শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

ভালো ফলের পরও সন্তানের ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা’

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১০:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

ভালো ফলের পরও সন্তানের ‘ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা’
ছবি: ঢাকা মেইল

দেশের নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত বেশিরভাগই রাজধানী ঢাকায়। এর মধ্যে মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে থাকে এখানে ভর্তি হওয়ার প্রবল আগ্রহ। কারণ একদিকে ভালো প্রতিষ্ঠান, অন্যদিকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পেলে অনেকটা নিশ্চিন্তে এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারেন একজন শিক্ষার্থী। প্রতিবছরের মতো এবারও এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করেছে ভিকারুননিসা। সন্তানদের ভালো ফলে অভিভাবকরা খুশি হলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের অনেকের চোখেমুখে ছিল দুশ্চিন্তার ছাপ।

বিশেষ করে করোনার কারণে অনলাইনে ক্লাসের পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষায় হওয়ায় পুরো বই পড়ার সুযোগ হয়নি শিক্ষার্থীদের। কিন্তু সামনে মেডিকেল, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষার জন্য নিজেকে কতটা প্রস্তুত করতে পারবে সন্তানরা- তা নিয়ে টেনশনের যেন শেষ নেই অভিভাবকদের।


বিজ্ঞাপন


কেউ কেউ দাবি করছেন, শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা যেন শর্ট সিলেবাসে নেয়া হয়। না হলে পিছিয়ে পড়বে শিক্ষার্থীরা।

HSCবুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দিনভর ক্যাম্পাসে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে শিক্ষকদেরও দেখা গেছে আনন্দ ভাগাভাগি করতে। অনেকে আবার শিক্ষার্থীদের বুকে জড়িয়ে আদর করেও দিয়েছেন।

সন্তানদের ভালো ফলাফলে বাবা-মায়ের চোখে মুখে হাসির ঝিলিক। তবে কেউ কেউ নীরবে দাঁড়িয়ে যেন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনায় সময় কাটিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানটির মাঠের পশ্চিম কর্নারে নিজেদের মধ্যে আড্ডা দিচ্ছিলেন তিনজন অভিভাবক। এ সময় সঙ্গে কথা হয় তাদের সঙ্গে। তিনজনই গৃহিণী। সবার সন্তান গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাই অনেক খুশি।


বিজ্ঞাপন


তারা জানালেন, গত ১২ বছর ধরে ভিকারুননিসায় আসা-যাওয়া করতে করতে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে। যা এক সময় পারিবারিক সম্পর্কে রূপ নিয়েছে। বললেন, প্রত্যেকের সন্তানই আমাদের কাছে নিজের সন্তানের মতো। তাই ওদের সফলতা সবাইকে তাদের আনন্দ দেয়।

HSCকথা প্রসঙ্গে একজন বললেন, মেয়েদের জন্য সেরা প্রতিষ্ঠান এটি। সন্তানদের ক্যাম্পাস প্রবেশ করানোর পরে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো টেনশন করতে হয়নি। কিন্তু সামনের দিনে ওদের পথচলা কতটা নিরাপদ হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে।

তবে পাশ থেকে আরেকজন বললেন ভিন্ন বিষয়ে দুশ্চিন্তার কথা। তা হলো- করোনার কারণে অনলাইনে পাঠদান করতে হয়েছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে দিতে হয়েছে পরীক্ষা। তাই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পরীক্ষা যদি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেয়া না হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়তে পারে।

পাশে দাঁড়ানো মেয়েকে দেখিয়ে তিনি বলেন, ওকে মেডিকেলে ভর্তি করাতে চাই। কোচিং করছে। মার্চের ১০ তারিখ পরীক্ষা হওয়ার কথা। এত অল্প সময়ে পুরো প্রস্তুতি নিতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তাই শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অনুরোধ পরীক্ষাও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেয়া যায় কিনা ভেবে দেখবেন।

HSCঅভিভাবকদের এমন উদ্বেগ নিয়ে প্রশ্ন ছিল ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহারের কাছে।

ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ জানাতেই পারেন। তবে সরকার নিশ্চয়ই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

তবে পরিস্থিতি যাই হোক নিয়মিত পাঠদানের বাইরেও উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দেয়া হয় জানিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, আশা করি অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে প্রতিযোগিতামূলক যে কোনো পরীক্ষায় আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো করবে।

HSCআর এখানকার ইংরেজি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক মুনমুন সাহা ঢাকা মেইলকে বলেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করেছে। আবার পুরো সিলেবাস পড়ারও সুযোগ পায়নি। ফলে সামনের দিনগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য কিছুটা ঘাটতি রয়ে যাবে। তবে আমাদের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি ছিল না।

প্রসঙ্গত, বুধবার ঘোষিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

ভিকারুননিসা থেকে এবার তিন বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় ২৩৪৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৩৩৫ জন পাস করেছেন। অকৃতকার্য হয়েছেন ১১ জন। পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২১০০ শিক্ষার্থী।

HSCপ্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, এবার ভিকারুননিসা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ১৮০৫ জন, মানবিক থেকে ২৪৬ জন এবং ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ থেকে ২৯৫ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে পাস করেন ১৭৯৮ জন এবং জিপিএ-৫ পান ১৫৮৪ জন শিক্ষার্থী। মানবিক বিভাগ থেকে ২৪৪ জন পাস করেছেন এবং ২১৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ২৯৩ জন পাস করেছেন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২০৩ জন।

১১ জন ছাত্রীর অকৃতকার্য হওয়ার কারণ জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ কামরুন নাহার বলেন, অসুস্থতার কারণে ওই শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত ছিল।

তবে প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ঢাকা মেইলকে বলেন, মোট ১১ জনের মধ্যে ৭ জন অনুপস্থিত আর চারজন ফেল করেছে। ওই শিক্ষকরা আরও বলেন, অনুপস্থিত থাকলেও ফলাফলের হিসেবে তো অকৃতকার্যই।

বিইউ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর