দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্বোধন হলো শামীম সিকদার ভাস্কর্য পার্কের। স্বাধীনতা সংগ্রাম চত্বরের পরিবর্তে নতুন নামে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই পার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে স্থাপন করা প্রায় আড়াইশ ভাস্কর্য সম্বলিত এই পার্কে প্রবেশ করতে লাগবে না কোনো টিকিট।
ইতোমধ্যে পার্কে সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে। জানানো হয়েছে শুক্রবার এবং শনিবারসহ সব সরকারি ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এই পার্ক। এছাড়া বাকি সব দিন দুপুর ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই পার্ক।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় শামীম শিকদার ভাস্কর্যের কিউরেটর মো. ইমরান হোসেন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

কিউরেটর বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর শামীম শিকদারের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন এবং পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন নামে পার্ক হিসেবে নামাঙ্কিত করা হয়েছে। বহির্বিশ্বে ভাস্কর্য পার্ক থাকলেও বাংলাদেশে এটাই প্রথম। বিদেশি নাগরিকসহ সর্বসাধারণের সামনে জাতির বীরদের পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের এই প্রয়াস।
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এমন পার্ক তৈরি নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। এই পার্ক সম্পর্কে কিছু জানা নেই বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে কিউরেটর ইমরান হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এমন ভাস্কর্য পার্ক প্রতিষ্ঠা করে আমরা কোনো বিশেষ অপরাধ করিনি।
বিজ্ঞাপন
এদিকে গতকাল রাতে স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যের দেয়ালে ‘শামীম সিকদার ভাস্কর্য পার্ক’ নামাঙ্কিত লেখা দেখার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের আনাগোনা কমানের জন্য প্রশাসন নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। কিন্তু এমন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক পার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশে এবং প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রতি চপেটাঘাত ছাড়া কিছু নয়। এমন মুক্ত পার্কে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের আনাগোনা আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা।

নাহিদ হাসান নামে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী ঢাকা মেইলকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এমন বিনোদন কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে যায় এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন ওই শিক্ষার্থী।
এই বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এমন ব্যক্তিকেন্দ্রিক উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ নেই। সব ধরনের নান্দনিক শিল্প, ভাস্কর্যের প্রতি সব সময় শ্রদ্ধা জানাই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কী করবে না করবে তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার একান্তই অধিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। তাই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানান।
এবিষয় সম্পর্কে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মুস্তাফাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি মোবাইলে কথা বলতে সম্মত হননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পাবলিক পার্ক নিয়মবহির্ভূত। তবে শামীম সিকদার ভাস্কর্য পার্ক সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান তিনি।
প্রতিনিধি/জেবি

