শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

গভর্নিং বডির প্রতি অনাস্থা আইডিয়াল কলেজ শিক্ষকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

গভর্নিং বডির প্রতি অনাস্থা আইডিয়াল কলেজ শিক্ষকদের

অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগে বর্তমান গভর্নিং বডির প্রতি ‘অনাস্থা’ জানিয়ে তাদের বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষকরা। একই সঙ্গে গভর্নিং বডি গঠনে নতুন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা ও অনিয়মের বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত করার দাবিও জানান তারা।

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।


বিজ্ঞাপন


সংবাদ সম্মেল‌নে উপ‌স্থিত ছি‌লেন, কলেজের জীববিজ্ঞান বিভা‌গের অধ‌্যাপক মীর নাস‌রিন সবনম, ইং‌রে‌জি বিভা‌গের শিক্ষক সেুগুপ্তা ইসলাম, ব‌্যবস্থাপনা বিভা‌গের শিক্ষক নাজমুল ইসলাম প্রমুখ।

সংবাদ স‌ম্মেল‌নে লি‌খিত বক্তব্যে পড়েন অধ‌্যাপক মীর নাস‌রিন সবনম।

লিখিত অভিযোগে যা বলা হয়েছে

১৯৬৯ সালে স্থাপিত আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।


বিজ্ঞাপন


কলেজে বর্তমানে ২১টি বিভাগ, ৮২ জন স্থায়ী শিক্ষক, ৫ জন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক এবং প্রায় ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এখানে বর্তমানে বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি পর্যায়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক পর্যায়ের আটটি বিষয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।

কলেজ গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর যাবত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছেন। কিছুদিন আগে বিভিন্ন অনিয়ম করে এবং প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট ও আত্মসাত করেন তৎকালীন অধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহম্মেদ, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক তৌফিক আজিজ চৌধুরী, বাংলা বিভাগের শিক্ষক তরুণ কুমার গাঙ্গুলী সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সুনাম চরমভাবে নষ্ট করেছেন এবং তারা একাডেমিক দিক দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছিলেন।

এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও কিছু সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকায় কখনই এগুলো প্রকাশিত হয়নি এবং এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। এমনকি গভর্নিং বডির সভাপতি সমাজে প্রভাবশালী হওয়ায় উক্ত দুর্নীতিবাজদের রক্ষার জন্য তিনি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে চলেছেন।

অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে সাময়িক বরখাস্থকৃত অধ্যক্ষ ও অপর দুই শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতিগুলো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক তদন্তের পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক তদন্ত কাজের জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস ধরে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও আইনগত জটিলতায় আটকে আছে।

এ তদন্তকাজ বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে উক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মহামান্য হাইকোর্টে রিটপিটিশন দায়ের করেন, যেখানে অন্য আরও ছয়জনের পাশাপাশি কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতিকে প্রতিপক্ষ করা হলেও অজানা কারণে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমনকি কোন আইনজীবীও নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

কলেজ গভর্নিং বডি বিগত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ পরীক্ষায় তাদের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ দিতে না পারায় (উক্ত ব্যক্তি লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে না পারায়) ‘কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থী না পাওয়ার’ কারণ দেখিয়ে ঐ নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে পুনরায় অধ্যক্ষ পদের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে গভর্নিং বডির যোগসাজশে জনাব জসিম উদ্দীন আহম্মেদকে ‘অধ্যক্ষ' হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। উনিই বর্তমানে অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে সাময়িকভাবে বরখাস্থ। একইরকমভাবে, ২০১৫ সালের নভেম্বরে কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে মোঃ মজিবুর রহমানকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়।

ttt

উপাধ্যক্ষ পদের নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে কাঙ্খিত প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরে ঘষামাজা করা হয়েছে এবং নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সদস্যদের স্বাক্ষর বিশেষ কৌশলে জালিয়াতি করা হয়েছে। নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড কর্তৃক উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য কোন সুপারিশও করা হয়নি। পরবর্তীতে গভর্নিং বডির সভায় নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশ ছাড়াই উপাধ্যক্ষ পদে মোঃ মজিবুর রহমানকে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসকল নিয়োগে গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যদের সাথে নিয়োগপ্রাপ্তদের বড় অঙ্কের লেনদেনের কথা জানতে পারা যায়।

এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থীদের শ্রেনিকক্ষে পাঠদানের জন্য অনেক বিভাগেই পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগের বিষয়েও গভর্নিং বডির অনীহা ও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

গভর্নিং বডি যে বিভাগে শিক্ষকের বেশি প্রয়োজন সেখানে নতুন নিয়োগ না দিয়ে খেয়ালখুশি মতো নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। কলেজ গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যদের যোগসাজশে ও তৎকালীন অধ্যক্ষসহ কিছু শিক্ষকদের অবৈধ সহযোগিতায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বিশাল পরিমানে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য চালানো হয়েছে। এমনকি নিয়োগপ্রাপ্তদের শিক্ষানবিশ কাল শেষে চাকুরী স্থায়ী করার সময়ও অনেক শিক্ষকদের নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহণ করাও হয়েছে।

কলেজ গভর্নিং বডির সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে (অর্থ কমিটি, সংস্কার কমিটি ইত্যাদি) অদৃশ্য কারণে সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন না করে অবৈধভাবে বিল পাস করা ও ভুয়া ভাউচারে অর্থ উত্তোলন। করা ইত্যাদিসহ বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম করে কতিপয় দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদেরকে অর্থ লুট-পাট ও আত্মসাত করে দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিয়ে প্রতিষ্ঠানের চরম আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছেন। গতবছর পর্যন্ত একাদশ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সময় বাধ্যতামূলকভাবে বিনা রশিদে নগদ টাকার বিনিময়ে কলেজের ‘ইউনিফরমের কাপড় ও জুতা' প্রদান করা হত।

কলেজের দুর্নীতিগ্রস্থ কতিপয় শিক্ষক ও গভর্নিং বডির কতিপয় শিক্ষক ও গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিতেন। এবছরও এ বিষয়ে গভর্নিং বডির সভায় শিক্ষক প্রতিনিধিদের চরম বিরোধিতার কারণে গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যরা এ অনৈতিক সুবিধা নিতে পারেননি।

অনিয়ম ও দুর্নীতিকে আড়াল করার অভিপ্রায়ে ঐ বিষয়ক কলেজ গভর্নিং বডির সভার সিদ্ধান্ত ও কার্য বিবরণী (রেজ্যুলেশন) যথাযথ সংরক্ষণ করা হয়নি। তৎকালীন অধ্যক্ষ জনাব জসিম উদ্দীন আহম্মেদ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত হওয়া মোট ১১টি রেজ্যুলেশন গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে সংরক্ষিত আছে বলে তার দায়িত্ব অর্পণের সময় বলেন, যা পরবর্তীতে আর পাওয়া যায়নি। সভাপতি সাহেবও সেগুলোর বিষয়ে কোন সদুত্তর দেননি। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ উপেক্ষা করে তিনি দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতা করেছেন। আরও অনেক বিষয়ের অঢেল আর্থিক দুর্নীতি আমাদের সামনে সংঘটিত হলেও আমরা শিক্ষক কর্মচারীরা এ গভর্নিং বডির সভাপতিসহ কতিপয় সদস্যদের কাছে অসহায় অবস্থায় আছি। গভর্নিং বডির অনেক সদস্য বিষয়গুলো অনুধাবন করলেও তারা গভর্নিং বডির সভায় তেমন ভূমিকা রাখার সুযোগ পান না। কলেজ গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি প্রভাবশালী ব্যাক্তি হওয়ার কারণে এসব বিষয়ে সুবিচার পাওয়া সম্ভব হয়না। গভর্নিং বডির অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আমাদের অভিভাবক শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপির মাধ্যমে ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়কে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্যরা গভর্নিং বডির কতিপয় সদস্যদের অসদাচরণ, প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজে কথা বলতে ও অবদান রাখতে সুযোগ না দেওয়ায় গভর্নিং বডির সদস্য পদ থেকে ইতোমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন। ঢাকার সুপ্রতিষ্ঠিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করার জন্য বর্তমান গভর্নিং বডি বাতিল করে নতুন গভর্নিং বডি গঠনের ব্যবস্থা নিতে এবং তাদের দ্বারা সংঘটিত অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে জোর দাবি জানাচ্ছি।

এমতাবস্থায়, দুর্নীতিগ্রস্ত বর্তমান গভর্নিং বডির পরিচালনায় আমরা আইডিয়াল কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তা- কর্মচারী সকল রকমের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করছি। আইডিয়াল কলেজের সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানকে বর্তমান গভর্নিং বডির বিষাক্ত থাবা থেকে মুক্ত করতে আইডিয়াল কলেজের বর্তমান গভর্নিং বডিকে ‘অনাস্থা’ জানিয়ে তাদের বর্জন করার এবং গভর্নিং বডি শিক্ষকদের জোরপূর্বক কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সকল কার্যক্রমকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিচ্ছি।

পিএস/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর