বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

আগামী বছরই পেপারলেস সার্টিফিকেট চালু করতে চায় ইউজিসি

পিয়াস সরকার
প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৯ পিএম

শেয়ার করুন:

আগামী বছরই পেপারলেস সার্টিফিকেট চালু করতে চায় ইউজিসি

আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয়কে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসতে চাই। সব বিশ্ববিদ্যালয় সার্টিফিকেটও অটোমেশনের আমব্রেলায় নিয়ে আসতে চাই। সেই সাথে পরিকল্পনা রয়েছে আমরা পেপারলেস সার্টিফিকেট বিতরণ করব। আমরা আমাদের প্রজেক্ট সরকারকে দিয়েছি। অর্থ মিললেই এই কাজ শুরু করব। আমাদের লক্ষ্য ২০২৪ সাল থেকে পেপারলেস সার্টিফিকেট দেয়া। এর মাধ্যমে সার্টিফিকেট সহজেই সবার কাছে পৌঁছানো যাবে এবং শিক্ষার্থীরা মূল্যায়িত হবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর ড. সাজ্জাদ হোসেন।

ঢাকা মেইলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি উচ্চ শিক্ষায় ইউজিসির নেওয়া নানা পরিকল্পনার বিষয় তুলে ধরেন।


বিজ্ঞাপন


ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমাদের পরিকল্পনায় ন্যাশনাল টিচার্স ট্রেনিং একাডেমির কথা বলা হয়েছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে যোগ্য করে গড়ে তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো প্রয়োজন। আমরা চাইলেই হুট করে বলতে পারি না গবেষণা করুন। এই একাডেমির মাধ্যমে শিক্ষকরা তাদের স্কিলগুলো ডেভলপ করতে পারবেন।

UGCভর্তি পরীক্ষাও আমরা একই আমব্রেলার নিচে আনতে চাই। ভর্তি পরীক্ষা সময় ও অর্থ সাপেক্ষ বিষয়। এক আমব্রেলার নিচে আনলে অল্প পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের যোগ্য স্থানে যোগ দিতে পারবে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা দিয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করছে- এগুলো কাম্য নয়। আমাদের মেডিকেলগুলোতে আগে থেকেই একসাথে পরীক্ষা হয়ে আসছে। এখন আমরা গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা চালু করেছি। তবে এখনো কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এটিতে আসেনি। আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করছি। আমরা চাই সবাই গুছিয়ে আওতায় আসুক। এরপর আমরা ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি চালু করব। শিক্ষক নিয়োগের জন্যও একটি কমিশন চালু করতে চাই। তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও পিএসসির মতো করে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবেন।

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। দেশকে এগিয়ে নিতে গবেষণা প্রয়োজন। গবেষকদের সম্মান করতে হবে। উদ্যোক্তাদের সম্মান করতে হবে। সেই সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। এগুলো এককভাবে তৈরি হবে না। সামাজিকভাবে পরিবর্তন আনতে হবে। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আমরা সেই মর্যাদার জায়গায় এগিয়ে নিতে চাই এবং সেভাবে কাজ করছি। দেশের নবজাগরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

UGCসাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানসম্মত শিক্ষা দিক। শুধুমাত্র একটা সার্টিফিকেট দেয়া মানেই শিক্ষা নয়। আমরা তাদেরকে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি মানে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে চাই। আমরা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে সহযোগিতা করছি এবং ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি। কেউ সিদ্ধান্ত না মানলে আমরা আইনত ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে আমরা চাই দেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যেন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে না পড়ে। তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞা পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। একটা উন্নয়নের ধারায় নিয়ে যেতে চাইলে ঘাটতি থাকবেই। আমরা এটাও মানি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যেমন ঘাটতি রয়েছে আমাদেরও ঘাটতি রয়েছে। যেমন আমাদের লোকসংখ্যা কম। আমরা চাইলেও অনেক কাজ দ্রুততার সাথে করতে পারি না। আমার অনুরোধ থাকবে, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে আমাদের দেখিয়ে দেয়া পথ মেনে নেয় এবং সেইভাবে কাজ করে।


বিজ্ঞাপন


সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায়ই শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির বিষয় সামনে আসে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উপাচার্যদের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে নানা সমালোচনা হয়। পিএসসির আদলে শিক্ষক নিয়োগ হলে এটা কমে আসবে। সেইসাথে মানসম্মত শিক্ষক উঠে আসবে। মেধাবীরা দেশের বাইরে বেশি বেনিফিট পাচ্ছে। তাদের দেশে থেকে দেশকে সেবা দেওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে পিএসসির আদলে নিয়োগ দেওয়াটা জরুরি। এটা সময় সাপেক্ষ বিষয়। তবে একদিন হয়তো বাস্তবায়ন হবে।

UGCগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তিনি বলেন, প্রথম গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অনেক সমস্যা হয়েছে। দ্বিতীয়বার কিন্তু কমে এসেছে। ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি প্রতিষ্ঠা হলে এই সমস্যাগুলো দূর হবে। তৃতীয়বারের পরিকল্পনা সবাইকে নিয়ে আসতে। সমস্যা আসবে, তা সমাধান করতে হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি নিয়ে তিনি বলেন, ইউজিসি বিষয়টা নিয়ে ভাবছে। শিগগিরই হয়তো সুফল আসবে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যাদের পিএইচডি চালু করার যোগ্যতা আছে। আমরা র‍্যাংকিংয়েও পিছিয়ে আছি। আশা করি এটাতেও আমরা এগিয়ে যাব।

সবশেষে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সব সেক্টরের মতো শিক্ষা খাতও এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশটা অনেক ছোট, আবার ১৭ কোটি মানুষ। তাই শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যোগ্য মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর।

প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন ১৯৬৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য হিসেবে কর্মরত। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি রাশিয়ার মস্কো টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি এবং যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

পিএস/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর