চলচ্চিত্রাঙ্গনে ‘কাস্টিং কাউচ’ নতুন কিছু নয়। অনেক আগে থেকেই পর্দার আড়ালে এমনটা চলছে। উঠতি অভিনয়শিল্পী বিশেষ করে অভিনেত্রীদের সঙ্গে বেশি ঘটছে। অনেকেই লালসার শিকার হয়েছেন প্রযোজক-পরিচালকদের। সম্প্রতি আরও একবার ঘটল এমন ঘটনা। ভুয়া অডিশনের নাম করে গোপনঙ্গে হাত দেওয়া হয়েছে টলিউড অভিনেত্রীর।
পশ্চিমবঙ্গ এখন তরুণী চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় উত্তপ্ত। গত ১৪ আগস্ট রাতের বেলা রাত দখলের কর্মসূচী দিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন সেখানকার নারীরা। ঠিক ওই রাতে এক ফাঁকা ফ্ল্যাটে অভিনেত্রীকে একা পেয়ে করা হয় হেনস্তা।
বিজ্ঞাপন
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেনস্তার শিকার ওই অভিনেত্রী। তার অভিযোগ, কাস্টিং কো-অর্ডিনেটরের ভুয়া পরিচয় দিয়ে তাকে হেনস্থা করেছেন সুমন সরকার নামে এক ব্যক্তি।
সুমন সরকারের ইনস্টাগ্রাম আইডিতে লক্ষাধিক অনুসারী। আইএমডিবিতেও রয়েছে তার প্রোফাইল। কথাবার্তায়ও দারুণ চটপটে। ফলে তার কারসাজি ধরতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ওই অভিনেত্রী।
ভারতের নামী একটি ওটিটি মাধ্যমে দুটি ওয়েব সিরিজে কাজের লোভ দেখানো হয়েছিল ওই অভিনেত্রীকে। এতে পঙ্কজ ত্রিপাঠী, ম্রুণাল ঠাকুরের মতো অভিনয়শিল্পীরা থাকবেন বলে জানানো হয়েছিল।
এও বলা হয়েছিল যে পারিশ্রমিক বাবদ তাকে দেওয়া হবে এক কোটি ৪০ লাখ রুপি। মৌখিকভাবেই তাকে নির্বাচিত করা হয়েছে জানিয়ে ১৪ আগস্ট পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছিল। পরীক্ষা দিতে গিয়েই হতে হয় হেনস্তা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে অভিনেত্রী বলেন, “এত কিছু শোনার পর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। চিন্তা না করে রাজি হয়ে যাই। ভাল করে খোঁজ নিইনি। এমনকি, কাউকে না সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা দিতে চলে গিয়েছিলাম। এও মনে ছিল না, কোনো জাতীয় স্তরের ওয়েব প্ল্যাটফর্ম মৌখিকভাবে কোনো অভিনেত্রীকে পাকা কথা দেয় না।”
আরও বলেন, “ইনস্টাগ্রামে ওর প্রোফাইল থেকে হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার পেয়েছিলাম। যোগাযোগ করার পর বলেন, তিনি কলকাতায় এলে ডেকে নেবেন। এরপর ১৪ অগস্ট পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ডাকেন।”
পূর্ব পরিচিত না হওয়ায় নির্দিষ্ট দিনে সুমন তাকে প্রথমে রাজারহাট শপিং মলে কফির দোকানে আসতে বলেন। আলাপের পর অভিনেত্রীকে শপিং মল থেকে পনেরো মিনিট দূরে একটি ফাঁকা ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। জানান, আলাদাভাবে ডেকে প্রত্যেকের পরীক্ষা নিচ্ছেন। অথচ সেখানে সুমন ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি নেই! কোনো চিত্রগ্রাহকও ছিলেন না।
সেখানে অভিনেত্রীকে খোলামেলা পোশাক পরিয়ে নানাভাবে ছবি তোলেন সুমন। আচমকা তার গোপনাঙ্গ স্পর্শ করেন। অবস্থা বেগতিক বুঝে প্রতিবাদ জানিয়ে অভিনেত্রী দ্রুত ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি বলেন, “যাতে সন্দেহ না করি তাই সুমন নিজে টাকা দিয়ে ক্যাব বুক করে দিয়েছিলেন। অডিশনের ঢঙে প্রত্যেকটা কথা বলেছেন। গায়ে হাত দেওয়ার পরেও জানিয়েছেন, এটাও পরীক্ষার একটি অঙ্গ। সব ক্ষেত্রেই এটা হয়।”
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সুমন। আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি বলেন, “আমি কাউকে জোর করিনি। কলকাতার অভিনেত্রী স্বেচ্ছায় পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। যা যা বলেছি তাই-ই করতে রাজি হয়েছিলেন। ওর ফেরার ব্যবস্থাও করে দিই। ঠিকঠাক ফিরেছেন কিনা, খবর নিই। এতই যদি আমার থেকে আপত্তিজনক ব্যবহার পেয়ে থাকেন, তাহলে আমাকে মুঠোফোন বার্তায় হাসিমুখের চিহ্ন দিয়ে কেন জানিয়েছিলেন, তিনি ঠিকমতো ফিরেছেন?”
এদিকে আরও অভিনেত্রী সুমনের দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন। তিনিও মুখ খুলেছেন। তার কথায়, “সুমন সাধারণত ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল দেখে তুলনায় নতুন বা আনকোরাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর ভুয়া কাজের টোপ দেখিয়ে শরীর স্পর্শ করেন, ছবি ও ভিডিও তোলেন। আমাকে ‘অভয়’ছবির নাম করে অডিশনে ডেকেছিলেন। পরে জানতে পারি, ওই ছবির শুটিং অনেক দিন আগেই শেষ। আমার এক পরিচিত সে দিন সঙ্গে ছিলেন। সম্ভবত তাই সুমন কুপ্রস্তাব দিয়ে উঠতে পারেননি। পাশাপাশি, ফাঁকা ফ্ল্যাটে পরীক্ষা দিতেও রাজি হইনি। ফলে, সে যাত্রায় রক্ষা পেয়ে যাই।”

