‘আমার প্রেম, আমার ভালোবাসা, আমার সবকিছু অভিনয় আর চলচ্চিত্র। এ ছাড়া আমি আর কিছু জানি না, পারি না। আল্লাহ আমাকে অনেক সুযোগ দিয়েছেন। অনেক কিছু করতে পারতাম। করিনি।’
মৃত্যুর আগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাক বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই নিজের সম্পর্কে বলছিলেন। এ দেশের চলচ্চিত্রের জন্য তিনি কিছু করেছেন কি না— এমন হিসাব কষতে যদি চাই, তাহলে সেটা সফল না হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ, এ দেশের চলচ্চিত্রে তার অবদান কোনো নিক্তি দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না। দীর্ঘ ৫০ বছরে তিনি ঢাকাই চলচ্চিত্রকে মুঠোভরে এতটাই দিয়ে গিয়েছেন, যার ঋণ শোধ করার চিন্তা করা ধৃষ্টতার শামিল।
আজ ২১ আগস্ট এই কিংবদন্তির চলে যাওয়ার দিন। ২০১৭ সালে এই দিনে (২১ আগস্ট) না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। দেখতে দেখতে হয়ে গেল সাত বছর। তবে ঢালিউডে নয় রাজ্জাকের ইচ্ছা ছিল বলিউডে ক্যারিয়ার গড়ার।
বিজ্ঞাপন
১৯৬১ সালে অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়তে মাত্র ১৮ বছর বয়সে রাজ্জাক চলে যান মুম্বাইয়ে৷ কিন্তু সেখানে নিজের জায়গা তৈরি করতে না পেরে ফেরত আসেন টালিগঞ্জে। সেখানেও সফল না হয়ে ১৯৬৪ সালে পাড়ি জমান বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান)।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চলচ্চিত্র জগতে রাজ্জাকের শুরুটা হয়েছিল সহকারী পরিচালক হিসেবে। পরিচালনা থেকে তাকে বেশি টানত অভিনয়। একবার আনিস নামের অন্য এক সহকারী পরিচালক অভিনয় করার কথা বলেন। তিনি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলেন। ঢাকায়ও কয়েকটি ছবিতে ছোট ছোট ছবিতে অভিনয় করা আরম্ভ করলেন। পাশপাশি মঞ্চনাটকে যোগ দিলেন। নাট্যকার আবদুল সাত্তারের নির্দেশিত ‘পাত্রী হরণ’ নাটকের মাধ্যমে ঢাকায় তিনি প্রথম মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। মাঝেমধ্যে তিনি এখানে-ওখানে অভিনয়ের জন্য অডিশন দিতে যেতেন। ছোট ছোট টেলিভিশন নাটিকাতেও অভিনয় করার সুযোগ পান।
পর পর দুটি ছবিতে সহকারী পরিচালনা করার পর কাজ ছেড়ে জহির রায়হানের সঙ্গে দেখা করেন। জহির রায়হান তাকে ভালোভাবে পরখ করে নিজের লেখা ‘হাজার বছর ধরে’ ছবির জন্য নির্বাচিত করেন। পরে কোনো এক কারণে ছবিটি হয়নি। পরে ‘বেহুলা’ ছবি দিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে সফল হন। ছবিটি ব্যবসায়িক সফলতা পাওয়ায় তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। রীতিমতো রিফিউজি থেকে নায়ক হয়ে গেলেন তিনি। একে একে ‘নিশি হলো ভোর’, ‘বাঁশরী’, ‘ময়নামতি’, ‘মনের মতো বউ’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘আলোর মিছিল’সহ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করে নিজের জাত চেনান। ক্রমান্বয়ে তিনি নির্মাতা-প্রযোজকদের ভরসার প্রতীক হয়ে ওঠেন। এসব ছবি বর্তমানে এসে কালজয়ী ছবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

