বুধবার, ১ মে, ২০২৪, ঢাকা

৩৪ বছর ধরে ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী তিনি

বেলাল হোসেন রাজু
প্রকাশিত: ০১ এপ্রিল ২০২২, ০৫:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

‘আল্লাহর ঘর মসজিদের খেদমত করতে পারছি, এটাই আমার আনন্দ। সবার কাছে বলি, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পরিচ্ছনতাকর্মী। বাগান পরিষ্কার করি। গাছে পানি দিই। মসজিদের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি। এসব আমি গর্বের সাথে বলি। এই কাজগুলো আমার খুব ভালো লাগে। নিজেকে আমি ধন্য মনে করি।’

এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের বাগানের মালি মানিকগঞ্জের হেদায়েত উল্লাহ। তিনি ১৯৮৮ সালে চাকরিজীবন শুরু করেন। বাগানের মালি হলেও তিনি মূলত মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন।


বিজ্ঞাপন


তাঁর সাথে কথা বলে জানা যায়, মসজিদের বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ করা, মসজিদের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ মুসল্লিদের সার্বিক সহযোগিতায় তিনি কাজ করেন।

তাঁর গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানার বাঘুটিয়ার চরকাটিয়া গ্রামে। তার দুই ছেলে। বড় ছেলে কোরআনে হাফেজ। আর ছোট ছেলে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। 

হেদায়েত উল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা এক সাথে অনেকেই চাকরি শুরু করেছিলাম। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই বেঁচে নেই। আল্লাহ আমাকে এখনও বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমার চাকরির ৩৪ বছর চলছে। দীর্ঘ এই কর্মজীবনে কতশত ঘটনার সাক্ষী হয়েছি।’  

হেদায়েত উল্লাহকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘তিনি দীর্ঘদিন এই মসজিদের কাজ করেন। তাঁর পোস্টটা মূলত বাগানের মালি। তিনি অত্যন্ত সহজ-সরল একজন মানুষ। ডিজিটাল যুগ নিয়ে তার কোনো ধারণাই নাই। খুবই সরল, সাধারণ এবং কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষ। সবার সাথে সুন্দর ব্যবহার করেন।’


বিজ্ঞাপন


খতিব বলেন, ‘আমরা তাঁর প্রতি যথেষ্ট সম্মান রাখি এবং তাঁর কর্মের মূল্যায়ন করি। প্রত্যাশা করি তিনি যেন তাঁর বাকি জীবন সুন্দর এবং সুস্থভাবে কাটাতে পারে।’

du2

মসজিদ গেইটের সামনে লেবুর শরবত বিক্রি করেন ফজর আলী। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘হেদায়েত চাচা খুব সকালে উঠেই মসজিদের আশেপাশে ঝাড়ু দেন। পাতাগুলো সংগ্রহ করে এক জায়গায় রাখেন। আমি অনেক বছর ধরে শরবত বিক্রি করি। কখনও চাচাকে রাগ করতে দেখিনি। চুপচাপ থাকেন। কোনো ঝামেলা পছন্দ করেন না।’

মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তে আসা রফিক হোসেন বলেন, ‘অনেক দিন ধরে ওনাকে চিনি। তিনি ভালো কাজ করেন। শান্ত প্রকৃতির মানুষ। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করেন।’

জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় হেদায়েত উল্লাহর প্রত্যাশা শুধু এই আল্লাহর ঘরের খেদমত করা। দুই সন্তান একটা ভালো চাকরি পেলেই তিনি স্বস্তি পাবেন বলে জানান।

ফিরে দেখা ঢাবি কেন্দ্রীয় মসজিদ

ব্রিটিশ শাসন আমলের ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন শিল্পশৈলীসহ মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন শত শত মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর এই ধারা অব্যাহত থাকে পাকিস্তান আমলেও। চমৎকার নির্মাণশৈলী, কারুকার্য ও নান্দনিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটির তিন দিকে রয়েছে খোলা প্রাঙ্গণ। মসজিদের পিছনের দিকে রয়েছে বৃক্ষারাজি দ্বারা আচ্ছাদিত।

du3

১৯৬৬ সালের ২০ ডিসেম্বর পাঁচ বিঘা জমির ওপর মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত। এ মসজিদটি পবিত্র রমজান মাসের এক শুক্রবার উদ্বোধনের পর মাগরিবের নামাজ আদায় করা হয়। মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. ওসমান গনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩টি মসজিদের মধ্যে এটি সেন্ট্রাল।

মসজিদে দুটি মিনার, ভেতরে রয়েছে গোলাকার বেশ কিছু পিলার, কারুকার্য খচিত দরজা-জানালা, ঝাড়বাতি নয়টি, আলমারি দুটি। আলমারিতে রয়েছে কোরআন-হাদিসের প্রায় দুশো অমূল্য বই। মসজিদের ভেতরে ২৩ লাইনে (কাতার) নামাজে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি কাতারে ৭৫-৮০ জন মুসল্লি দাঁড়াতে পারেন। এছাড়া মসজিদের বারান্দার অংশে রয়েছে আরও ১০টি কাতার। সেখানেও প্রতি কাতারে ৭৫-৮০ জন দাঁড়াতে পারে। প্রতি শুক্রবার মসজিদে প্রায় আড়াই হাজার মুসল্লির সমাগম হয়।

বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন ড. শমসের আলী, ড. আমিনুল ইসলাম, সৈয়দ আহমদ খান, ড. এবিএম হাবিবুর রহমান চৌধুরী, ড. শহীদ উদ্দিন।

বিএইচআর/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর