শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ফিল্ম পলিটিক্সের কারণেই ওটিটিতে সফল: তমা মির্জা

রাফিউজ্জামান রাফি
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২২, ০৩:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

ফিল্ম পলিটিক্সের কারণেই ওটিটিতে সফল: তমা মির্জা
তমা মির্জা । ছবি: ফেসবুক
ফিনিক্স পাখির মতো ভষ্মীভূত হওয়ার আগেই পুনর্জন্ম হয় তমা মির্জার। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম যেন তাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে এক বিশাল আকাশ। সেখানে মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে উড়ে অভিনয় প্রতিভা মেলে ধরছেন তিনি। এখন তার চোখ শুধুই সামনের দিকে। যত ঝড় আসুক না কেন— এক মুহূর্ত থেমে থাকার ফুসরত নেই। কারণ এ নায়িকা জানেন, এখানেই শেষ নয়। যেতে হবে বহুদূর। ঢাকা মেইল শুনেছে তার এই ফিরে আসার গল্প।  

সাত নাম্বার ফ্লোর ওয়েব সিরিজে আপনার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। কেমন লাগছে?

প্রশংসা শুনতে সবার ভালো লাগে। আমারও তেমনটা লাগছে। আসলে কাজ ভালো হলে সবাই ভালো বলেন। তবে এটাই তো শেষ নয়। সামনে আরও কাজ করতে হবে। আমার আপনজন যারা আছেন তারা কাজের প্রশংসার চেয়ে ভুল ত্রুটিগুলোই বেশি ধরিয়ে দেন। আর এর বাইরে আমার যারা অডিয়েন্স আছেন, তাদের ফ্যান-ফলোয়ার্স আমি বলব না। ফ্যান-ফলোয়ার্স কথাটা ভালো লাগে না। তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী বলব। যেসব শুভাকাঙ্ক্ষী সময় বের করে আমার কাজটি দেখেছেন, তারা বেশ ভালো বলছেন। আমার প্রশংসা করছেন। এটাই অভিনয়ের সার্থকতা।

Toma Mirza
ওয়েব ফিল্মের একটি দৃশ্যে তমা মির্জা ছবি: সংগৃহীত

কেউ কেউ বলছেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তমা মির্জাকে পুনর্জন্ম দান করেছে। আপনি কী মনে করেন?

অবশ্যই তারা আমার ভালো দিক দেখেই এমন কথা বলছেন। তাদের এই মন্তব্য আমার ভালোই লাগছে। নতুন মাধ্যমে কাজ করছি। সেখানেও দর্শক আমাকে গ্রহণ করছেন। এটা তো বড় একটা পাওয়া। তাছাড়া অনেকেই আছেন ওটিটিতে কাজ করেও দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। সেদিক থেকে আমাকে সবাই ভালো বলছেন। এটা বড় একটা অর্জন না? এই অর্জনটা ধরে রাখতে চাই।


বিজ্ঞাপন


জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেও বড় পর্দায় আপনাকে নিয়ে মাতামাতি কম হয়েছে। কিন্তু ওটিটিতে হচ্ছে। এই দায়টা আসলে কার?

আমি যখন চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করলাম, তখন ইন্ডাস্ট্রিতে ভালো-মন্দ মিলিয়ে একটা সময় যাচ্ছিল। তাছাড়া আমাকে কেউ বড়সড়ভাবে উপস্থাপনও করেননি। জাজ মাল্টিমিডিয়া তাদের আর্টিস্টদের জমকালোভাবে উপস্থাপন করেছে। ফলে তারা বড় বড় কাজ পেয়েছেন। তাছাড়া তখন প্রজেকশন নিয়েও কতকিছু হলো। আমরা ৩৫ মিলিমিটার থেকে ডিজিটালে এলাম। বলা চলে, একটা বড় পরিবর্তন আসে তখন। আমার আসলে সেই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে একটু সময় লেগেছে। কারণ, তখন আমি একদমই নতুন ছিলাম। তাল মেলাতে মেলাতে আবার কোভিড-১৯ চলে আসে। আমার কাছে মনে হয়েছে, এসবের সঙ্গে তাল মেলাতে আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। 

Toma
তমা মির্জা ছবি: ইনস্টাগ্রাম

এখন যেমন আমার একটা ম্যাচিউরিটি এসেছে। পড়ালেখা সম্পন্ন হয়েছে, একটা স্বকীয়তা এসেছে। ফলে ফিল্ম থেকে ওটিটিতে এসে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া সহজ হয়েছে। যেটা তখন পারিনি। কারণ, যতদিন গেছে যত কাজ করেছি। বিভিন্ন মানুষের সাথে মিশেছি। এতে আমার একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। 

আমি মনে করি, সিনেমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছি ওটিটিতে। তাই ওই সময়টাকে আমি খারাপ বলব না। দেখুন, আমি যদি চলচ্চিত্রে সফল হতাম, কিন্তু ওটিটিতে ব্যর্থ হতাম— তখন আপনারাই এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন। একটা জায়গায় এসে তো সফল হয়েছি। দর্শকের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। এটাই আমার কাছে বড় বিষয়।

চলচ্চিত্রে আপনি নাকি ফিল্ম পলিটিক্সের শিকার হয়েছিলেন— সত্যি?

কী ধরণের ফিল্ম পলিটিক্স ছিল তা সাত নাম্বার ফ্লোর দেখলে বুঝতে পারবেন! আপনি দেখেছেন কি না আমি জানি না। তবে এখনকার ব্যাপারটা বেশ ভালো। একটা সময় ছিল যখন নতুনদের জায়গা দেওয়া হত না। আর কেউ যদি সম্ভবনাময়ী হতেন তাহলে আরও বিপদ ছিল। কেউ ছাড় দিতে চাইতেন না। হয়ত নির্মাতা-প্রযোজক চাচ্ছেন কিন্তু তার সাথে যিনি অভিনয় করছেন তিনি চাচ্ছেন না। তিনি তাকে প্রতিদ্বন্দ্বীই মনে করছেন। এটা তখন খুব ছিল। এ নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। কারণ ইন্ডাস্ট্রি আমার পরিবারই তো। এখানে ভালো মানুষও আছেন, আবার কিছু খারাপ মানুষও আছেন। ভালো মানুষ আছেন বলেই আমি এখন ভালো ভালো কাজের সুযোগ পাচ্ছি। ভালো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছি। এর বেশি আর বলব না। তবে আমাকে নিয়ে পলিটিক্স হয়েছে, এটা সত্য।

Toma
তমা মির্জা ছবি: ফেসবুক

মির্জাস ক্রিয়েশন নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান করেছিলেন। সেটা নিয়ে কোনো সাড়াশব্দ নেই কেন?

যখন মির্জাস ক্রিয়েশন নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলাম, তখন আমার ওটিটির ব্যস্ততা ছিল না। তবে আমার ইচ্ছা ছিল এ রকম কিছু করার। কারণ, তখন বাইরের দেশগুলোতে দেখতাম এমন কাজ হচ্ছে। নেটফ্লিক্স, হইচই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাছাড়া তখন আমার লাইফেও কিছু ক্রাইসিস চলছিল। বাজে একটা সময় যাচ্ছিল। তখন চেয়েছিলাম আমার মতো করে শুরু করতে। সে সময় আমি মির্জাস ক্রিয়েশন শুরু করতে চাই। তৌকীর ভাইকে (তৌকীর আহমেদ) নিয়ে বসি। আমাদের একটি এগ্রিমেন্ট হয়। এগ্রিমেন্ট মানেই তো টাকার ব্যাপার চলে আসে। আমি তখন বড় অংকের টাকা লগ্নি করি সেখানে। কিন্তু এর মধ্যেই তৌকীর ভাই আমেরিকা চলে যান। ওই সময় আমিও খাঁচার ভেতর অচিন পাখি করে ফেলি। কাজটিতে অসম্ভব সাড়া পাই। সেটা তো আপনারা জানেনই। তারপর থেকেই ওটিটি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। 

তাহলে মির্জাস ক্রিয়েশনের ভবিষ্যত কী?

ওটিটিতে ব্যস্ত হওয়ার পর মনে হয়েছে প্রযোজনার জন্য ভবিষ্যতে অঢেল সময় পাব। কিন্তু এখন যে কাজের সুযোগটা রয়েছে এটা হয়ত পরে আর পাব না। তাছাড়া প্রযোজনা মানে অনেক প্রেশার, অর্থ লগ্নিরও ব্যাপার আছে। তবে প্রতিষ্ঠান যেহেতু করেছি, ভবিষ্যতে প্রযোজনা করব। তবে এখন না। এখন আমার যে ক্যারিয়ার সেটা নিয়েই ভাবতে চাচ্ছি।

Toma
‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ ওয়েব ফিল্মে তমার অভিনয় প্রশংসিত হয় ছবি: সংগৃহীত

এবার ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো নিয়ে দর্শকের উন্মাদনা দেখার মতো। এর মধ্যে আপনার অভিনীত সিনেমা নেই। এ নিয়ে আফসোস হচ্ছে না?

একেবারেই আফসোস হচ্ছে না। কারণ, আমার কাজও তো ঈদে দর্শক দেখছেন। সেটা যে মাধ্যমেই হোক। তবে বড় পর্দায় ছবির ব্যাপারে বলব এবার ঈদে অল্পকিছু সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এটা বেশ ভালো লেগেছে। দর্শক হাতে সময় নিয়ে শান্তি করে সিনেমাগুলো দেখতে পারছেন। যদি এই ঈদে ১০টি ছবি মুক্তি পেত তাহলে দর্শক দিশেহারা হয়ে যেতেন। কোনটা রেখে কোনটা দেখবেন বুঝে উঠতে পারতেন না। এবার সেটা হয়নি। শান, গলুই, বিদ্রোহী খুব ভালো ব্যবসা করছে। যেহেতু আমাদের ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা ভালো না। তাই এবার অল্প সিনেমা এসেই ভালো হয়েছে।  কেননা, ১০ সিনেমা থেকে দুটি সিনেমা ব্যবসা করলে ভালো কিছু হত না।

এবার একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে চাচ্ছি…

না, কোনো ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা যাবে না। আপনি আমার সঙ্গে আলাপ আলোচনার সময় বিভিন্ন কিছু জানতে চাইতে পারেন। কিন্তু এখন যেহেতু লিখবেন, সেহেতু কোনো ব্যক্তিগত বিষয় বলতে আমি ইচ্ছুক নই। কাজ নিয়ে কথা বলুন। দর্শক আমার কাজ নিয়ে জানতে চান। ঘরের খবর জানতে চান না।

Toma raihan rafi
পরিচালক রায়হান রাফির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন তমা মির্জার ছবি: ইনস্টাগ্রাম

তাহলে বিয়ে নিয়ে কথা বলি। নতুন করে জীবন সাজানোর পরিকল্পনা করছেন?

এমন প্রশ্ন আপনি করতেই পারেন। এটা জানার অধিকার দর্শকের আছে। আমি আপাতত কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাচ্ছি। কারণ বর্তমানে আমার কাজ যে ছন্দে এগিয়ে চলছে তা আগে কখনও পাইনি। তাই আপাতত কাজ নিয়েই ভাবতে চাই। তাছাড়া পরিবার থেকেও এসব নিয়ে আমার ওপর কোনো চাপ নেই। যখন মনে হবে হ্যাঁ, এবার নতুন করে কিছু ভাবা যায় তখন সবাইকে বলব।  

রায়হান রাফির সঙ্গে নাকি চুটিয়ে প্রেম করছেন?  

সেই ব্যক্তিগত প্রশ্নই করলেন। এজন্য ভালো লাগে না। রায়হান রাফির সঙ্গে আমার কোনো প্রেমের সম্পর্ক নেই। আমরা খুব ভালো বন্ধু। নিরব, ইমনের সঙ্গেও আমার বন্ধুত্ব ছিল। রায়হান রাফিও আমার তেমন বন্ধু। এখন নতুন নতুন দেখে সবাই গুজব ছড়াচ্ছেন। কিন্তু পাঁচ বছর যাক, তখন কেউ কিছু বলবেন না। সবাই বুঝে যাবেন আমাদের সম্পর্কটা আসলে বন্ধুত্বের।  

আরআর/আরএসও

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর