বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪, ঢাকা

‘ঈদে ডজনের ওপর সিনেমা মুক্তি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’ 

রাফিউজ্জামান রাফি
প্রকাশিত: ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

‘ঈদে ডজনের ওপর সিনেমা মুক্তি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’ 
প্রতিটি ঈদ উৎসবে দেশের চলচ্চিত্রাঙ্গন হয়ে ওঠে সরগরম। হলগুলো সেজে ওঠে নতুন ছবির পোস্টারে। লাভের মুখ দেখার আশায় খোলা হয় বন্ধ হলগুলোও। এবারের চিত্রটাও একইরকম। তবে ব্যতিক্রম শুধু মুক্তির মিছিলে থাকা সিনেমার সংখ্যা।

প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির অফিস সহায়ক সৌমেন রায় বাবুর গতকাল বৃহস্পতিবার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবার রোজার ঈদে মুক্তির তারিখ নিয়েছে— সোনার চর, দেয়ালের দেশ, মেঘনা কন্যা, কাজের ছেলে, আহারে জীবন, গ্রীন কার্ড, মোনা: জ্বীন ২, ডেড বডি, মায়া: দ্যা লাভ। এরইমধ্যে তারিখ নিতে যোগাযোগ করেছে পটুওমর। এদিন সেন্সর পায়  সুপারস্টার শাকিব খানের রাজকুমার এবং পূজা চেরির লিপস্টিক। স্বাভাবিকভাবেই ছবি দুটি মুক্তির তারিখ নেওয়ার কথা। এতে সব মিলিয়ে ঈদে ডজনের বেশি ছবি মুক্তি পাচ্ছে বলে জানান সৌমেন।


বিজ্ঞাপন


এমন নয় যে, ঢালিউডে এত সংখ্যক সিনেমা এক ঈদে মুক্তি পায়নি। তবে তখনকার তুলনায় এখনকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সিনেমা হলের সংখ্যা বিবেচনায় এতগুলো সিনেমা মুক্তি পাওয়া আদৌ ভালো কিছু বয়ে আনবে কি না— সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

khan

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সহ সভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘ঈদে মানুষের মাঝে ছবি দেখার আগ্রহ থাকে। তাই সবাই এ সময় ছবি মুক্তি দিতে চান। যেকারণে এই প্রতিযোগিতা। কিন্তু হয় উল্টো। নির্মাতারা হল কম পান। ব্যবসা তদ্রূপ হয় না। যদি কোনোটা ভাগ্যক্রমে ভালো হয় তাহলে সেই ছবির ব্যবসা হয়। অনেকদিন চলে। কিন্তু দুর্বল হলে সেটি এক সপ্তাহ পর-ই কেউ নিতে চায় না। এদিকে সবাই নিজের ছবিকে সেরা মনে করেন।’

এরপর প্রদর্শক সমিতির এ নেতা বলেন, ‘একসময় কোনো ছবি ভালো চললে বলত মুঘল-ই-আযম। আবার বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নার পর বলত বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নার মতো ব্যবসা করবে। ২০২২ সালের ঈদে পরাণহাওয়া ছবি দুটি ভালো ব্যবসা করেছে। হাওয়া যদিও ঈদের পর মুক্তি পেয়েছিল। গেল কোরবানি ঈদে প্রিয়তমাসুড়ঙ্গ মুক্তি পায়। প্রিয়তমা তুমুল ব্যবসা করেছে। সুড়ঙ্গ মোটামুটি ভালো করেছে। এর বাইরে আর কোনো ছবি ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারেনি। এবারও দেখছি রাজকুমারের প্রতি সবার আগ্রহ। সেক্ষেত্রে অন্য ছবিগুলোর ভাগ্যে কী হবে? সেগুলোও হল পাবে। দেখা যাবে সিনেপ্লেক্সগুলোতে ৩/৪টি করে স্ক্রিন আছে কেউ হয়তো ১টি কেউ ২টি স্ক্রিন পাবে। এভাবেই চলবে।’ 


বিজ্ঞাপন


miya

মিয়া আলাউদ্দিনের সঙ্গে একমত পোষণ করেন একমত পোষণ করেন প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু। এক ঈদে ডজনের ওপর ছবি মুক্তিকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যারা এটা করছেন তারা জেনে শুনে সিদ্ধান্তটি নিচ্ছেন। আমাদের নিয়মিত হল আছে ৪৬টি। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে মৌসুমী হলগুলো দিয়ে দাঁড়ায় ১৬০-এর মতো। এই অল্প সংখ্যক হলে এক ডজনের বেশি ছবি কীভাবে হল পাবে। সিনেপ্লেক্সের কথাই ধরা যাক। দিনে ৫টি শো হয়। ডজনখানেক ছবির জন্য তো ডজন খানেক শো হবে না দিনে। এভাবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত না নিতে আমি আবারও সবার প্রতি আহ্বান জানাই। বছরের অন্য সময় বুঝেশুনে একটি ভালো দিন দেখে যদি ছবিগুলো রিলিজ করে তাহলে অন্তত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে না। এভাবে চললে আর্থিকভাবে বিশাল ক্ষতি হবে।’ 

omar

এক ঈদে কয়টি ছবি মুক্তি পাওয়া উচিত বলে মনে করছেন— জানতে চাইলে মিয়া আলাউদ্দিন ও খসরু দুজনের জানান, ঈদে তিন থেকে চারটি ছবি মুক্তি পাওয়া উচিত। মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি ও সিনেমা হলের সংখ্যা বিবেচনা করে ঈদে তিন থেকে সর্বোচ্চ ৪টি ছবি মুক্তি দেওয়া উচিত। ১৯৯২ সালে একবার ১৩টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল। সেসময় দেশে প্রায় ১৪০০ সিনেমা হল ছিল। সবগুলো ছবিই ভালো চলেছিল। আমি তখন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। কিন্তু এখন তো পরিস্থিতি উল্টো। দেশে মাত্র ৫০/৬০টি আছে। ঈদ এলে আরও এক শ যোগ হয়। এ অবস্থায় এতগুলো ছবি মুক্তি দিলে নিজেদেরি ক্ষতি। দুই একটা পাড় হয়ে যাবে আর বাকিগুলো পড়ে যাবে। কারণ ব্যবসায় প্রতিযোগিতা থাকা ভালো কিন্তু অসুস্থ প্রতিযোগিতা ভালো না।’ 

435396581_794998949328180_2330336828028588570_n

এমন পরিস্থিতিতে মুক্তি পেতে যাওয়া সিনেমাগুলো কতটা ব্যবসাসফল হয়—সেটাই জানতে অপেক্ষা করতে হবে ঈদের পর পর্যন্ত। যদিও সবগুলো সিনেমা এই প্রতিযোগিতায় সফল হয়, তাহলে চলচ্চিত্র শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর