শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ভাষা দিয়ে নারীকে দমিয়ে রাখার প্রবণতা দূর করতে হবে: শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২৩, ০৫:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

ভাষা দিয়ে নারীকে দমিয়ে রাখার প্রবণতা দূর করতে হবে: শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে নারী অগ্রগতিতে প্রাপ্তি অনেক। তবে নারীর অধিকারে অনেকদূর এগোলেও সামাজিক রক্ষণশীলতা রয়েছে জানিয়ে ভাষা দিয়ে তাদের দমিয়ে রাখার প্রবণতা দূর করতে হবে।

শনিবার (১৮ মার্চ) রাজধানীর ফার্স হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জাতীয় পরিষদ সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে  এসব কথা বলেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


ডা. দীপু মনি বলেন, নতুন সমাজ গড়তে হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক সংগঠন খুব জরুরি। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে নারীর অগ্রগতিতে আমাদের প্রাপ্তি অনেক। তবে নারীর অধিকারে অনেক দূর এগোলেও সামাজিক রক্ষণশীলতা এখনও কিছুটা রয়ে গেছে। নারী সর্বোচ্চ পদে থাকলেও নারী নিরাপদ নয়। তাই অগ্রগতিতে নারীদের দৃশ্যমানতা বাড়াতে হবে। ধর্ষণের ঘটনায় নারীর ইজ্জত সম্ভ্রমহানির মতো  সামাজিক ধারণা থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে। এর আচরণগত দায় পুরুষের। বিশেষ করে ভাষা দিয়ে নারীকে দমিয়ে রাখার প্রবণতা দূর করতে হবে।

নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পুরুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সমাজে নারী-পুরুষের সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে, নারীর অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করতে হলে পুরুষকে এই আন্দোলনে যুক্ত করতে হবে। রাজনীতিতে নারীর অগ্রগতির জন্য তাদের আত্মবিশ্বাস তৈরির জন্য আরও কাজ করতে হবে। সাইবার স্পেসে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকা জোরদার করতে হবে। আমরা এগিয়েছি অনেক অনেক দূর, কিন্তু যেতে হবে আরও বহুদূর।

এসময় নারীর অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে হলে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারী বান্ধব রাজনীতি ও বিভিন্ন সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান ডা. দীপু মনি।

জাতীয় অধ্যাপক ও স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহলা খাতুন বলেন, দেশের নেতৃত্বের উচ্চপর্যায়ে নারীরা এলেও এখনও অনেক নারী বঞ্চনার শিকার। সামাজে লিঙ্গ বৈষম্য আছে। তাই নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আরও উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। তৃণমূল থেকে কাজ করতে হবে। নারীদের প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে যথাযথ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।


বিজ্ঞাপন


তথ্য কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান তথ্য কমিশনার সুরাইয়া বেগম বলেন, নারীর প্রতি বৈষম্য রোধে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সাংগঠনিকভাবে জোরালো ভূমিকা পালন করছে, তারা প্রতিবাদ জানিয়েছে। পাশাপাশি দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনের মাধ্যমে জোরালো ভূমিকা নারীর ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তির জন্য কাজ করতে হবে। এ সময় তিনি সাংগঠনিক সক্ষমতার মাধ্যমে এলাকার নারী ও কন্যা শিশুদের অগ্রগতির জন্য সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার আহ্বান জানান।  

সুইডেন অ্যাম্বাসাডর মিস আলেকক্সান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ড বলেন, আজকের সভায় জাতীয় পরিষদের আগত অধিকসংখ্যক সদস্যদের উপস্থিতি দেখে আমি অভিভূত। খুলনা, কুড়িগ্রাম, চট্টগ্রামের নারীদের যেকোনো পরিস্থিতিতে লড়াই করার ক্ষমতা দেখে আমি বিস্মিত। এদেশের সামাজিক প্রথা, বৈষম্যপূর্ণ সামাজিক রীতি-নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শক্তি ও সক্ষমতা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের রয়েছে। বাংলাদেশ নানা অগ্রগতির পরও নারীর পুরুষের সমতার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। এসডিজি রিপোর্ট অনুসারে নারীদের কাজ হারানোর হার বাড়ছে, বিনাপারিশ্রমিকে কাজের বোঝা বাড়ছে। এজন্য বঞ্চিত নারীদের কণ্ঠস্বরকে জাতীয় পর্যায়ে তুলে আনার জন্য বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জোরালো ভূমিকা রয়েছে। 

এ সময় তিনি আশা করেন বাংলাদেশে মহিলা পরিষধ এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে যাতে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে থাকা বৈচিত্রকে ধারণ করে আগামীতে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে।

স্বাগত বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে মালেকা বানু বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত ১৩তম জাতীয় সম্মেলনের পর প্রথম জাতীয় পরিষদ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সভার মাধ্যমে গত এক বছরের কাজের প্রতিবেদন উপস্থাপন এবং মূল্যায়নের পাশাপাশি বর্তমানে নারীর অগ্রযাত্রার সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নারী আন্দোলন ও সংগঠনের জন্য চিহ্নিত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যূগুলোর উপরে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা ও পর্যালোচনা শেষে ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে সুপারিশ গৃহীত হবে। 

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারী অধিকারের ও বৈষম্য দূরের লড়াই নারীকে সাথে নিয়েই করতে হয়ে। ধর্মান্ধগোষ্ঠীর দাপট আছে শিক্ষা, প্রযুক্তিতে, সামাজিক মাধ্যমে। এ অবস্থায় শিক্ষা আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি। নারী আন্দোলনের ক্রমান্বিত ধারা আছে। বেগম রোকেয়ার সময় থেকে আজকের নারীর অবস্থানে অনেক পরিবর্তন এসেছে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্য থেকে। সমাজ রক্ষণশীলতাকে ভেঙে নারী উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে। নারী পুরুষের বৈষম্য দূরের লড়াইকে ক্রমাগত চালিয়ে নিতে হবে। নারীর মাতৃত্বের ইস্যুকে সামনে এনে তার চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, বৈষম্য করা হচ্ছে। এসব পরিস্থিতির উত্তরণে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

এর আগে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সংগঠন গড়ি, নতুন সমাজ বিনির্মাণ করি’ জাতীয় পরিষদের সভার উদ্বোধন করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন সুরাইয়া বেগম ও তার দল। সম্মেলনের উদ্ধোধনী ঘোষণা করেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। পরে উদ্বোধনী অধিবেশন সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সুস্মিতা আহমেদ। সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি ডা. মাখদুমা নার্গিস। এসময় প্রয়াত সকল বিশিষ্টজনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এমএইচ/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর