বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

তুচ্ছ ঘটনায় হাবিপ্রবিতে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:০৩ পিএম

শেয়ার করুন:

তুচ্ছ ঘটনায় হাবিপ্রবিতে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীরা

তুচ্ছ ঘটনার জেরে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ছাড়াও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল (সম্প্রসারিত) হল ও জিয়া হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ওই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।


বিজ্ঞাপন


জানা গেছে, ২০১৯ সালে নারীঘটিত একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। ওই ঘটনার রেশ ধরে গতকাল সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের ভেতরে ১৯ ব্যাচের ফুড অ্যান্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির সামিউল ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের জাহিদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জাহিদসহ ৬ থেকে ৭ জন সামিউলকে মারধর করে।

ওই সময় পাশে থাকা ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক এবং একজন সহকারী প্রক্টর এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন সামিউল। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীনের রুমে ডাকা হয় জাহিদকে। জাহিদ বিষয়টি তার হলের বন্ধুদের জানিয়ে সেখানে যায়।

HSTUতবে সমঝোতা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল (সম্প্রসারিত) হলের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে ঢুকে পরে। এতে সেখানে শিক্ষকদের সামনেই হট্টগোল বাধে। পরে শিক্ষকরা বিশৃঙ্খলা থামানোর চেষ্টা করলেও পরিস্থিতি শান্ত না হয়ে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। এ সময় ফুড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৭ ব্যাচের শুভ্র এবং আবেদীন আঘাতপ্রাপ্ত হয়। যদিও জাহিদের বন্ধুদের অভিযোগ- আগে জিয়া হলের আকাশ কলাপসিবল গেট লাগিয়ে ফ্যাকাল্টিতে ঢোকায় জাহিদের সঙ্গে থাকা বন্ধুদের শাসালে শেখ রাসেলের ছেলেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হয়ে আসে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে সেসময় তার (আকাশের) কক্ষে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি এবং ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।


বিজ্ঞাপন


ওই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টিতে। সেখানে জিয়া হলের কিছু শিক্ষার্থী আহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে জিয়া হল থেকে ছেলেরা বের হয়ে আসে। একপর্যায়ে দুপুর আড়াইটার দিকে শেখ রাসেল (সম্প্রসারিত) হল ও জিয়া হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাসে আধা ঘণ্টা পর উভয় পক্ষ শান্ত হয়।

HSTUলিখিত অভিযোগ দেওয়া সামিউল বলেন, ‘২০১৯ সালে এগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির পর এক মেয়ের সঙ্গে আমার স্বাভাবিক বন্ধুত্ব হয়। তবে তার সঙ্গে মেশা মেয়েটির বয়ফ্রেন্ড ভালোভাবে নেয়নি। একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় গেটে হোটেলে দেখা করতে ডাকে। সেখানে তার কথা বলার অ্যাপ্রোচ দেখে সেদিন আমার সঙ্গে থাকা ম্যাচের এক বন্ধু ও ১৮ ব্যাচের একজন বড়ভাই ওকে (জাহিদ) ডাকতে বলে। আমি তাদের (জাহিদসহ তার প্রেমিকা) ডাকি। এরপর ওই মেয়ে ও জাহিদ আসলে জাহিদ সালাম না দেওয়া ছাড়াও রাত ৮টায় সেই মেয়ের বাইরে থাকা নিয়ে প্রশ্ন করে। তখন বড় ভাইদের সঙ্গে জাহিদ তর্ক করলে সেই ভাই তাকে থাপ্পড় মারে। পরে হলের ভাইরা আমাদের দুইজনকে ডেকে বিস্তারিত শুনে ঘটনা মিটমাট করে দেয় ২০১৯ সালেই। জাহিদ তখন ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়নি। ওই ঘটনার পর সেই মেয়ের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ নেই।’

এদিকে, জাহিদের দাবি- ‘আমি গতকাল সামিউল ভাইকে দেখে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে গিয়েছিলাম। কথাবার্তার একপর্যায়ে একটু হাতাহাতি হয়। ওই ভাই সেকেন্ড টাইমার হওয়ায় সিনিয়রিটি খাটাত এবং বিভিন্ন সময়ে আমার গার্লফ্রেন্ডকে উত্যক্ত করত। তার পরিবার ঘটনা জানলে এখান থেকে তাকে একটি বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তি করে দেয়। তার সঙ্গে এখনো আমার সম্পর্ক আছে।’

অন্যদিকে, মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় ইটের আঘাতে উভয় পক্ষের অন্তত ৮ থেকে ১০ জন আহত হয়েছেন।

HSTU

সাম্প্রতিক সময়ে নারীঘটিত বিষয়ে বেশ কয়েকটি মারামারির ঘটনা ঘটেছে হাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে। ফলে এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে অভিমত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

তবে মঙ্গলবারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সার্বিক বিষয়ে হাবিপ্রবির সহকারী প্রক্টর ও সহকারী অধ্যাপক ড. শামীম হোসেন বলেন, আজকের ঘটনাটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়কে কেন্দ্র করে ছিল। ঘটনাক্রমে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আমরা প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ এবং হল সুপারবৃন্দসহ দুই হলের ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির মীমাংসা হয়েছে। এ সময় দুই হলের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা এ ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আর জড়িয়ে পড়বে না বলেও লিখিত দিয়েছে। তবে তদন্ত সাপেক্ষে অনুষদের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলাকারীদের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

প্রতিনিধি/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর