শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ‘অন্ধকারে’ অধিকাংশ শিক্ষক

পিয়াস সরকার
প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:১০ এএম

শেয়ার করুন:

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ‘অন্ধকারে’ অধিকাংশ শিক্ষক

বহুল আলোচিত নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হচ্ছে আগামী বছর। নতুন এই শিক্ষাক্রমের কোনো বই এখনও দেখেননি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শুধুমাত্র এক ঘণ্টার অনলাইন ট্রেনিং করেই শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠদান করতে হবে। কিন্তু সেই এক ঘণ্টার ‘নামমাত্র’ ট্রেনিংও অনেক শিক্ষক নিতে পারেননি সার্ভার জটিলতার কারণে। ফলে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে এখনো ‘অন্ধকারে’ আছেন অধিকাংশ শিক্ষক।

সিলেটের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এক শিক্ষক বলেন, এই অনলাইন প্রশিক্ষণ দিয়ে কোনো কাজেই আসবে না। অনেক শিক্ষক ভিডিও শুধুমাত্র প্লে করে সার্টিফিকেট ডাউনলোড করছেন। আবার অনেক শিক্ষক আছেন যারা অন্য শিক্ষকের কাছে আইডি, পাসওয়ার্ড দিয়ে সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে নিচ্ছেন। ভিডিও শেষে কোনো এসেসমেন্ট না থাকায় গুরুত্বটাও কম।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, অনেক শিক্ষকই এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অনেকেই বিষয়টি সম্পর্কে জানেনও না। ফেস-টু-ফেস প্রশিক্ষণ যতক্ষণ না হচ্ছে, আর শিক্ষকদের মূল্যায়ন যতদিন না হচ্ছে, এই নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কোনো আশার আলো দেখছি না।

নতুন শিক্ষাক্রমে আসছে বেশ কিছু পরিবর্তন। এরমধ্যে অন্যতম তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না থাকা। এসএসসি পর্যন্ত বিভাগ বিভাজন না থাকা, শিখনকালীন মূল্যায়ন বৃদ্ধি, একাদশ ও দ্বাদশে দুটি পাবলিক পরীক্ষা ইত্যাদি। এছাড়া সাপ্তাহিক ছুটি বেড়ে হচ্ছে দুদিন।

শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে ২০০৮ সালে শুরু হয়েছিল সৃজনশীল পদ্ধতি। তখনও শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে বিপাকে পড়তে হয়েছিল শিক্ষার্থীদের।

তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বলছে, শিক্ষকরা আরও ছয় ঘণ্টার প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, এই স্বল্প প্রশিক্ষণ কী শিক্ষকদের জন্য যথেষ্ট?


বিজ্ঞাপন


২০২৩ সালে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দিয়ে শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। ধাপে ধাপে এই শিক্ষাক্রমে প্রতিটি শ্রেণি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) তথ্যানুসারে, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর, কারিগরি ও মাদ্রাসা মিলে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক আছেন ৮০ লাখের মতো। সব শিক্ষককে দেয় হবে প্রশিক্ষণ। এনসিটিবি শিক্ষক ম্যানুয়েল তৈরি করছে। কিন্তু বছর শুরুর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও এই ম্যানুয়াল এখনো পাননি শিক্ষকরা।

রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার এক শিক্ষক সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) বলেন, আমি বা আমার স্কুলের কোনো শিক্ষক এখনো বই কিরকম হবে বা শিক্ষক ম্যানুয়াল কেমন তাও জানি না। অনলাইনে প্রশিক্ষণের জন্য শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) অনেক চেষ্টা করেও সার্ভারে এড হতে পারিনি। পরদিন এড হয়েছি, তা শেষ করতে প্রায় তিন ঘণ্টা লেগেছে। কিন্তু এতেও যে খুব একটা লাভ হয়েছে তা বলব না।

তিনি আরও বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আলোচনা অনেক দিন ধরেই চলছে। আমি নিজেও একজন অভিভাবক। শিক্ষাক্রমের যে ধারা চালু হতে যাচ্ছে তাতে আমি সন্তুষ্ট। কিন্তু আমি শিক্ষক হয়ে যদি বিষয়টা আগে থেকে না জানি তবে পড়ানো কঠিন হয়ে যাবে।

প্রশিক্ষণের বিষয়ে রাজশাহীর এক শিক্ষক বলেন, ইংরেজি বিষয়ে প্রশিক্ষণের সময় প্রবেশ করে দেখি অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষকরাও তাতে যুক্ত হয়ে আছে। অধিক শিক্ষক যুক্ত থাকায় ঠিকমতো আমরা প্রশিক্ষণ নিতে পারিনি। এমনকি বারবার বাফার করছিল। কথাও শোনা যাচ্ছিল না।

শিক্ষক প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা থেকে জানা যায়, এক ঘণ্টার ওরিয়েন্টেশন ক্লাস সব শিক্ষকদের জন্য বাধ্যতামূলক। এরপর এই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে প্রতিটি জেলা পর্যায়ে এক বিষয়ে তিনজন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এই শিক্ষকরা অন্য শিক্ষকদের উপজেলা পর্যায়ে গিয়ে ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলবেন। এই ট্রেনিং চলবে জানুয়ারি মাসজুড়ে।

এ প্রসঙ্গে মাউশির পরিচালক অধ্যাপক প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য বলেন, প্রত্যেক শিক্ষকের প্রশিক্ষণ নেয়া বাধ্যতামূলক। আমরা দুদিনব্যাপী ওরিয়েন্টেশন পরিচালনা করেছি। এটি ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এই ওরিয়েন্টেশন ও উপজেলা পর্যায়ে ৬ ঘণ্টার ট্রেনিং শিক্ষকদের জন্য যথেষ্ট কিনা- জানতে চাইলে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম তারিক আহসান বলেন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। শিক্ষকরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়িয়ে আসছেন। তাদের শুধু নতুন কার্যক্রমের ধারাটা বুঝিয়ে দিতে হবে। আবার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পর আমরা ফিডব্যাক নেব। এরপরও শিক্ষকরা না বুঝলে পুনরায় তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। বছরব্যাপী চার ধাপে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হবে। এছাড়াও প্রশিক্ষণের ভিডিও থাকবে, শিক্ষকরা পরবর্তীতেও নিজেদের মতো করে তা দেখে নিতে পারবেন।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথম পর্যায়ের ওরিয়েন্টেশন ফেস-টু-ফেস করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বই ছাপাতে দেরি হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এজন্যই অনলাইনে করা হয়।

পিএস/জেএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর