রোববার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

বিশেষ দিনে মাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করি: দিতিকন্যা 

রাফিউজ্জামান রাফি
প্রকাশিত: ১২ মে ২০২৪, ০৬:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

বিশেষ দিনে মাকে ভুলে থকার চেষ্টা করি: দিতিকন্যা 
সন্তানের জীবনে বিশেষ মানুষ তার মা। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকেন তিনি। সন্তান শত ক্রোশ দূরে থাকলেও মা সবসময় নিজের প্রার্থনায় রাখেন। সবসময়, সব মুহূর্তেই মাকে ভালোবাসা যায়। তারপরও পশ্চিমা দেশগুলোতে পালিত হয় বিশেষ দিবস। এই দিনে মাকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ভালোবাসা জানায় ও উপহার সামগ্রী দিয়ে থাকে।

আজ রোববার (১২ মে) বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘মা দিবস’। পশ্চিমা দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে দিবসটি পালনের প্রচলন। এই দিনে সবাই মাকে নিয়ে আলাদা করে ভাবেন। তবে এখনেই ব্যতিক্রম নন্দিত চিত্রনায়িকা দিতি এবং চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর কন্যা লামিয়া চৌধুরী। মা দিবসে মাকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ঢাকা মেইলকে জানালেন, বিশেষ দিনগুলোতে মাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করেন তিনি। 


বিজ্ঞাপন


174440519_10158185928331687_4189260996423321834_n

তিনি বলেন, ‘আলাদা করে মনে পড়ে বলব না। কারণ আমি মায়ের সঙ্গে এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিলাম যে প্রতিদিনই তাকে ভাবি। দৈনন্দিন জীবনে সবকিছুতেই তিনি থাকেন। কিছু করতে গেলে তাকে মনে পড়ে। বিশেষ দিনগুলো অর্থাৎ মা দিবস, মায়ের মৃত্যু ও জন্মবার্ষিকী, আমার জন্মদিনে মাকে মনে পড়লে আরও বেশি কষ্ট পাই। তাই ওই দিনগুলোতে মাকে আরও ভুলে থাকার চেষ্টা করি।’

মায়ের কোন জিনিসটি বেশি মনে পড়ে— জানতে চাইলে এ তারকাকন্যা বলেন, ‘মায়ের কঠোর পরিশ্রমের কথা বেশি মনে পড়ে। তিনি যে কষ্ট করতেন ছোটবেলায় দেখে স্বাভাবিক মনে হতো। এখন বুঝতে পারি কত কষ্ট করে আমাদের বড় করেছেন। তিনি যে পেশায় ছিলেন সেখানে আরও পরিশ্রম করতে হতো। শীতের দিনে ঠান্ডা পানিতে ঝাঁপ দিতে হতো। গরমে আমরা এসিতে বসে থাকতে পারি না সেই আবহাওয়ায় উত্তপ্ত বালিতে রোদের মধ্যে শুটিং করতে হতো। মা অনেকগুলো অ্যাকশন ছবি করেছেন। সেখানে কালো রংয়ের টাইট বেল্ট পরতে হতো তাকে। একে তো সূর্যের আলো তার ওপর আবার রিফ্লেক্টর বোর্ডের আলো তার ওপর পড়ত। সব সহ্য করে হাসিখুশিভাবে শুটিং করতেন তিনি। মা রান্নার শো করতেন। বাসায় এসে চুড়িগুলো খুললে দেখতাম গরমে হাতে ফোসকা পড়ে গেছে। মা যেরকম কঠোর পরিশ্রম করতেন সেটা স্বাভাবিক ছিল না। শুধুমাত্র আমাদের সুখের কথা চিন্তা করে, আমাদের বড় করার জন্য করতেন। আমি ছোটবেলায় নিজেকে অনেক বড়লোক মনে করতাম। কারণ মা আমাকে ওভাবেই রেখেছিলেন। সহপাঠীদের মধ্যে যারা  অনেক বড়লোকের মেয়ে ছিল আমার মা তাদের চেয়ে বেশি আমাকে দিতেন। তাদের যেটা ছিল না সেটা আমার ছিল। এসব দেখে ধারণা ছিল আমি একজন প্রিন্সেস। এখন বুঝি বিষয়টি আসলে তা না। আসলে মা যদি ১০০ টাকা আয় করতেন ১০০০ টাকার কিছু আমাকে দিতেন। এজন্য তাকে অনেক কষ্ট করতে হতো। কখনও আমাদের বুঝতে দিতেন না। এখন বুঝি তার জন্য কত কঠিন ছিল আমাদের বড় করে তোলা। একা সংগ্রাম করতে হয়েছে। 

433136814_10160067909381687_4180046820267991429_n


বিজ্ঞাপন


বাবা-মায়ের পরিচয়ের কারণে চারপাশের সবার আলাদা মনোযোগ ও ভালোবাস পান লামিয়া। উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সবার কাছ থেকে আমি আলাদা মনোযোগ পাই। ধরুন লামিয়া হিসেবে কোথাও গেলাম আমাকে সেভাবেই সবাই ট্রিট দিল। যখন তারা আমার বাবা-মায়ের পরিচয় জানতে পারেন তখন বোঝা যায় বাবা-মার প্রতি তাদের কত শ্রদ্ধা-ভালোবাসা। সেকারণে আমাদেরও তারা আলাদা চোখে দেখেন। অনেকেই আছেন যাদের চিনি না তারাও বাবা-মায়ের কারণে আমাদের জন্য শুভকামনা রাখেন।’

দিতি চলে যাওয়ার পর মায়ের সিনেমা বেশি দেখা হয় লামিয়ার। তার ভালো লাগে বাবা-মা অভিনীত ‘প্রিয় শত্রু’ সিনেমাটি। তবে তা বিশেষ কারণে। লামিয়ার কথায়, ‘‘মা বেঁচে থাকতে যত না দেখেছি মারা যাওয়ার পর তার সিনেমা আরও দেখেছি। ছোটবেলায় বাসায় সিনেমা দেখা হতো না। আমরা-ও টিভি দেখতাম না মা-ও দেখতেন না। মা চলে যাওয়ার পর প্রায়ই ইউটিউবে তার সিনেমা দেখি। ভালো লাগে। ‘প্রিয় শত্রু’ সিনেমাটি আমার খুব প্রিয়। সিনেমাটি আমার কাছে অন্য কারণে স্পেশাল। এর শুটিং নেপালে হয়েছে। তাই দেশটিও আমার জন্য স্পেশাল। কারণ এই সিনেমাটা করার সময় বাবা-মায়ের সঙ্গে আমরা নেপালে ছিলাম। তখন আমরা বয়স তখন ৬/৭ বছর। আমার বাবা-মা দুজনেই ছিলেন এ ছবিতে। ওপার বাংলার প্রসেনজিৎ ছিলেন। নেপালের ওই স্মৃতিগুলো কখনও ভুলব না। সেবারই আমরা পরিবার হিসেবে শেষবার দেশের বাইরে ছিলাম। দেশে আসার পরে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। মায়ের সঙ্গে বাবার বাসা থেকে বেরিয়ে আসি। এরপর আমরা কখনও চারজন একসাথে কোথাও যায়নি কিংবা এক হইনি। এ কারণে ছবিটি আমার প্রিয়।’ 

082442diti-1_20240509_152801385

নির্মাণে নেমেছেন লামিয়া। হাতে নিয়েছেন সিনেমার কাজ। মনে করেন, এই সময়টায় মাকে খুব দরকার ছিল তার। দিতিকন্যা বলেন, ‘এই কষ্টের কারণে গত ১০ বছর কাজটা করতে পারিনি। এক দশক আগে মায়ের সঙ্গে এটা করার কথা ছিল। কিন্তু কাজটি যে আমাকে একা করতে হবে কখনও ভাবিনি। মায়ের তো আমার মেন্টর হওয়ার কথা ছিল, উপদেষ্টা হওয়ার কথা ছিল। তাকে ছাড়া আমি কীভাবে কাজটি করব। সেটা ভেবেই এতদিন সাহস পায়নি। যতবার এগিয়েছি ততোবার কোথাও না কোথাও আটকে গেছি আর মাকে মিস করেছি। মনে হয়েছে এখন যদি তিনি থাকতেন তাহলে এই কাজটি আমার সাথে হতো না।’

মায়ের কোন উপদেশ সবচেয়ে মনে পড়ে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মা মানুষের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করতেন। ছোট বড় সবার সঙ্গে অমায়িক ছিল তার ব্যবহার। যারা মাকে চেনেন তারা একারণে তাকে বেশি শ্রদ্ধা করেন। ছোটবেলায় মায়ের সাথে বাইরে গিয়ে ভীষণ রাগ হতো। কারণ অন্যরা মা-বাবার সঙ্গে বাইরে সময় কাটাতে পারত। কিন্তু আমরা পারতাম না। মানুষ ঘিরে ধরত। আমাদের ধরে দেখত, ছুঁয়ে দিত। এসব ভালো লাগত না। তাছাড়া ইন্ট্রোভার্ট ছিলাম। মিডিয়াসহ যেকোনো ব্যাপার খুব ভয় পেতাম, লজ্জা পেতাম। অনেক সময় বিরক্ত হতাম। ধরুন কেউ জিজ্ঞেস করলেন, দিতি তোমার কী হয়।  রেগে বলতাম, আমার ফুফু হয় তাতে আপনার কী।’ 

400114709_10159892982351687_5341340675965814192_n

এরকম একটি গল্প তুলে ধরে ‘মেয়েদের গল্পে’র নির্মাতা বলেন, ‘একবার ফ্যান্টাসি কিংডমে গিয়েছিলাম। সেখানে মাকে একটু পর পর সবাই ঘিরে ধরছিল। আমরা কিছুই করতে পারছিলাম না। ওখানে একজন পরিচয় জানতে চাইলে আমি এই উত্তর দিই। বিষয়টি মা খেয়াল করেছিলেন। এরপর বাসায় এসে আমাকে বোঝালেন। বলেলন, তোমার বাবা-মা পাবলিক ফিগার। মানুষ তাদের ভালোবাসে। এজন্যই আমাদের ঘেরাও করে। তোমাকে মানতে হবে তুমি পাবলিক ফিগারদের সন্তান। আমার কন্যা হিসেবে তুমিও আমাদের প্রতিনিধিত্ব করো। যদি তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করো তাহলে তারা ভাববে আমি তোমাদের খারাপভাবে বড় করছি। মানুষ যদি আঘাত করেও কথা বলে, অন্যায় করে তুমি সেটার প্রতিবাদ করলেও সুন্দরভাবে করবে। কখনও বেয়াদবি করবে না। খারাপ আচরণ করবে না। আমি কিছুটা ঘাড়ত্যাড়া। অনেক সময় আমার আচরণে সেটা বোঝা যায়। তখন মায়ের কথাগুলো খুব মনে পড়ে। মা থাকলে নিশ্চয়ই রাগ করতেন। শোধরাতে বলতেন।’ 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর