বুধবার, ৮ মে, ২০২৪, ঢাকা

জাবিতে অতিথি কক্ষে শিক্ষার্থীর কান ফাটালেন ছাত্রলীগ নেতা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩, ১০:৫৭ পিএম

শেয়ার করুন:

জাবিতে অতিথি কক্ষে শিক্ষার্থীর কান ফাটালেন ছাত্রলীগ নেতা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের অতিথি এক শিক্ষার্থীকে চড় মেরে কান ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ ফরিদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) রাত সাড়ে ১০ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ভূক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সজিব আহমেদ। সজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত ফরিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষর্থী।


বিজ্ঞাপন


প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে কয়েকজন বহিরাগতদের সাথে মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা হয়। সেখানে বহিরাগত একজন ছিলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনিন্দ্য দিব্য। তাকে মীর মশাররফ হোসেন হলে নিয়ে যায় হলের শিক্ষার্থীরা। অনিন্দ্য দিব্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পূর্বপরিচিত ছিল।

এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের হলের গেস্টরুমে ডেকে নেন হলের নেতারা। তারা দিব্য ও অন্যান্য বহিরাগতের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের জবাব চান এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে সজীবের কানে এলোপাথাড়ি থাপ্পড় মারে হাসান মাহমুদ ফরিদ। এতে সজীবের কান দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। সজীবকে তার বন্ধুরা মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান বাঁধা দেন। পরে সজীবের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়া হয়। পরে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অতিথি কক্ষে আমাদের পাঁচজনকে সামনে দাঁড় করিয়ে কানে থাপ্পড় দিতে থাকেন ভাইয়েরা। সজিবের কানে একটু আগে থেকেই সমস্যা ছিল। থাপ্পড়ের কারণে তার কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল।’

অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান বলেন, ‘আমরা হলে প্রতি সপ্তাহে গেস্টরুম করি। সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজকর্ম করার জন্য সেখানে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়। গতকালও তেমনটিই হয়েছিল।’


বিজ্ঞাপন


তবে অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘তাকে তো মারা হয়নি। তার কানে আগে থেকেই একটু সমস্যা ছিল। ডাক্তার তাকে পানি লাগাতে নিষেধ করেছে। গেস্টরুমে একটু চিৎকার হয়েছিল, তাতেই তার কানের সমস্যা দেখা দেয়। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য আমরাই দায়িত্ব নিয়ে মেডিকেলে পাঠিয়েছিলাম। সে আমাদের ছোটভাই তাকে কেনো আটকিয়ে রাখব?’

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হাসান মাহমুদ ফরিদ বলেন, ‘কাল রাতে গেস্টরুম হয়েছিল। সেখানে স্বাভাবিক কথাবার্তা হয়েছে। কাউকে কানে থাপ্পড় দেওয়া বা মারা হয়নি। ওই ছেলে গেস্টরুমে অসুস্থ বোধ করছিল, তাই তাকে আমরা তার বন্ধুদের সঙ্গে হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’

অতিথি কক্ষে এ ঘটনার সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও শাহ পরান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক আল রাজি সরকার প্রমুখ। তারা সবাই মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী বলে পরিচিত।

ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘অতিথি কক্ষে নির্যাতন কিংবা মারধর হয়ে থাকলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। স্বপ্রণোদিত হয়ে দুপক্ষকে ডেকে সমাধানের চেষ্টা করবো।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর