শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

বিষয় কোডে ভুল: মহাবিপাকে হাজার হাজার পরীক্ষার্থী

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৭ মে ২০২৩, ১১:১৪ পিএম

শেয়ার করুন:

বিষয় কোডে ভুল: মহাবিপাকে হাজার হাজার পরীক্ষার্থী
ফাইল ছবি।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন জয়া রাণী দাস। প্রবেশপত্রে এক বিষয়ে তার বিষয়কোড এসেছে ১১১, যা মূলত ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয়ের কোড। হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলেও বর্তমানে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়েই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই শিক্ষার্থী!

কারণ, বিষয়কোডের ভুলটি এখনো সংশোধন হয়নি। কাজ চলমান। নির্ধারিত ওই বিষয়ের পরীক্ষার তারিখের আগেই এই ভুল সংশোধন না হলে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়েই পরীক্ষা দিতে হবে জয়াকে। নয়তো ফল অকৃতকার্য আসবে।


বিজ্ঞাপন


নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ইশরাত জাহান রিক্তা। তার প্রবেশপত্রে একটির বিষয় কোড এসেছে ১৪০ (পৌরনীতি)। অথচ দুই বছর ধরে তিনি পড়েছেন অর্থনীতি, যার বিষয় কোড ১৪১!

শুধু জয়া রাণী দাস কিংবা ইশরাত জাহান রিক্তাই নয়, বিষয় কোডে এমন ভুলে মহাবিপাকে যশোর শিক্ষা বোর্ডের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। দেখা গেছে শিক্ষার্থীরা এসএসসির প্রস্তুতি নিয়েছেন পৌরনীতি বিষয়ের কিন্তু প্রবেশপত্রে বিষয় কোড পেয়েছেন অর্থনীতি, কিংবা হিন্দু ধর্ম পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখছেন প্রবেশপত্রে তার বিষয় কোড ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা! এ নিয়ে রীতিমতো আতঙ্ক তৈরি হয়েছে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে।

Examএদিকে, প্রবেশপত্রে বিষয় কোড সংশোধন করতে করতে রীতিমতো ক্লান্ত যশোর শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রতিদিন শত শত আবেদন জমা পড়ছে। তবে পরীক্ষা চলমান থাকায় বোর্ড কর্তৃপক্ষও তড়িৎ গতিতেই এর সংশোধন করে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই বছর আগে করনোকালীন লকডাউনের মাঝে রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল পরীক্ষার্থীদের। ওই সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কিংবা কম্পিউটার সহকারীরা রেজিস্ট্রেশন করান। তাদের সেই ভুলের মাশুলই এখন গুণতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।


বিজ্ঞাপন


বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, ৯ম শ্রেণিতে ওঠার পর শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন করতে হয়। বর্তমানে যারা পরীক্ষা দিচ্ছে তারা ২০২১ সালে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে। সে সময় তাদের বিষয়গুলো নির্ধারিত হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ওই সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোর্ডে চূড়ান্ত তথ্য প্রেরণের পূর্বে শিক্ষার্থীদের প্রিন্টআউট দেখাবে। পরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক প্রিন্ট কপি দেখে তাতে স্বাক্ষর করে স্কুলে জমা দেবে। এছাড়াও প্রবেশপত্র প্রদানের পূর্বেও বিষয় ও বিষয় কোড মিলিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে।

খুলনার লায়নস্ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. বাদশা খান ঢাকা মেইলকে জানান, যদি কোনো প্রধান শিক্ষক তার শ্রেণি শিক্ষক ও কেরানি দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি করান তবে এমন ভুল হতেই পারে।

একই কথা জানিয়েছে যশোর শিক্ষা বোর্ডের একাধিক সূত্র। সবার ভাষ্য, রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে সর্বশেষ দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকের। তিনি অনেক ক্ষেত্রে সচেতনতার পরিচয় দেন না। অথবা দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন না, তখন শিক্ষার্থী-অভিভাবককে চরম মূল্য দিতে হয়। মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দায়িত্বে অবহেলার জন্যেই বোর্ড ও শিক্ষার্থী সবাইকেই বর্তমানে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিষয় কোডে ভুলের সমস্যায় পড়া শিক্ষার্থীদের কয়েকটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আবেদনটি বিদ্যালয়ের সুপারিশসহ শিক্ষা বোর্ডে পৌঁছাতে হচ্ছে। আর প্রতিটি বিষয় কোড পরিবর্তনে ফি জমা দিতে হচ্ছে ৮শ’ টাকা। এছাড়াও শিক্ষা বোর্ডে আসা-যাওয়া খরচসহ নানা খরচ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান।

যদিও বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোনো শিক্ষার্থীর এ ধরনের সমস্যা হলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত আবেদন করতে হবে। বোর্ডও দ্রুত বিষয়টি সংশোধন করবে। এতে কোনো পরীক্ষার্থী সমস্যায় পড়বে না।

Examতবে এরকম ভুল কেন হচ্ছে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. দিল আরা চৌধুরী ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা সাধারণত শিক্ষার্থীদের শ্রেণি শিক্ষকের মাধ্যমে সংশোধনের জন্যে প্রিন্ট কপি দেই। হয়তো ওই শিক্ষার্থী মনোযোগের সঙ্গে সেটা দেখেনি অথবা ১১০ বা ১১১ কোড পাশাপাশি থাকায় ভুলক্রমে অনলাইনে পূরণের সময় চাপ পড়েছে। তবে আমরা বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সংশোধনের চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে নড়াইল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. ফিরোজ কিবরিয়া ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, তার বিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষার্থীর এই সমস্যা হয়েছে। রেজিস্ট্রেশনের সময় তিনি দায়িত্বে ছিলেন না। তবে শিক্ষার্থী, শ্রেণি শিক্ষক বা কেরানি কারও না কারও ভুল ছিল দাবি করে তিনি বলেন, দায়িত্বে থাকা প্রধানও এর দায় এড়াতে পারেন না।

বিষয় কোডে এমন ভুলের কথা জানিয়েছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিন উদ্দীনও। তিনি জানিয়েছেন, তার বিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষার্থীর এরকম বিভিন্ন বিষয়ের কোড ভুল এসেছে। ইতোমধ্যে শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করে সেগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে এখনো তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সা নেননি বলেও দাবি করেন তিনি। সেই সঙ্গে জানান, বিদ্যালয় পরে এ বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেবে।

কেন এমন ভুল হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনা অতিমারির কারণে ওই সময় ক্লাস বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো পাওয়া যায়নি, আর যারা এটার দায়িত্বে ছিলেন তারাও হয়তো গাফিলতি করেছেন।

তবে শিক্ষা বোর্ড সংশোধনের সুযোগ না দিলে কী হতো এমন প্রশ্ন করলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।

এ বিষয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. সিরাজুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, বিষয় কোড সংশোধন করতে করতে তিনি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হাঁপিয়ে উঠছেন। এত ভুল যে সংশোধনের সুযোগ না দিলে অসংখ্য শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তবে এই ভুলের জন্য তিনি করোনার কারণ যেমন উল্লেখ করেন তেমনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দায়িত্ব-কর্তব্যে অসচেতনতার বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

সিরাজুল ইসলাম জানান, আগামীতে রেজিস্ট্রেশনের সময় প্রতিষ্ঠান প্রধানদের আরও সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এছাড়া বিষয় কোডে ভুলের বিষয়টি স্বীকার করে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহীন আহম্মেদ জানিয়েছেন, আবেদন আসলে তিনি বিদ্যালয় পরিদর্শকের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ঠিক করে সমাধান দিচ্ছেন। এ সময় অনেক শিক্ষার্থীর এ জাতীয় সমস্যা হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

প্রতিনিধি/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর