বিজ্ঞান ভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক এবং মানবিক শিক্ষা কারিকুলামের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ গোষ্ঠী অপপ্রচার চালাচ্ছে দাবি করে এটি বন্ধে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের নেতৃত্বে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বিজ্ঞাপন
মানববন্ধনের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, একটি বিজ্ঞান ভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক এবং জীবনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। এই দাবি বাস্তবায়নে সকলশ্রেণির সচেতন মানুষ যখন ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করছেন তখন প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তিনি এই অপপ্রচার বন্ধে এবং নারীপুরুষের সমতাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ গঠনে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার গুরুত্বকে তুলে ধরতে সরকার এবং গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, প্রণীত শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের ব্যক্তি এবং সাম্প্রদায়িক, ধর্মান্ধগোষ্ঠী উভয়ই সমালোচনা করছে। শিক্ষাক্রমে থাকা ভুল ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে কিন্তু এদেশের অনেকে শিক্ষানীতিকেই শিকার করে না। এসময় তিনি পাঠ্যসূচিকে ত্রুটিমুক্ত করতে শিক্ষামন্ত্রণালয় ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে সহযোগিতা করার আহবান জানান।
সংগঠনের সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক এবং মানবিক এই শিক্ষা কারিকুলামকে দিনে দিনে আরও পরিমার্জন করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও দায়িত্ব নিতে হবে। এ লক্ষে প্রাথমিক স্তর থেকেই হাজার বছরের বাঙালির সংস্কৃতি ও কৃষ্টি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতে হবে। প্রতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের ড্রয়িং ক্লাস, শরীর চর্চা এবং লাইব্রেরি ওয়ার্ক করাতে হবে।
বিজ্ঞাপন
মানববন্ধন কর্মসূচিতে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির প্রতিনিধিদের মধ্যে গণস্বাক্ষরতা অভিযানের শামসুন্নাহার ভূঁইয়া, আইন ও শালিস কেন্দ্রের রাখী জামান, ওয়াইডব্লিউসিএ-এর শিক্ষার্থী পূজা কর এবং আইইডি-এর তারিক হাসান সংহতি প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষানীতিসহ সমাজ ও রাষ্ট্রকে অসাম্প্রদায়িক করে গড়ে তুলতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। কারিকুলাম নিয়ে অপপ্রচার বন্ধে সকলকে সোচ্চার হতে হবে, এনসিটিবিকে সমৃদ্ধ করতে সম্মিলিতভাবে আরও কাজ করতে হবে।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক খুরশিদা ইমাম, ঢাকা মহানগরের সহ-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু ধর, আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি।
বক্তারা বলেন, পাঠ্যুসূচিতে থাকা কনটেন্টগুলো নানাভাবে বিকৃত করে বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রণীত শিক্ষা কারিকুলামকে রক্ষার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তারা।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষানীতি নিয়ে যারা সামাজিক অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং পাঠ্যক্রম প্রণয়ণের সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে যারা বিরূপ মন্তব্য করছে তাদের জন্য এই আইনের আওতায় কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, জাতীয় বিপর্যয় এলে তা প্রতিহত করতে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবেলা করতে কোনো দ্বিধা করবে না। সকল মানুষের শিক্ষার অধিকারকে বাস্তবায়ন করতে আমরা এক হয়ে কাজ করব।
মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শেষে সংগঠনের পক্ষে প্রস্তাব পাঠ করেন ঢাকা মহানগর কমিটির আন্দোলন সম্পাদক জুয়েলা জেবুননেসা খান।
এই কর্মসূচিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির প্রতিনিধি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান, ও বিশিষ্ট সংস্কৃতিজন রতন সিদ্দিকী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচ/এসএস/