সিডির জামানায় সংগীতাঙ্গনে আগমন ঘটে তৌসিফ আহমেদের। প্রথম অ্যালবাম দিয়েই তিনি জয় করেছিলেন শ্রোতাদের মন। এরপর নিয়মিত নতুন গান প্রকাশের মাধ্যমে সেই ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন। তবে একটা সময় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় গান থেকে দূরে সরে যান। পাঁচ বছর পর আবার নতুন গান নিয়ে হাজির হয়েছেন তিনি। ঢাকা মেইলকে শুনিয়েছেন তার এই ফিরে আসার গল্প। জানিয়েছেন ক্যারিয়ার পরিকল্পনা।
পাঁচ বছর পর গানে ফিরলেন। আগের মতো সাড়া পাচ্ছেন?
বিজ্ঞাপন
গানের প্রমোশন সেভাবে করতে পারিনি। তাছাড়া সেসময় আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। এসব কারণে গান প্রকাশের পর সময় দেওয়া সম্ভব হয়নি। গানটাও অনেক আগে করা ছিল। এখন নতুন গান নিয়ে ভাবছি। এবার ঈদে নতুন তিনটি গান আসবে আমার।
প্রথম অ্যালবামেই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। আপনার অনেক গান জনপ্রিয় হয়েছিল। তবুও কেন আড়ালে চলে গিয়েছিলেন?
এটা অবশ্য ব্যক্তিগত কারণেই হয়েছিল। বিয়েশাদি করার পর পরিবার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাদের সময় দিচ্ছিলাম। তাছাড়া টানা দশটি অ্যালবাম করার পর মনে হয়েছিল একটা বিরতি নেওয়া দরকার। এসব কারণেই মূলত একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়।
এর মধ্যে কখনও কি গানে ফেরার ইচ্ছা হয়নি?
বিজ্ঞাপন
ইচ্ছা ছিল আমার শ্রোতাদের নতুন গান দেই। কিন্তু সেসময় আমাদের সংগীতে একটা পরিবর্তন আসে। সিডি থেকে অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়ে গানগুলো। সবার মাঝে ভাইরাল হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল। তখন মূল শিল্পীদের চেয়ে শখের শিল্পীদের আনাগোনা শুরু হয়। ভাইরাল হওয়ার লোভে খারাপ গান করার প্রবণতা বেড়ে যায়। সেকারণে বুঝতে পারছিলাম না যে, নতুন গান করব কী করব না। বলা যায়, আমি কনফিউজড ছিলাম তখন।
নতুন করে ফিরে আসলে আগের সেই জনপ্রিয়তা ফিরে পাওয়া যায় না। আপনার কাছে কী মনে হয়?
আসলে একবার বিরতিতে গেলে দেখা যায় যে, শূন্যস্থানটা পূরণ হয়ে যায়। এটা শুধু আমাদের এখানে না। বিশ্বব্যাপী খেয়াল করা যায়। আমার ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছে। আমার পরে যারা এসেছেন তারা বেশ ভালো করেছেন। ভালো ভালো গান উপহার দিয়েছেন। তবে আমি আমার মতো করে কাজ করতে চাই। আমার যারা শ্রোতা রয়েছেন, যারা আমার গান এখনও শোনেন তাদের জন্য গান করে যেতে চাই।
সিডি থেকে অনলাইনে গান প্রকাশের কথা বলছিলেন। এই দুইয়ের মধ্যে কেমন পার্থক্য দেখেন?
অনেক পার্থক্য রয়েছে। আগে একটা অ্যালবামে ১০-১২টি গান থাকত। একেকটা গান একেক রকম হত। শ্রোতাদের গান বাছাই করার একটা সুযোগ থাকত। তখন আমরা নিজেরাও জানতাম না, কোন গানটি শ্রোতারা নেবেন। এখন আর সে সুযোগটি নেই। একটা করে গান রিলিজ দিতে হয়। সেক্ষেত্রে শ্রোতাদের পছন্দ করার সুযোগ থাকে না। তাছাড়া কিছু অনৈতিক কারণও দেখা যায়। আজকাল ভিউয়ের মাপকাঠিতে গানের জনপ্রিয়তা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ভিউ তো টাকা দিয়েও কেনা যায়। এটা খুবই বিরক্ত লাগে আমার কাছে। তবে আমি হতাশ নই।
আপনার সবগুলো অ্যালবামের নামের প্রথম অক্ষর অ দিয়ে শুরু হয়েছে। কারণ?
এর কারণ হচ্ছে, আমার প্রথম অ্যালবামের নাম অভিপ্রায়। এই অ্যালবামটি এসেছিল জি সিরিজের প্রতিষ্ঠান অগ্নিবীণা থেকে। এর মাধ্যমেই অগ্নিবীণার যাত্রা শুরু। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ অগ্নিবীণার অ দিয়ে আমার প্রতিটি অ্যালবামের নামের শুরু করেছি।
এখন জনপ্রিয় অ্যাপের নাম স্পটিফাই। এর মাধ্যমে গান দেখার পরিবর্তে শোনায় অভ্যস্ত হচ্ছেন অনেকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রোতাদের নিকট এটির ভীষণ কদর। কিন্তু আমাদের এখানে তার ব্যতিক্রম। এর কারণ কী বলে মনে করেন?
আমাদের দেশে প্রচলিত সামাজিক মাধ্যমগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ফেসবুক। সেকারণে সবাই গান দেখার জন্য ফেসবুকে বা ইউটিউবে যান।স্পটিফাই দারুণ একটি মাধ্যম। তবে এটা চালু করতে হলে মানুষের মধ্যে এর ব্যবহারের প্রবণতা বাড়াতে হবে। তবেই আমরা ফিরে পাব গান শোনার সেই দিন।
একাধিক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। কিন্তু আপনার পুরস্কারের ঝুলি সমৃদ্ধ নয়। এটা নিয়ে আক্ষেপ হয়?
আসলে পুরস্কার নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যাথা ছিল না। গান করে যাওয়াই ছিল তখন একমাত্র কাজ। কোনো গান নমিনেশন পেল কি না, কিংবা কোথায় গান জমা দিলে নমিনেশন পাব— এসবও ভেবে দেখতাম না। আরেকটি কথা হলো, যারা পুরস্কার দিতেন তারা হয়ত আমার কন্ট্রিবিউশনকে মূল্যায়ন করেননি।
কী মনে করেন— গানকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সুযোগ আছে এ দেশে?
একটা সময় এই সুযোগটা ছিল। তখন দেখা যেত এক গান হিট হলেই জীবন পাল্টে যেত। এখন আর সেই সময় নেই। তবে এই মুহূর্তে যারা গান করছেন তাদের আয় কিন্তু খারাপ না। তাদের অনেকেই একে পেশা হিসেবে নিয়েছেন।
অনেকে বলেন, অনলাইন নির্ভরতা দেশের সংগীতের বাজার নষ্ট করেছে। আপনার কী মনে হয়?
আসলে এটা ছিল একটা বৈশ্বিক পরিবর্তন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো আমরাও এই পরিবর্তনের সম্মুখীন হয়েছিলাম। তবে অন্যান্য দেশ এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারলেও আমরা পারিনি। কারণ, ওই সময় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর যে সাপোর্ট দেওয়া প্রয়োজন সেই সাপোর্ট তারা দেয়নি। ফলে বাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
আরআর/আরএসও