অখণ্ড পাকিস্তানের পূর্বাংশে চলচ্চিত্র শিল্প গড়ে ওঠেনি তখনও। পশ্চিম পাকিস্তানকেন্দ্রিক চলচ্চিত্রই নির্মিত হতো। পশ্চিম পাকিস্তানিদের অনেকেই মনে করতেন, পূর্ব পাকিস্তানে কখনও চলচ্চিত্র নির্মাণ সম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, তারা নানারকম বিরূপ মন্তব্য করতেন।
চলচ্চিত্রটিতে যারা অভিনয় করেছেন তাদেরও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না। অনেকটা মনের সাহসে নতুন কিছু করার প্রত্যয়ে বিনা পারিশ্রমিকে অভিনয় করেন তারা। কারণ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা চেয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের নেতিবাচক মন্তব্যের সমুচিত জবাব দিতে।
পশ্চিম পাকিস্তানের প্রযোজক এফ দোসানি ছিলেন তাদেরই একজন। তিনি একবার পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র শিল্প গড়ে ওঠা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। তার নেতিবাচক মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে আবদুল জব্বার খান নামে একজন ব্যক্তি পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন। নির্মাণ করেন ‘মুখ ও মুখোশ’ নামে একটি কালজয়ী চলচ্চিত্র। যা পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃত। সে হিসেবে আবদুল জব্বার খানকে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের দিকপাল বলা হয়। ‘মুখ ও মুখোশ’ নির্মাণের একটি অনুপ্রেরণাময় ইতিহাস আছে। বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের উচিত এই ইতিহাস জানা।
কখনও কখনও তীব্র ক্ষোভ, রাগ থেকে ভালো কিছু জন্মায়। ‘মুখ ও মুখোশ’ চলচ্চিত্রটি ঠিক তেমনই। ১৯৫৩ সালে আবদুল জব্বার খান ‘মুখ ও মুখোশ’ চলচ্চিত্রটির কাজ আরম্ভ করেন। সে সময় পূর্ব পাকিস্তানে কোনো চলচ্চিত্র শিল্প গড়ে ওঠেনি।
আবদুল জব্বার খান প্রায় এক বছর ধরে পূর্বপ্রস্তুতি নেন অর্থ্যাৎ প্রি-প্রোডাকশনের কাজ করেন। তারপর ১৯৫৪ সালের ৬ আগস্ট হোটেল শাহবাগে ছবিটির মহরত হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর ইস্কান্দার মির্জা চলচ্চিত্রটির মহরত উদ্বোধন করেন।
বিজ্ঞাপন
শুটিং আরম্ভ হলে দৃশ্যধারণের পর নেগেটিভ ডেভেলপের জন্য লাহোরে পাঠানো হয়। সে সময় স্থানীয়ভাবে কোনো স্টুডিও না থাকায় বাধ্য হয়ে লাহোরের স্টুডিওর দ্বারস্থ হতে হয়।
চলচ্চিত্রটিতে যারা অভিনয় করেছেন তাদেরও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না। অনেকটা মনের সাহসে নতুন কিছু করার প্রত্যয়ে বিনা পারিশ্রমিকে অভিনয় করেন তারা। কারণ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা চেয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের নেতিবাচক মন্তব্যের সমুচিত জবাব দিতে।
শুটিং আরম্ভ হলে দৃশ্যধারণের পর নেগেটিভ ডেভেলপের জন্য লাহোরে পাঠানো হয়। সে সময় স্থানীয়ভাবে কোনো স্টুডিও না থাকায় বাধ্য হয়ে লাহোরের স্টুডিওর দ্বারস্থ হতে হয়।
১৯৫৬ সালে কাজ শেষ হলেও আবদুল জব্বার খান ছবিটি নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে ফেরার অনুমতি না পাওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানের লাহোরে ছবিটির প্রথম প্রদর্শনী করা হয়। তারপর যখন ছবিটি নিয়ে তিনি দেশে ফিরলেন, তখন কোনো প্রেক্ষাগৃহ ছবিটি প্রদর্শন করার আগ্রহ দেখায়নি বা প্রদর্শন করতে চায়নি। তবু দমে যাননি আবদুল জব্বার খান। চেষ্টা চালিয়ে যান।
অল্পদিনের মধ্যে ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট ছবিটি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও খুলনায় একযোগে মুক্তি পায়। ছবিটি সেই সময়ে আয় করেছিল ৪৮ হাজার রুপি। এখানে বলে রাখা ভালো ‘মুখ ও মুখোশ’ সবাক চলচ্চিত্র।
আরএসও

