দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি পত্রিকার লাইভ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন নুহাশ হুমায়ূন। সেখানে সঞ্চালকের প্রশ্নে বিব্রত হয়ে এ দেশের সাংবাদিকতার পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেসবুকে বিরক্তি প্রকাশ করেন।
বাবা নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্য এই পর্যন্ত আসতে পেরেছেন কি না— এরকম একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল নুহাশকে। এটি সহজভাবে নিতে পারেননি তিনি। লাইভ শেষে তিনি আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের সাংবাদিকতা যদি আরেকটু সম্মানজনক হত!’
বিজ্ঞাপন
নুহাশের এমন স্ট্যাটাস সমালোচনার জন্ম দেয়। বিশেষ করে দেশের বিনোদন সাংবাদিকরা এ কথার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। ক্রমাগত সমালোচনার অবশেষে মুখে খুলেছেন তিনি। আত্মপক্ষ সমর্থন করে ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস লিখেছেন হুমায়ূনপুত্র।

নুহাশ লিখেছেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ। আপনাদের সহানুভূতি, সুচিন্তিত মতামত এবং ভালোবাসা নিয়ে আমার পাশে থাকার জন্য। আমার সাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতা জানানোর পর অনেকেই আমাকে তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। দেখলাম, আমি-ই প্রথম এমন মানুষ না যে, মিডিয়ার সামনে অপ্রস্তুত হয়েছি আর অপমানিত বোধ করেছি। এর মধ্যে ভালো লাগছে যে, আমি আমার অনুভূতির কথা সরাসরি লিখেছি, অনেকে হয়ত তাদেরটা বলতে পারেননি।’
তিনি লেখেন, “আবার খেয়াল করলাম, অনেকে পেজে সঞ্চালকের ছবি দিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করছেন। কোনোভাবেই এ ধরনের সাইবার বুলিং সমর্থন করি না। আমি মনে করি, কিছু প্রশ্ন আপত্তিকর ছিল। কিন্তু হয়ত এখন মিডিয়াতে এটাই একটি প্রবণতা হয়ে গিয়েছে। এর সমাধান করতে চাইলে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেন তারা শ্রদ্ধাশীল থাকেন। কিন্তু কোনোভাবেই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যবহারের উত্তর সেরকম ব্যবহার হওয়া উচিত না। শেষ ‘ষ’-এর পর্বে একটি লাইন ছিল ‘দোষের চেয়ে বিচার বেশি’ সেই অবস্থা যেন না হয়।”
বিজ্ঞাপন
নুহাশ মনে করেন, সাক্ষাৎকারের আগে সেটার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা উচিত। তিনি জানান, প্রথম আলো ক্যাফে লাইভের সাক্ষাৎকারের আগে তাকে বলা হয়েছিল ‘ষ’ নিয়ে আলোচনা হবে। সঙ্গে তার বাবাকে নিয়ে কিছু প্রশ্ন করা হতে পারে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন এ নির্মাতা।

তিনি লেখেন, ‘অতীতে আমার পরিবার নিয়ে আন্তরিকভাবেই ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছি। সেখানে আমার জীবনে মায়ের ভূমিকার কথা বলেছি। বাবাকে নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু এ ধরনের সাক্ষাৎকারের জন্য আমার মানসিক প্রস্তুতি লাগে। আমি হঠাৎ করে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হলে অপ্রস্তুত হয়ে যাই।’
ওই বিতর্কিত স্ট্যাটাসের পর নুহাশকে অহংকারী বলে সমালোচনা করেন নেটিজেনরা। এটা নিয়ে তিনি লিখেছেন, “আমি যেসব কাজ করেছি, যতটুকু করেছি এবং যেখান থেকে আমি এসেছি— সব কিছু নিয়ে আমি খুব বিনয়ের সঙ্গেই গর্বিত। আমার নিজের অর্জন বা সাফল্য নিয়ে কথা বললে দেখি অনেকেই খুব বিরক্ত হন। কিন্তু সম্পূর্ণ অজানা একজন মানুষের সাফল্যে কেন তাদেরকে এত বিরক্ত করে সেটাও বুঝি না! আমার মনে হয় আমাদের শেখানো হয়, আমাদের অর্জনের কথা শুধুমাত্র সিভিতে লেখা যাবে। মুখে বলা যাবে না। মুখে বলার মানে হল, ‘সে খুব অহংকারী’, ‘বড় বড় কথা বলে’ অথবা ‘নিজেকে কী মনে করে’। এই ধারণাগুলো পালটানো দরকার। নিজেদের অর্জনের কথা মাথা উঁচু করেই বলা উচিত। আমি আমার পরিবার নিয়ে প্রচণ্ডভাবে গর্বিত। আমার বাবাকে ভালবাসি আর কখনও জীবনে তার প্রভাবকে অস্বীকার করি না।”

নুহাশ আরও লিখেছেন, ‘আমি বলতে দ্বিধা করব না, আমার বাবার অর্জনের পেছনেও মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। আমার মনে হয় হুমায়ূন আহমেদ বা নুহাশ হুমায়ূন কেউই সামনে এগিয়ে যেতে পারত না গুলতেকিন খানকে ছাড়া।’
এ সময় নুহাশ অনুরোধ করেন, কেউ যেন তার বাবার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন। শুধু তাই নয়, ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে চাইলে আগে থেকে জানিয়ে রাখা হয়।
আরএসও

