকাদের জনপ্রিয়তার বিষয়টি। তাদের অটোগ্রাফ নিতে ভিড় দেখে দ্রুতই স্থান ত্যাগ করি। কিছুক্ষণ পর ওই তারকাদের সাথে দেখা হয় করিডোরে। সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা দক্ষিণ কোরিয়ান অভিনেতা সং কাং-হো-এর কাছে নিজের পরিচয় দেওয়ার পর খুব বিনয়ী ব্যবহার করলেন। এর আগে এ আর রহমানের সাথে দেখা হয়েছিল হুট করেই। বাংলাদেশি জানতে পেরে হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নিজেই তুলেছিলেন সেলফি। আর দীপিকার সাথে দেখা হয়েছে একাধিকবার। প্রতিবারই তার ব্যবহার ছিল বিনয়ী। হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও এখানে পাওয়া যায় হুট করেই।

kan2

এর আগে উৎসবের সপ্তম দিন একটি সুপার ন্যাচারাল, ফ্যান্টাসি মুভি দেখার সুযোগ হয়েছিল। যার ফরাসি নাম ‘লে সাঙ্ক ডিয়াবেল’ বা ‘দ্য ফাইভ ডেভিলস’। ডিরেক্টর্স ফোর্টনাইটেই-এর প্রথম প্রদর্শনী হলো। ছবিতে জোয়ান চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘ব্লু ইজ দ্য ওয়ার্মেস্ট কালারে’র অন্যতম অভিনেত্রী অ্যাডেল এক্সারকোপুলস। আর তার মেয়ে ভিকি চরিত্রে স্যালি ড্রামে। লেয়া মাইসিয়ুসের দ্বিতীয় এই কাহিনিচিত্রে ভিকি মেয়েটি বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন। সে গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারে কোন জিনিস কত দূরে আছে। এমনকি ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস থেকে নির্যাস নিয়ে, অন্য কিছু মিশিয়ে নিজের মতো করে গন্ধ প্রস্তুত করে ওই ব্যক্তির অতীতও জানতে পারে সে। ভিকির পিসি জুলিয়ার সঙ্গে তার মা জোয়ানের সম্পর্ক ছিল। অর্থাৎ জোয়ান বাইসেক্সুয়াল। এই সম্পর্ক ধীরে ধীরে অতীত খুঁড়ে আবিষ্কার করে ভিকি। সে তখন ভাবতে শুরু করে, জুলিয়ার কারণে মা তাকে দূরে সরিয়ে দেবে। অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যায় ভিকি। ছবির গল্প বলার ধরনটি চমৎকার লেগেছে, তবে হালকা প্লট। পরিচালক একটি অতিপ্রাকৃত গল্প বলতে চেয়েছেন, এর বেশি কিছু নয়। ছবি শেষে দর্শক বেশ হাততালি দিয়েছে। এই হাততালির বড় কারণ আসলে অভিনেত্রী অ্যাডেল।

এখানে আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, কানের দর্শক সত্যিই বোদ্ধা দর্শক। তাদের তারিফ বোঝা যায় তালির স্থায়িত্ব দিয়ে। মাইসিয়ুসের ছবি দেখে লোকে যেমন হাততালি দিয়েছে, তেমনি পরের যে ছবিটি দেখেছি, ক্রিটিকস উইক সেকশনে, ‘তাসাভর’বা ‘ইমাজিন’, সেটা দেখার পর দর্শক না পারতে দু-চারটে হাততালি দিয়ে বেরিয়ে গেছেন। ইরানি পরিচালক আলি বেহরাদ ছবিটি বানিয়েছেন এক ট্যাক্সিচালক ও এক নারীকে নিয়ে। নারীটি ট্যাক্সিচালকের চেয়ে বয়সে বড়, তাই তাকে প্রেম নিবেদন করতে পারে না। নারীটি তার যাত্রী। কল্পনার ডালপালা মেলতেই থাকে চালকের মনে। কিন্তু সেটি পরিণতি পায় না। ছবির অধিকাংশ সময়েই দেখা যায় রাতের তেহরানে নারীটিকে নিয়ে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে ট্যাক্সি। শেষ পর্যন্ত তাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে চালক। আসলে এই ছবিটির না আছে চিত্রনাট্যের ঠাস বুনোট, না আছে গল্পের ধার। তার ওপর এই ধরনের ট্যাক্সিনির্ভর ছবি তারই দেশের মাস্টার ফিল্মমেকার জাফর পানাহি বানিয়ে ফেলেছেন। সেটার নাম ছিল ‘ট্যাক্সি’ (২০১৫)। পরিচালক ছবি শুরুর আগে কথা বলেছেন, এরপর দর্শকদের সঙ্গে বসেই ছবি দেখেছেন। কিন্তু সমাপ্তি টানার সঙ্গে সঙ্গেই দর্শক প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে যেতে থাকে। পরিচালককে তখন বেশ অসহায় দেখাচ্ছিল। অন্য সব ছবির বেলায় কিন্তু এমনটা হয় না। ভালো ছবি হলে দর্শক দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে প্রেক্ষাগৃহ কাঁপিয়ে দেয়। কানে ‘ইমাজিন’ দিয়ে মন মাতানোর কল্পনা আর সত্যি হলো না এই পরিচালকের।


বিজ্ঞাপন


kan2

থিয়েত খোয়াসেতে নির্বাক হোম ভিডিও নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ছিল আকর্ষনীয়। ফরাসি দেশের প্রখ্যাত লেখিকা অ্যানি এখন্যুর এই ‘লেস্যানি সুপ্যাখ হুইত’ বা ‘দ্য সুপার এইট ইয়ার্স’ ছবিতে ১৯৭২ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত হ্যান্ডিক্যামে ধারণকৃত পারিবারিক ও বিভিন্ন জায়গায় পর্যটনের ভিডিও রয়েছে। নির্মাণে তার সহযোগী ছিলেন ডেভিড এখন্যু-ব্রিয়ত। অ্যানি ও তার পরিবারের সদস্যরা সেসব ধারণ করেছেন। মূলত অ্যানির স্বামী ফিলিপ। আট মিলিমিটার ক্যামেরায় ধারণ করা এই প্রামাণ্যচিত্রে উঠে এসেছে তৎকালীন জীবনযাপন, সমাজ, ইতিহাস ও রাজনীতি। ছবিটি ব্যক্তিগত জার্নালের মতো, ভিডিও জার্নাল বলা যেতে পারে।

ছবিটি এক ঘণ্টার। শেষ করেই ছুটলাম প্যালে দ্য ফেস্টিভালের ভেতরে ক্যাফেতে। এই ক্যাফেটি অনেকেরই পছন্দের। এর কারণ খাবার নয়, পরিবেশ। মন ভালো হয়ে যায় দেখলে। ওপরে কাচের ছাদ। রোদ এসে পড়ে পুরো মেঝেতে। খুব সুন্দর।

একেবি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর