১৯৭১ সালের ১ আগস্ট হাজার হাজার মাইল দূরের যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে রচিত হয়েছিল এক অনন্য ইতিহাস। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের সাহায্যার্থে সেদিন আয়োজিত হয়েছিল—কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পক্ষে সুরের ঝংকার তুলে বিশ্ব বিবেক নাড়িয়ে দিয়েছিলেন মানবতাপ্রেমী একদল শিল্পী।
এই জার্মান ব্যান্ডটির জন্য চিরকুটের তরফ থেকে আরও একটি উপহার ছিল। কিন্তু সে উপহারটি দেওয়া হয়নি। সেজন্য খারাপও লাগছে তার।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটল। সেই ম্যাডিসন স্কয়ারে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত কনসার্টে বাংলাদেশের জন্য গাইলেন বিখ্যাত জার্মান ব্যান্ড ‘স্করপিয়নস’। তাদের সঙ্গে মঞ্চ মাতালেন দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘চিরকুট’। গতকাল ৬ মে তাদের সুরের মুর্ছনায় মোহিত হয়েছিলেন উপস্থিত দর্শক-শ্রোতারা।

বিখ্যাত এই ব্যান্ডের সঙ্গে গান পরিবেশনা করতে পেরে উদ্বেলিত চিরকুট ব্যান্ডের প্রধান শারমিন সুলতানা সুমি। মার্কিন মলুক থেকে ঘুম ঘুম কণ্ঠে ঢাকা মেইলকে শোনালেন সেই অনভূতির কথা।
সুমি বলেন, ‘পঞ্চাশ বছর আগে এই মঞ্চে বাংলাদেশের জন্য কনসার্ট হয়েছিল। বাংলাদেশ তখন ছিল যুদ্ধ বিধ্বস্ত। এতগুলো বছর পর একই মঞ্চে আমরা যখন উঠলাম তখন দেশটি স্বাধীন। বিজয়ের অর্ধশত বছর পেরিয়েছে আমার দেশ। বিজয় না দেখলেও বিজয়ের এই উদযাপনে আমাদের অংশ নেওয়ার অনুভূতি ছিল অন্যরকম। ভালো লাগাটা মুখে প্রকাশ করার মতো না। অন্যরকম এক উত্তেজনা কাজ করছিল আমাদের ভেতর।’
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মাত্র ২০ মিনিট সময় পেয়েছিলাম। এত কম সময়ে সবকিছু ম্যানেজ করে গান করাটা সহজ কথা নয়। কিন্তু আমরা সেটা ভালোভাবেই করতে পেরেছি। সবাইকে গান শুনিয়েছি। হল ভর্তি দর্শক-শ্রোতা ছিলেন। তারা মুগ্ধ হয়ে গান শুনেছেন।’

চিরকুটের অল্প সময়ের সেই পরিবেশনা মুগ্ধ করেছে স্করপিয়নস ব্যান্ডের সদস্যদের। এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন গান পরিবেশন করছিলাম তখন স্করপিয়নসের সদস্যরা ভেতরে ছিলেন। তাদের কলা-কুশলীরা বাইরে ছিলেন। তারা আমাদের গান শুনে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আমাদের জন্য ২০ মিনিট সময় খুব কম ছিল বলেও আফসোস করেছেন তারা।’
বিখ্যাত এই ব্যান্ডটির সঙ্গে আলাপের মুহূর্তটা কেমন ছিল— জানতে চাইলে সুমি বলেন, ‘তারা আমাদের বেশ অ্যাপ্রিশিয়েট করেছেন। বাংলাদেশের একটি ব্যান্ড হয়ে আমরা ভালো করছি বলেও প্রশংসা করেছে।’
স্করপিয়নসের জন্য উপহার সামগ্রীও নিয়েছিল চিরকুট। সেকথা তুলে সুমি বলেন, ‘আমরা ওদের জন্য সানগ্লাস নিয়ে গিয়েছিলাম। এক পাশে চিরকুট লেখা রিকশা পেইন্ট করা সানগ্লাস। চশমাগুলো পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছেন তারা। আমরা নদী ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করছি। ব্যান্ডটির সদস্যদের জন্য আমাদের সেই টি-শার্টও নিয়েছিলাম। টি-শার্ট পেয়ে তারা ভীষণ মুগ্ধ হয়েছেন। আমাদের জন্য কেন আনলে না— এমন প্রশ্ন করে ওদের ম্যানেজারসহ আরও কয়েকজন তো আমাকে জেরাও করেছে।’

এই জার্মান ব্যান্ডটির জন্য চিরকুটের তরফ থেকে আরও একটি উপহার ছিল। কিন্তু সে উপহারটি দেওয়া হয়নি। সেজন্য খারাপও লাগছে তার। কী সেই উপহার— উত্তরে এই গায়িকা মৃদু হেসে বলেন, ‘লুঙ্গি নিয়েছিলাম। কিন্তু ভুলে দেওয়া হয়নি।’
বাংলাদেশ সম্পর্কে স্করপিয়নসের ধারণা বেশ ইতিবাচক বলে জানালেন সুমি। তিনি বলেন, “আমাদের দেশ সম্পর্কে তাদের চিন্তা ভাবনা খুব ভালো। তারা আমাকে বলেছেন, ‘একদিন এই মঞ্চে তোমাদের সহায়তার জন্য কনসার্ট করা হয়েছিল। আজ সেখানে দাঁড়িয়ে তোমরা বিজয় উদযাপন করছ। বিদেশি ব্যন্ডদেরও আমন্ত্রণ জানাচ্ছ। এটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।’ তাদের কথা শুনে বেশ আপ্লুত হয়েছি আমি।”
এই কনসার্টে অংশ নিতে পারা চিরকুট ব্যান্ডের জন্য সেরা অর্জন বলে মনে করেন সুমি। সেই সঙ্গে এর মাধ্যমে দেশের প্রতি দায়বোধ বেড়ে গেছে বলে জানান এ গায়িকা।
আরআর/আরএসও

