বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

কেন ছড়াচ্ছে ‘গানের ভাইরাস’

রাফিউজ্জামান রাফি
প্রকাশিত: ১২ মে ২০২২, ০৭:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

কেন ছড়াচ্ছে ‘গানের ভাইরাস’
মোহিত করার অন্যতম মাধ্যম সুর। শ্রেণি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে এক কাতারে আনতে সবচেয়ে শক্তিশালী সুরের সম্মোহন শক্তি। মানুষ আনন্দ উদযাপনের জন্য বেছে নেয় গান। যাপিত জীবনের বিরহ বা দুঃখকে এড়িয়ে একটু শান্তির পেতেও তারা আশ্রয় খোঁজেন গানের মাঝে। তবে গান এখন শান্তির চেয়ে অশান্তিই ছড়াচ্ছে বেশি।

এর নেপথ্যে রয়েছে তাল ও লয়হীন বেসুরো কণ্ঠ। সম্প্রতি এমন কয়েকজন ব্যক্তিকে গান গাইতে দেখা যাচ্ছে যাদের কণ্ঠে না আছে সুর, না আছে সংগীত সম্পর্কিত ধারণা। এদের মধ্যে হিরো আলম, ড. মাহফুজুর রহমান, শামীমা আলম চিনু উল্লেখযোগ্য। মহা বেসুরো কণ্ঠ, উদ্ভট সাজসজ্জা ও অঙ্গভঙ্গিই তাদের একমাত্র অবলম্বন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে সেসব গান মানুষের দুয়ারে পৌঁছাতেও সময় নেয় না।


বিজ্ঞাপন


এসব গান নিয়ে ট্রলের শিকার হন স্বঘোষিত শিল্পীরা। অনেকের মতে তারা সংগীতের ভাইরাস। তাদের নিয়ে ঢাকা মেইলের সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেছেন প্রখ্যাত গীতিকবি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী ও কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী।

শুরুতেই জঙ্গী এর দায় চাপান শ্রোতাদের ওপর। তিনি বলেন, ‘মাহফুজুর রহমান বা হিরো আলমের গান গাওয়ার বিপক্ষে নই আমি। গান গাওয়ার অধিকার সবারই আছে। তবে সে গান শোনা বা না শোনা; সম্পূর্ণ শ্রোতাদের ব্যাপার। যদি শ্রোতাদের কান নষ্ট হয় তাহলে তো তারা এসব গান শুনবেনই।’

Hero Alom

শ্রোতাদের কান নষ্টের (রুচির অধঃপতন) দায় দেন সংগীত সংশ্লিষ্টদের একটি অংশের ওপর। জঙ্গী বলেন, ‘একটা সময় ছিল কণ্ঠশিল্পীরা ভালো ভালো গানের মাধ্যমে শ্রোতাদের রুচি বদলে দিয়েছিলেন। এর ব্যত্যয় ঘটে নব্বই দশকের শেষের দিকে এসে। সেসময় গানের বিশাল সংখ্যক শ্রোতা হিসেবে সংযুক্ত হয় পোশাক শ্রমিকেরা। তখন পোশাক শ্রমিকদের রুচির অবমূল্যায়ন করা হয়েছিল। তারা ভালো গানই শুনত। আমি তাদের মান্নাদের গান, মাহমুদুন্নবীর গান শুনতে দেখেছি। কিন্তু অনেকে ভেবেছিলেন তারা হয়ত ভালো গান শোনেন না। তারাই গানের মানের কথা না ভেবে পোশাক শ্রমিকদের কল্পিত রুচির কথা ভেবে গান শুরু করেন। শ্রোতাদের কান নষ্টের শুরু তখন থেকেই।’


বিজ্ঞাপন


তাদের নিয়ে এই মাতামাতি সংগীতের ক্ষতি করছে কি না— জানতে চাইলে জঙ্গী বলেন, ‘সংগীতের বাজে অবস্থা শুরু হয়েছে ২০০০ সালের পর থেকে। তার মানে এই না যে, এখন ভালো গান হচ্ছে না। তবে আগের তুলনায় তা অনেক কম। এমন অবস্থা আগেও এসেছে। যদিও সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যমে এখন তা বেশি চোখে পড়ছে। সে যাই হোক, এসব নিয়ে আজ ট্রল হবে মাতামাতি হবে। কিন্তু দিন শেষে ওই ভালো গানই টিকে থাকবে।’

সংগীতে মাহফুজুর রহমান, হিরো আলম গংদের অনুপ্রবেশের ব্যাপারে সামিনা চৌধুরী বলেন, ‘আসলে মাহফুজুর রহমান কিংবা আর যাদের কথা এখন বলা হয় আমি তাদের কারও গানই শুনি না। অনেকে আছেন দুষ্টুমি করেও শুনে থাকেন। কিন্তু আমি সেটাও করি না। ভালো ভালো গান শুনি। কেননা, আমি মনে করি খারাপ গানে কান নষ্ট হয়।’

Mahfuz

জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পী আরও বলেন, ‘মাহফুজুর রহমানরা তো শখে গাইছেন। কিন্তু আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অনেক পেশাদার সংগীতশিল্পী আছেন, যারা ভীষণ বাজেভাবে গান করেন। সিনিয়র শিল্পী সেজে বসে থাকেন। আমি তাদের নাম বলতে পারছি না। কারণ, অনেকেই মন খারাপ করবেন এতে। তবে যদি ধরে ধরে নামগুলো বলতে পারতাম তাহলে ভালো লাগত।’

সামিনা চৌধুরী মনে করেন, শিল্পী সেজে বসে থাকা ব্যক্তিরাই বাংলা গানের ক্ষতি করছেন। তিনি বলেন, ‘যারা গান না জেনেই ইন্ডাস্ট্রিতে বিচরণ করছেন, ক্ষতির কারণ মূলত তারা। এরা যে ভালো করে গাইতে জানেন না, তা অনেকেরই অজানা। ফলে অনেকেই তাদের গান গাইতে ডাকছেন। তাদের কারণেই বাংলা গানের ক্ষতিটা বেশি হচ্ছে।’

তাদের থামানোর উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গান গাওয়া যার যার ব্যক্তিগত অধিকার। এদের তো আর চাপ প্রয়োগ করে বন্ধ করা যাবে না। তবে এদের বয়কট করতে হবে। এদের যদি কেউ গাইতে না ডাকেন, এমনিতেই তাদের প্রভাব কমে যাবে।’

Chinu

নিজের অর্থায়নে গান করে ব্যক্তিগত ইউটিউব কিংবা টিভি চ্যানেলে প্রকাশ করছেন অশিল্পীরা। তদের কীভাবে বয়কট করা সম্ভব— উত্তরে এ গায়িকা বলেন, ‘তাদের আসলে বিবেক নেই। যদি কখনও নিজের বিবেকবোধ জেগে ওঠে তাহলেই তারা থামবে। তাছাড়া না।’

ভাইরাল হওয়া শিল্পী নামধারী ভাইরাস এখনই নির্মূল না করা গেলে ভবিষ্যতে বাংলা গান অন্ধকারে পতিত হতে পারে বলে মনে করেন সামিনা চৌধুরী। সেজন্য কৌতূহলের ছলেও তাদের গান না শোনার আহবান জানান তিনি।

আরআর/আরএসও

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর