শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কুয়াশায় চাদরে অন্য এক সৌন্দর্যে রাবি ক্যাম্পাস

ইরফান তামিম
প্রকাশিত: ০৩ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

কুয়াশায় চাদরে অন্য এক সৌন্দর্যে রাবি ক্যাম্পাস

‘সকাল বেলায় শিশির ভেজা ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে, হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায় শরীর উঠে শিরশিরিয়ে’ কবি সুফিয়া কামালের এই কবিতার লাইন দুটোতে যেন মিশে আছে শীতে এই অপরূপ বাংলার প্রকৃতি।

RU


বিজ্ঞাপন


ধূসর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে যে যার মতো ছুটছে গন্তব্যে। উঁচু উঁচু গগণচুম্বী গাছের ডালপালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে সূর্যকিরণ। আর এমন শীতে কাঁপুনির মধ্যেই সূর্যের বিকিরণ আরও বাড়িয়ে দেয় শীতের আমেজ। ঠিক এমন চিত্রের দেখা মিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে।

RU

সকালে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, তীব্র কুয়াশায় এক আবাসিক হল থেকে অন্য হল ও এক ভবন থেকে অন্য ভবন দেখা যাচ্ছে না। তবুও এই নিভু নিভু আলোয় শিক্ষার্থীদের পদচারণা ৭৫৩ একরের সবুজে ঘেরা এই ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বর, প্যারিস রোড, বুদ্ধিজীবী চত্বর, আমতলাসহ পুরো ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা দেখে মনে হতে পারে এ শহর যেন এক স্বর্গ।

RU


বিজ্ঞাপন


কুয়াশার আভাস ছাড়িয়ে ভোরের রক্তিম সূর্য যখন পুব আকাশে উঁকি দেয়, ঠিক তখনই সোনালি রোদের রঙচটা আলোয় শিশির জমা ঘাসগুলো চিকচিক করে ওঠে। শীতের সকালে খোলা মাঠের উপর শিশিরে সিক্ত ঘাসগুলোর নুয়ে পড়ার দৃশ্য, শিল্পীর রং-তুলি দিয়ে আঁকা ছবিকেও হার মানাবে। ভোরের এই মুগ্ধতা উপলব্ধি করতে উষ্ণ কম্বল ত্যাগ করে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে নেমে আসেন রাস্তায়।

বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ দেশ হলেও রাজশাহী যেন শীতের রাজধানী। হাড় কাঁপা শীতে সবার গায়ে উষ্ণ পোশাক জড়ানো, গাছে গাছে পাতা ঝরার উৎসব, ঘাসের ডগায় ডগায় শিশিরের আঁকিবুঁকিতে যেন শীতের চরম মুগ্ধতা অনুভূত হয়। এ ধরনের বৈশিষ্ট্য ছাড়া যেমন শীতকে কল্পনা করা যায় না, ঠিক তেমনি বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে গরম গরম চা, সুর-বেসুরো কণ্ঠে এলোমেলো লিরিকের গান ছাড়া ক্যাম্পাস জীবনে পূর্ণতা আসে না।

RU

হেমন্তের স্নিগ্ধতা পেরিয়ে শীতের এই মৌসুমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেতেছে শীতের আমেজে। শিক্ষার্থীরা দেখা মিলে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে কাঠ পুড়িয়ে আগুনকে ঘিরে বসে গানের আসর জমাতে। ঘন কুয়াশায় মাঝেও মধ্যরাতে প্যারিস রোডে বন্ধুরদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো। চলতে থাকে ভার্সিটির লোগো ও নাম সম্বলিত হুডি বানানোর ধুম, চলে ভ্রমণের নানা পরিকল্পনা। এমন শীতে ক্যাম্পাসের ছাউনিবেষ্টিত দোকানে বসে চায়ের সঙ্গে বিস্কুট, হাসি-ঠাট্টা,আলোচনা-সমালোচনার দিগন্তে ছুটে গিয়ে হঠাৎ ভিন্ন প্রসঙ্গে মোড় ঘুরা ইত্যাদি নানান চিত্র।

RU

শিক্ষার্থীরাও বেশ উচ্ছ্বাস আর আনন্দ নিয়েই উপভোগ করেন প্রকৃতির এই শীতল অনুভূতি। টুকিটাকিতে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী স্বজন রায় বলেন, ‘শীত যদিও সবার জন্য একটু কষ্টকর। তবুও ক্যাম্পাসে শীতের আমেজ ভালোই লাগছে। সকালের মৃদুমন্দ নির্মল বাতাস আর কুয়াশা জড়ানো হিমেল হাওয়ার স্পর্শে অতৃপ্ত হৃদয় মুহূর্তেই তৃপ্ত হয়ে যায়।'

RU

এদিকে সন্ধ্যা হলেই বাহারি পিঠার গন্ধে মৌ মৌ করে শেখ কামাল স্টেডিয়ামের সামনে। হাঁটলে মনে হবে ছোট-খাটো পিঠার উৎসব। আর শীতের এই পিঠার স্বাদ নিতে সারাক্ষণ দোকানগুলোতে যেন ভিড় লেগেই থাকে। কেউবা দাঁড়িয়ে থাকেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। পিঠা খাওয়া নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুঁটি শুরু হয়ে যায়। মাঝে মাঝে কে কয়টা পিঠা খাবে, তা নিয়েও হয়ে যায় প্রতিযোগিতা।

ক্যাম্পাসের ছোট্ট এই পিঠার দোকানগুলোতে বন্ধুরা মিলে যখন একসঙ্গে পিঠা খাওয়া হয়, তখন ক্ষণিকের জন্য মনে পড়ে যায় চুলার ধারে বসে মায়ের হাতের গরম গরম পিঠা খাওয়ার কথা। তাই হয়তো পরিবার-পরিজন থেকে শত শত মাইল দূরের ক্যাম্পাসই যেন হয়ে উঠেছে আরেকটা পরিবার।

RU

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিজা ইসলাম বলেন, ‘সন্ধ্যায় কুয়াশায় মোড়ানো এই শীতের সকালে গরম কাপড় জড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা আমার কাছে বেশ উপভোগ্য। ক্যাম্পাসে শীতের পরিবেশ বেশ উপভোগ করি। রাস্তার পাশের ফুল গাছ আর পুকুর ভরা লাল শাপলা আমাকে মুগ্ধ করে।’

ষড়ঋতুর এই বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশে শিক্ষার্থীরা এক শীতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরু করে, আবার কোনো এক শীতে পড়াশোনা শেষে ফিরে যায় পরবর্তী গন্তব্য খুঁজতে। সময়ের পরিক্রমায় প্রতি বছর শীত আসবে, পরিযায়ী পাখি আসবে, কুয়াশা আসবে, রাস্তার মোড়ে পিঠার দোকান বসবে কিন্তু ক্যাম্পাসে কাটানো শীতের মুহুর্ত একটা নির্দিষ্ট সময় পর আর ছোঁয়া যাবে না।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর