শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ঢাকা

এ আর রহমান সকল বাঙালিকে অসম্মান করেছেন: খিলখিল কাজী 

রাফিউজ্জামান রাফি
প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০২:১৮ পিএম

শেয়ার করুন:

এ আর রহমান সকল বাঙালিকে অসম্মান করেছেন: খিলখিল কাজী 

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান বিকৃতির অভিযোগ উঠেছে উপমহাদেশের জনপ্রিয় সুরকার সংগীত পরিচালক এ আর রহমানের বিরুদ্ধে। কবির লেখা ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটি ব্যবহার করা হয়েছে ‘পিপ্পা’ নামের একটি সিনেমায়। এ গানের সুরেই কারসাজি করেছেন রহমান। কিন্তু তাতে ভালো কিছু হয়নি, উল্টো সুর হয়েছে বিকৃত।

কবির গান নিয়ে এ আর রহমানের এমন মাতব্বরি মানতে নারাজ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত বাংলা ভাষাভাষীরা। ইউটিউবে গানটি প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে তারা করছেন সমালোচনা। ফেটে পড়েছেন ক্ষোভে। এবার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কবির নাতনি ও নজরুল সংগীতশিল্পী খিলখিল কাজী।


বিজ্ঞাপন


khil4-20230525111714

ক্ষুব্ধ খিলখিল কাজী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এটা নিয়ে সব জায়গায় কথা বলছি। একটু পর আমি কলকাতা যাব। ওখানে আগামী পরশু সোমবার থেকে প্রতিবাদ করব। এ বিষয়ে কার্যক্রম নিয়েছি আমরা সেখানে।’

কবি নাতনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘এ আর রহমানের মতো একজন প্রখ্যাত সুরকার কীভাবে আমাদের প্রাণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান নিয়ে এই যাচ্ছে তাই কাজটি করলেন! আমি মানতেই পারছি না। সারা পৃথিবীর বাঙালিরা বেদনাগ্রস্ত হয়েছেন। কারণ তার এই কালজয়ী গানটি যেমন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তখনকার যুব সমাজকে আন্দোলিত করেছিল তেমনই ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আন্দোলিত করেছে। সেই গানটি নিয়ে এ আর রহমান যা করেছেন আমরা তা মেনে নিতে পারছি না। এর একটা বিহিত হওয়া উচিত বলে মনে করি। বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমার আবেদন থাকবে তারা যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ করেন এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আর গানটি অবিলম্বে সিনেমাটি থেকে সরানোর দাবি করছি।’

MV5BZDFiNjc2YjUtNjlkZS00OTE5LWFjZmItY2FkZjQ2Yzg5ZDQ5XkEyXkFqcGdeQXVyODE5NzE3OTE@._V1_


বিজ্ঞাপন


মর্মাহত খিলখিল কাজী বলেন, ‘আমি অত্যন্ত মর্মাহত। আমাদের পরিবারসহ সমস্ত বাঙালি মর্মাহত। মানলাম উনি (এ আর রহমান) নজরুল ইসলামকে না চিনে উনি কাজটি করেছেন। ওনার যে টিম আছে সেখানে অনেক বাঙালি আছে, গানটি গেয়েছেনও বাঙালি কণ্ঠশিল্পীরা। সেই বাঙালিরা কী কাজী নজরুল ইসলামকে চেনেন না?’

ক্ষোভ প্রকাশ করে কবি পরিবারের এ সদস্য বলেন, ‘তারা কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এটা করতে পারত না। একটা সময় নজরুলকে তারা বড় কবি মানতেই চাইত না। পরে যাখন বাংলাদেশ হলো, বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল হলেন, এখানে নজরুল চর্চা প্রসারিত হলো তখন তারা নড়েচড়ে বসল। দেখল তাকে বাদ দিলে বাংলা সাহিত্যই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তার কালজয়ী গান-কবিতাগুলো আমাদের সমাজ বদলানোর হাতিয়ার ছিল। তিনি হাতিয়ার হিসেবেই এগুলো গ্রহণ করেছিলেন।’

nazrul-20230525111636

এ সময় ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটি সৃষ্টির গল্প তুলে ধরেন খিলখিল কাজী। তিনি বলেন, ‘‘বিপ্লবী চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে সঙ্গে দাদুর খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তিনিও দাদুর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছিলেন। তার এই বিরোধিতা স্তিমিত করতেই ব্রিটিশরা তাকে জেলে পুরে দেয়। তখন দাদুর কাছে একটি গানের জন্য বলা হলে দাদু ‘ভাঙার গান’ নামে একটি বই লেখেন। সেখানে সব গানগুলোই ব্রিটিশ বিরোধী। ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ প্রথম পৃষ্ঠায় ছিল এবং ব্রিটিশদের চোখে যখন এটা পড়ল তখনই ‘ভাঙার গান বাজেয়াপ্ত করা হলো। এই গানটি শুনে তখন দলে দলে যুবসমাজ স্বাধীনতার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। পরে আমাদের ৭১ মুক্তিযুদ্ধে ভীষণ ভূমিকা রাখে।’’

সবশেষে তিনি বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই গানটি শুনে বড় হয়েছি। এটা সংকটের সময়ের গান। আমাদের সকল প্রতিবাদের হাতিয়ার। আমাদের হৃদয়ে এখনও গানটি আছে বলেই কিন্তু আমরা এত কষ্ট পেয়েছি। তিনি কীরকম সুরকার। আমি বুঝতে পারছি না তিনি কতটা শিক্ষিত সুরকার! আমি অত্যন্ত মর্মাহত। কবিকে অসম্মান করে সকল বাঙালিকে অসম্মান করেছেন। সকল বাঙালির হৃদয়ে তিনি আঘাত করেছেন। বারবার বাংলার ওপর আঘাত হানা তাদের একটি অভ্যাস হয়ে গেছে। এই অভ্যাসটা তাদের বদলাতে হবে।’

khil2-20230525111600

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন  যশোরের চৌগাছার গরিবপুরে তুমুল যুদ্ধ হয়। এতে পাকিস্তানের বিপরীতে ছিল বাংলাদেশের ভারতীয় মিত্রবাহিনী। তারা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিল মিত্রবাহিনীর কাছে। এই যুদ্ধই দেখা যাবে ‘পিপ্পা’ ছবিতে। ছবিটি নির্মাণ করেছেন রাজাকৃষ্ণ মেনন।

আরএসও 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর