কোকা-কোলার বিজ্ঞাপনের সাতে পাঁচে না থেকেও নেটিজেনদের তোপের মুখে কাজল আরিফিন অমি। ঈদে মুক্তিপ্রতীক্ষিত ওয়েব সিনেমা ফিমেল ৪ সহ তার সকল কাজ বয়কটের ডাক তুলেছে নেটাগরিকদের একটি অংশ। এমনবকি বিষ্যটি সমাধানের জন্য ‘সাইবার কমিউনিটি’নামক একটি পেজ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে এ নির্মাতাকে।
এদিকে অমি এর আগেই নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তারপরও তার ওপর এরকম ক্ষোভ ঝাড়ায় নির্মাতা যেন অনেকটা অবাক। কেন এই সমালোচনা হচ্ছেন বিষয়টি বুঝতে পারছেন না তিনি।
বিজ্ঞাপন
এ অবস্থায় অমির পাশে দাঁড়ালেন অভিনেত্রী মনিরা মিঠু। গতকাল মঙ্গলবার দর্শকের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন অমি। সেটি শেয়ার দিয়ে মনিরা মিঠু লিখেছেন, স্পষ্ট বক্তব্য। আর কিছুই বলার নাই।
এতে বয়কটকারীদের কেউ কেউ অবিনেত্রীর ওপর ক্ষোভ ঝাড়া শুরু ক্রএছেন। অমির পক্ষে দাঁড়ালে তাকেও বয়কট করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন তারা। তবে সেসবের কোনো উত্তর দেননি মনিরা মিঠু।
অমি ওই পোস্টে লিখেছিলেন, মানবতা ও বিবেক এ দুটি বিষয় একজন মানুষকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার কাজের মাধ্যমে মানবতা এবং বিবেককে জাগ্রত রাখতে। গত রোজার ঈদের পর থেকে আমরা টানা ১২ দিন হিট ওয়েভের মধ্যে ফিমেল ৪ শুটিং করি। ব্যাপক পরিসরে এবং পুরো ইউনিটের সবাই মিলে কঠোর পরিশ্রম করি। শুধুমাত্র আপনাদেরকে বিনোদন দেওয়ার জন্য।
এরপর লিখেছিলেন, আমি সব সময় চেষ্টা করি সাধারণ মানুষের হয়ে কথা বলতে। সাধারণ মানুষের জীবনের ছোট-ছোট বিষয় তুলে ধরতে আমার কাজের মাধ্যমে। তারই ধারাবাহিকতায় আমি বানিয়েছিলাম বিদেশ, কিডনি, দই, শেষমেশ এবং আপনাদের ভালোবাসায় আজকে আমি এখানে। আমি আবেগ আপ্লূত এবং কৃতজ্ঞ আপনাদের প্রতি।
বিজ্ঞাপন
এ সময় বিজ্ঞাপনটি নিয়ে এ নির্মাতা লিখেছিলেন, একটি বিজ্ঞাপনের সাথে সম্পৃক্ততা থাকে একটি এজেন্সির, কোম্পানির এবং বিজ্ঞাপন নির্মাতার। গতকাল থেকে যে বিজ্ঞাপনের ইস্যুটি নিয়ে আমার দর্শক, আমার পরিবার ও দেশবাসী বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, আমি সবার কাছে একটি বিষয় পরিষ্কার করতে চাই যে, উক্ত বিজ্ঞাপনের সাথে আমি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই। আমি একজন পরিচালক। কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রী যখন আমার প্রজেক্টে কাজ করতে আসে আমি শুধুমাত্র তাদের ডিরেকশন দেই। তাদের ব্যক্তিগত জীবন, তাদের কাজ, তাদের পথ চলা— এর কোনোকিছুর সাথেই আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। অবশ্যই তারা আমার টিম মেম্বার কিন্তু সেটা শুধুমাত্র যখন তারা আমার কাজ করবেন তখন। এর বাইরে তাদের ব্যক্তিগত জীবন আছে।
অমি লিখেছিলেন, আপনারা আমার ওপর রাগ করছেন, আবেগ আপ্লুত হচ্ছেন। আমি আপনাদের সকল রাগ-অভিমান মাথা পেতে নিচ্ছি। কারণ বিজ্ঞাপনটির অভিনয়শিল্পী যারা আছেন, তারা আমার সাথে অনেকদিন ধরেই কাজ করছেন। আপনারা অনেকেই হয়তো এই অভিনয়শিল্পীদের আমার পরিচালিত কাজের মাধ্যমে চেনেন। কিন্তু আমি শুধুমাত্রই এই অভিনয়শিল্পীদের পরিচালক, তাদের অভিভাবক নই।
অমির কথায়, তারা ব্যক্তিগত জীবনে কী করবেন, তা সম্পূর্ণই তাদের নিজস্ব ব্যাপার। আমার তাতে কোনো হস্তক্ষেপ নেই। আর আপনারা যারা তাদের ওপর অভিমান করে বলছেন, আমাদের এত কষ্টে বানানো ফিমেল ৪ দেখবেন না, অভিমান করে বলছেন, আমরা বয়কট করছি ফিমেল ৪। আপনারা নিশ্চয়ই পরিবারের একজন ভুল করলে সেই পরিবারের অন্য সদস্যদের শাস্তি দেবেন না।
অমি লিখেছিলেন, আমরা যারা একসাথে কাজ করি আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য বলে আমি মনে করি। আমাদের পরিবারের কেউ যদি ভুল করে থাকে, সে তার ভুল বুঝতে পারে এবং সে যদি ক্ষমাপ্রার্থী হয়, অবশ্যই আমাদের প্রত্যাশা তাকে যেন দেশবাসী এবং সাধারণ মানুষ ক্ষমা করে দেয়।
এ নির্মাতা লিখেছিলেন, ২০১০ সাল থেকে মিডিয়াতে আমার পথচলা। এই ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে সবসময় চেষ্টা করেছি দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার উদ্দেশ্যে কাজ করতে। আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতেও গল্প এবং শিল্পী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি আমার দর্শকদের চাহিদা সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করব। আশা করছি আপনারা আমাকে কেউ ভুল বুঝবেন না এবং আমার পরিশ্রমকে বিফলে যেতে দেবেন না।
সবশেষে অমির অনুরোধ ছিল, আমার কাজে কোনো অভিনয়শিল্পীর ব্যক্তিগত জীবন খুঁজবেন না। আমি কারও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাজ করি না। আমি আমার গল্পের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি, যে চরিত্রগুলো আমাদের সমাজের প্রতিচ্ছবি।
এদিকে এরইমধ্যে বিজ্ঞাপনটির নির্মাতা ও অভিনেতা শরাফ আহমেদ জীবন সামাজিক মাধ্যমে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। পাশাপাশি ক্ষমা চেয়েছেন বিজ্ঞাপনটির আরেক মডেল শিমুল শর্মা। তারপরও ক্ষোভ মিটছে না বয়কটকারীদের।